March 28, 2024, 4:19 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2020-09-14 01:43:07 BdST

রাজধানীর মালিবাগ বাজারে টিসিবির পন্য বিক্রয়ে অনিয়ম


সম্প্রতি করোনা ভাইরাস, বন্যা এবং পদ্মা নদীতে ফেরী চলাচল বিঘ্নিত হয়ে পন্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় স্থানীয় বাজারে বেশ কিছু নিত্যপন্যের দাম বেড়ে যায়।

এমতাবস্থায়  সাধারন জনগনকে স্বস্তি দিতে সরকার চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল এবং পিয়াজ ভর্তুকি দিয়ে টিসিবির ভ্রাম্যমান ট্রাকের মাধ্যমে ১৩ই সেপ্টেম্বর রবিবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে খোলাবাজারে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়।

টিসিবির ভ্রাম্যমান ট্রাকে পন্য বিক্রয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে প্রথম দিনেই কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত অনিয়ম ধরা পড়ে ফিন্যান্স টুডের প্রতিনিধিদের ক্যামেরায়।

চিনি এবং ডাল আগে থেকেই ২/৩ কেজি করে প্যাকেট করছে ডিলারের বিক্রয়কর্মীরা

রাজধানীর মালিবাগ বাজারে টিসিবির ভ্রাম্যমান ট্রাকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিলারের বিক্রয়কর্মীরা সাধারন জনগনকে তাদের চাহিদার বিপরীতে দুই বা তিন কেজি করে চিনি এবং ডাল একসাথে কিনতে বাধ্য করছে।

এছাড়াও নিকটস্থ মালিবাগ বাজারের কিছু ব্যবসায়ী উক্ত ডিলারের বিক্রয়কর্মীদের সাথে যোগসাজশ করে প্রকাশ্যেই টিসিবির নির্ধারিত মূল্যের পন্য স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় অধিকহারে ক্রয় করে উচ্চ মূল্যে নিজেদের দোকানে আগত ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালিবাগ বাজারের এক ব্যবসায়ী ফিন্যান্স টুডের প্রতিনিধিকে জানান, আমাদের বাজারের বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বিগত সময়ে টিসিবির পন্য গোপনে অধিক পরিমানে ভ্রাম্যমান ট্রাকের বেশ কয়েকজন অসাধু ডিলারদের কাছ থেকে ক্রয় করে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে ব্যাপকহারে মুনাফা করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন রহিম স্টোর, খোরশেদ স্টোর, রিয়াজ স্টোর, সামাদ স্টোর, সুমন স্টোর,  শাহীন স্টোর সহ আরো  অনেক ব্যবসায়ী। এবারও তারা গোপনে ভ্রাম্যমান ট্রাকের ডিলারদের উৎকোচ দিয়ে টিসিবির পন্য অবৈধভাবে মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার পায়তারা করছে।

সরেজমিনে টিসিবির ট্রাকে পন্য বিক্রয়ের কার্যক্রম দিনভর পর্যবেক্ষনকালে ফিন্যান্স টুডের সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে ২ কেজি ডাল কিনতে চাইলে একসাথে ২ কেজি চিনি এবং ২ কেজি ডাল কিনতে হবে বলে জানায় উক্ত ট্রাকে দায়িত্বরতরা।

অথচ কিছুক্ষন বাদেই স্থানীয় বাজারের বেশ কিছু মুদি দোকানের কর্মীরা নিজেদের চাহিদা মোতাবেক কেউ ১ কেজি পেয়াজ, কেউবা ২ কেজি ডাল, কেউ আবার ২ কেজি চিনি কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু এইসময় অনেক সাধারন মানুষ, দিনমজুর ও রিক্সাওয়ালারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ডাল বা চিনি কিনতে চাইলে তারা প্রথমে অস্বীকৃতি জানায়।

একপর্যায়ে সাংবাদিক ও একজন সরকারি কর্মকর্তার উপস্থিতি টের পেয়ে তারা সাধারণ মানুষকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পন্য বিক্রি করা শুরু করে। কিছু সময় পর আবার তারা আগের মতোই নিজেদের ইচ্ছামত পন্য বিক্রি করে।

মালিবাগ বাজারের স্থানীয় বাসিন্দা  নাজমুল হক, মোঃ আল ইসলাম (জসীম), রফিক, জনৈক রিক্সাওয়ালা আমীন, সিরাজ, মোক্তার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন সহ বেশ কয়েকজন পথচারী টিসিবির পন্য ক্রয় করা নিয়ে তাদের ক্ষোভের কথা জানান ফিন্যান্স টুডের প্রতিনিধির কাছে।

টিসিবির ট্রাক থেকে ১ কেজি ডাল কিনে নিয়ে যাচ্ছে মালিবাগ বাজারের এক ব্যবসায়ী 

নাজমুল হক ফিন্যান্স টুডের প্রতিনিধিকে বলেন, "আমি ১ কেজি করে চিনি এবং ডাল কিনতে চাইলে ট্রাকে দায়িত্বরতরা ২ কেজি করে ডাল ও চিনি কিনতে হবে বলে জানিয়ে দেয়। অথচ কিছুক্ষন বাদে আমার সামনেই বাজারের এক লোক ১ কেজি ডাল কিনে নিয়ে যায়। আমি প্রতিবাদ করলে তারা নানা অজুহাত দেখায়। এসময়ে আমার সাথে আরো অনেকে পন্য কিনতে চাইলে তারা বাধা দেয়। বেশ কিছু সময় পর বাধ্য হয়েই এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে ২ কেজি করে চিনি এবং ডাল কিনতে হলো।"

তিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেন, "সরকার তো আমাদের মত সাধারন মানুষদের জন্যই ভর্তুকি দিয়ে পন্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারনে সরকারের এই জনবান্ধব কর্মসূচি সফলতার মুখ দেখছে না।"

মালিবাগ বাজারে টিসিবির পন্য বিক্রয়ে ব্যবহৃত ট্রাক     

জনৈক রিক্সাওয়ালা আমীন দীর্ঘ সময় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও ১ কেজি চিনি কিনতে না পেরে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে ফিন্যান্স টুডের প্রতিনিধিকে বলেন, "সকালবেলা রিক্সা নিয়ে বের হওয়ার সময় আদরের মেয়েটা সেমাই খেতে চেয়েছিল। তাই ৫০০ গ্রাম সেমাই আর কিছু শাকসবজি কেনার পর চিনি কিনতে গিয়েছিলাম রামপুরা বাজারে। কিন্তু সেখানে ট্রাক না থাকায় এসেছিলাম মালিবাগ বাজারে। সামর্থ্য ছিলো ১ কেজি চিনি কেনার, কিন্তু পারলাম না গরীব বলে। আমরা তো আর কারো কাছে হাত পাততে পারি না। তাই এই ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের ব্যবসায়ীর শর্ত মোতাবেক ২ কেজি চিনি কিনতে পারলাম না। আল্লাহই এই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিচার করবে।"

এই অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে মালিবাগ বাজার বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইসমাইল ফিন্যান্স টুডের প্রতিনিধিকে বলেন, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতা এবং সময়োপযোগী নির্দেশনার আলোকে আজ থেকে খোলাবাজারে শুরু হওয়া ভ্রাম্যমান ট্রাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য পেয়াজ, চিনি, ডাল ও সয়াবিন তেল ভর্তুকি মূল্যে বিক্রয় কার্যক্রমে মালিবাগ বাজারে যে অনাকাঙ্ক্ষিত অনিয়ম হয়েছে তা সত্যিই দু:খজনক। বেশ কয়েকজন ব্যক্তি আমার কাছে অভিযোগ করার পর মালিবাগ বাজার বনিক সমিতির পক্ষ থেকে আমি উক্ত ডিলারের সংগে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাইনি। আগামীকাল আমি বনিক সমিতির সদস্যদের নিয়ে ঐ ভ্রাম্যমান ট্রাকের বিক্রয় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবো। একই সাথে বাজারের সকল মুদি ব্যবসায়ীদেরও আমরা অনুরোধ করবো তারা যেন ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের পন্য কিনে উচ্চমূল্যে বিক্রি না করে।"

টিসিবির পন্য বিক্রয়ে যে কোন অনিয়ম, দূর্নীতি রোধে বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোর তদারকি বৃদ্ধি করার আহবান জানান তিনি।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা