April 18, 2024, 2:57 pm


ফরিদপুর প্রতিনিধি

Published:
2022-09-18 03:39:53 BdST

গোপালগঞ্জ মুকসুদপুরের সাবেক ইউপি সদস্যের অন্যের জমি দখল করে মাছ চাষের অভিযোগঅসীম সরকারের ক্ষমতার উৎস কোথায়?


 মাছে ভাতে বাঙালি- এ কথাটি এখন প্রবাদে রূপান্তরিত হতে চলছে। এক সময়ে গ্রামের জলাশয়, পুকুর, খাল-বিল ও নদীতে মাছে ভরপুর ছিল। এখন আর তা দেখা যায় না। সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশের ১৬কোটি জনগনের আমিষের চাহিদা পূরনের জন্য বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের ব্যাপকতা বাড়লেও খাল-বিল, নদী ও হাওর-বাওরে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় না। একদিকে খাল-বিল শুকিয়ে যাচ্ছে, অপরদিকে কৃষি জমিতে ব্যাপক হারে রাসায়নিক সার ব্যবহার ও কারেন্ট জালের মাধ্যমে মাছের পোনা নিধনের কারনে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। সাধারন জনগনের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে আমিষের ঘাটতি পূরনের অন্যতম উপাদান মাছ। বর্তমান সরকার দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক হারে কর্মসূচি হাতিয়ে নিয়েছে। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের খাদ্য ও আমিষের ঘাটতি পূরনের জন্য একদিকে কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি অপরদিকে মাছ চাষের উপর তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বাংলাদেশের যে সকল অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিল অঞ্চল এলাকা খ্যাত গোপালগঞ্জ জেলা। উক্ত এলাকার বিলে প্রচুর পরিমান দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। গোপালগঞ্জ জেলাটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজ জন্মভূমি। অথচ প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলায় প্রভাবশালীরা অন্যের জমি জবর দখল করে পেন কালচারের মাধ্যমে মাছ চাষে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এলাকার জনগন বঞ্চিত হচ্ছে মাছের চাহিদা পূরনে। এলাকার শত শত ভুক্তভোগী জনগন জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে মুকসুদপুরের ফুলকুমারী, বানিয়ারচর ও চমটা গ্রামের অধিবাসীদের মধ্যে। যে কোনো সময় বড় ধরনের অঘটনের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরের সাধারন জনগন এখন আর বিলে মাছ ধরতে পারেনা। একটি বিশেষ করে প্রভাবশালী এক সাবেক ইউপি সদস্য দীর্ঘদিন যাবত এলাকার পেন কালচারের মাধ্যমে অন্যের জমিতে জবর দখল করে ঘের দিয়ে মাছ চাষ করে প্রতি বছর কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন একটি অভিযোগ এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে যে, জলিরপাড় ও ফুলকুমারী গ্রামে প্রায় ১৫০ একর অধিক জমিতে এলাকার প্রভাবশালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অসীম  সরকার দীর্ঘদিন যাবত জবর দখল করে মাছ চাষ করে আসছে। এলাকার গরীব জেলেরা উক্ত বিলে অসীম সরকারের প্রভাবের কারনে মাছ ধরতে পারছেনা। উক্ত বিলে প্রতিবছর কয়েকশত জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। একই সাথে এলাকার সাধারন মানুষও নিজেরা মাছ ধরে পরিবারের আমিষের ঘাটতি পূরন করতো। অসীম সরকার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কেউ বিলে মাছ ধরার সাহস পায় না। এলাকার কয়েকশত সাধারন জনগন ইতোমধ্যে  গোলাপগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছে উক্ত আবেদনে এলাকার সর্বস্তর জনগনের গনসাক্ষর রয়েছে। যে কোন সময়ে এ বিষয় নিয়ে গ্রামে মারামারি গোলযোগ ও খুন খারাপিরও আশঙ্কা করছে একাধিক এলাকাবাসী। ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য অসীম সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগের সভাপতি কার্তিক চন্দ্র সরকার জেলা প্রশাসক বরাবরে এলাকাবাসীর আবেদনে নিজেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোড় সুপারিশ করেছে। শুধু তাই নয়, জলিরপাড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক বরাবরের আবেদনের মূল আবেদনকারী। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাধারন জনগনও অসীম সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে জিম্মি। তার এই অবৈধ বিল দখল করে মাছ চাষের পেছনে ক্ষমতার উৎস কোথায়? এ প্রশ্ন খোদ আওয়ামী লীগ নেতাদের। খোঁজ নিয়ে যতটুকু জানা গেছে যে,  উক্ত জমির মধ্যে অসীম সরকারের নিজস্ব এক বিঘা জমিও নাই। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, অসীম সরকার যে জমিতে মাছ চাষ করেন উক্ত জমির মালিকদের খাওয়ার জন্য তিনি কোনো নূন্যতম একটু মাছ দেন না, অথচ অবৈধভাবে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত জমি দখল করে মাছ চাষ করে আসছে। গনমাধ্যমের সাথে অসীম সরকার বলেন, উক্ত বিলের জমি পরিষ্কার করতে জমির মালিকদের অনেক টাকা লাগতো, আমি মাছ চাষ করে উক্ত জমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি। এছাড়াও তিনি বলেন, আমি স্থানীয় দুটো মন্দিরে ৫ হাজার করে টাকা দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমি সকলকে ম্যানেজ করেই মাছ চাষ করছি। ঐ বিলের মধ্যে ছোট ছোট অনেকগুলো পুকুর রয়েছে সেই পুকুরগুলো অসীম সরকার দখল করে মাছ চাষ করছে। পুকুরের মালিকেরাও তাদের নিজস্ব পুকুর থেকে মাছ ধরতে পারছেনা’’।

এ ব্যাপারে স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তার যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে যতটুকু জানা গেছে, অসীম সরকার মাছ চাষ করতে গেলে যে জমির ইজারা নিতে হয় তা তিনি জানেন না। অথচ মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করেই তিনি মাছ চাষ করে আসছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে স্থানীয় জনগনের গণস্বাক্ষরতা ও আবেদনের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। এ ব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জনগনের ভূমি জবর দখল করে উন্মুক্ত জলাশয়ে ঘের দিয়ে মাছ চাষ করার কোনো আইনগত কোনো অধিকার নেই। এ ব্যাপারে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করবেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা