April 25, 2024, 9:30 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2022-08-02 05:18:43 BdST

জুলাইয়ে এলসি সাড়ে ৫ বিলিয়ন, এক মাসে খোলা কমেছে ৩১ শতাংশ


ডলার সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও কড়াকড়ি আরোপের সুফল মিলতে শুরু করেছে; অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিদেশ থেকে পণ্য আনতে নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের মাসের চেয়ে ৩১ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পণ্য আমদানির সবশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত কয়েক মাস থেকেই আমদানির পরিমাণ একটু একটু করে কমছে। এ ধারাবাহিকতা অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতেও বজায় ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘গত এপ্রিল থেকেই আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন গভর্নর যোগ দেওয়ার পর তা অব্যাহত রাখার সঙ্গে নতুন পদক্ষেপ হিসেবে ৩০ লাখ ডলারের এলসি খোলার তথ্য পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

‘‘এর ফলে জুলাই মাসে এলসি খোলার পরিমাণ কমে সাড়ে ৫ বিলিয়নে নেমেছে।“

গত ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে নতুন এলসি খোলা হয়েছিল ৭ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলারের। ব্যয় সাশ্রয় ও আমদানি নিরুৎসাহে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপে তা জুলাইতে অনেক কমেছে। শতকরা হারে নতুন এলসি খোলা কমেছে ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ।

এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাইতে নতুন এলসি খোলা হয়েছিল ৪ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার; ওই সময়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৮ শতাংশ।

আমদানির জন্য এলসি খোলার পরিমাণ কমায় তা সামনের মাসগুলোতে ডলার সংকটে কিছুটা স্বস্তি আনবে বলে মনে করছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা।

কোভিড মহামারীতে সংক্রমণ কমে আসতে থাকলে অর্থনীতি গতিশীল হতে শুরু করলে ওই সময় থেকে দেশে আমদানি বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে এক পর্যায়ে যা একক মাসে আট বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।

এরই ধারাবাহিকতায় গত জুনে এলসি খোলা যেমন বেড়েছিল, তেমনি আগে খোলা এলসির পণ্য দেশে আসায় আমদানি দায় পরিশোধ করতে হয়েছিল ৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত মে মাসে পুরো আমদানি বিল পরিশোধ করতে হয় ৭ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। ওই মাসে নতুন এলসি খোলা হয় ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের। এর আগের মাসগুলোতেও আমদানির পরিমাণ বেড়েছিল।

কেন্দ্রী ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এপ্রিল থেকে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের পর ওই মাস থেকেই এলসি খোলা কমে। ওই মাসে আগের মার্চের চেয়ে নতুন এলসি খোলার হার কমে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

মে মাসে তা এপ্রিলের চেয়ে কমে ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং জুনে এর আগের মাসের চেয়ে কমে ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

এরপরও আমদানিতে ব্যাপক উল্লম্ফনের কারণে গত ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে পণ্য আমদানিতে এলসির বিপরীতে মোট পরিশোধ করতে হয়েছে ৮৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।

এলসির বাইরে আমদানি হওয়া পণ্যের তথ্য যোগ করলে এর পরিমাণ সামান্য বাড়বে। ৩১ জুলাই পর্যন্ত জুন ও গত অর্থবছরের আমদানির পুরো তথ্য প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

কোভিড পরিস্থিতি উন্নতিতে লকডাউন উঠে গেলে ক্রমাগত বাড়তে থাকা আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে, চাপ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংকের রিজার্ভে।

এরমধ্যে গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেইন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে আমদানি পণ্যর খরচ আরও বেড়ে যেতে শুরু করে। এতে টান পড়ে ডলার সরবরাহে।

এর প্রভাবে অস্থির হয়ে উঠে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার। ডলারের বিপরীতে ক্রমাগত মান হারাতে থাকে টাকা। আমদানির তুলনায় রেমিটেন্স ও রপ্তানি সেভাবে না বাড়ায় সংকট দেখা দেয় ডলার সরবরাহে।

আমদানি ব্যয় বাড়ায় ও টাকার মান কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে ওঠে।

এমন প্রেক্ষাপটে গত এপ্রিল থেকে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ ডলার সাশ্রয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বেশ কিছু ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। আমদানি পণ্য দেশে আনার পুরো প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের মধ্যে আনা হয়।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমিয়ে আনতে বিদেশ সফর কমানোসহ ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে কৃচ্ছছতার পথে হাঁটে সরকার।

পাশাপাশি এর অংশ হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে বিলাসী পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমে ৫০ লাখ ডলার পরে ৩০ লাখ বা ততোধিক ডলারের পণ্যর এলসি খুলতে ২৪ ঘণ্টা পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানানোর বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয় ব্যাংকগুলোকে।

এতে পণ্য আমদানির আগেই জানা যাচ্ছে কী পরিমাণ ও কোন ধরনের পণ্য দেশে আসবে। এ নির্দেশনা জারির পর এ পর্যন্ত ২০ কোটি ডলারের পাঁচটি এলসি খোলার উপর নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়।

এছাড়াও আবশ্যকীয় বাদে সকল পণ্য আমদানিতে ৭৫ থেকে শতভাগ মার্জিন সংরক্ষণ ও নতুন ঋণ দেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় ব্যাংকগুলোর উপর।

বিদেশ সফর নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি সবশেষে আগামী এক বছর ব্যাংকগুলোর গাড়ি কেনার উপরও নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে গড়ে প্রতি মাসে নতুন করে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থবছর শেষে পুরো বছরে মোট খোলা হয়েছিল ৯২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে গত অর্থবছর শেষে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার; গড়ে প্রতি মাসে ৬ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়।

অথচ এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে গড়ে প্রতি মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা