April 19, 2024, 11:55 pm


বিশেষ অনুসন্ধান

Published:
2022-09-23 04:26:13 BdST

বীমা খাতে কালো বিড়াল- পর্ব-৫ (টাকা আদায়ে প্রয়োজনে কোম্পানীর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে)দুর্নীতির কারনে ডুবতে বসেছে মেজর (অবঃ) মান্নানের সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী


দুর্নীতি, অনিয়ম ও পরিবারতন্ত্রের কারনে ডুবতে বসেছে সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড। সাবেক মন্ত্রী, সেনা কর্মকর্তা, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও পথিতযশা রাজনীতিবিদ মেজর (অবঃ) মান্নানের কারনেই তার নিজের প্রতিষ্ঠিত সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড আজ দেউলিয়া হওয়ার পথে। গ্রাহকের বীমা দাবি পরিশোধ করতে পারছেনা কোম্পানীটি। গত ৩০শে জুন নোয়াখালীর মাইজদী শহরে  কোম্পানীর অফিসটি গ্রাহকরা দীর্ঘদিন বীমা দাবি ও মেয়াদ উত্তীর্ণ জমা টাকা না পেয়ে ঘেরাও করে রাখে। এমনকি, ২দিন পর্যন্ত সড়কও অবরোধ করে রেখেছিলো। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীটি বীমার বিধিবিধান ভঙ্গ করে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা গ্রাহকের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান করে। বীমা খাতে গ্রাহকের দাবি পূরনের অথবা গ্রাহকের বীমা পরিশোধে নগদ অর্থ প্রদানের কোনো বিধান নেই। সারাদেশের গ্রাহকেরা প্রতিদিন তাদের প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু করে শাখা অফিস পর্যন্ত পাওনা টাকার জন্য ভিড় করছে। বছরের পর বছর ঘুরেও গ্রাহকরা তাদের পাওনা টাকা পাচ্ছেনা। শুধু তাই নয়, বর্তমানে কোম্পানীটি তাদের কর্মকর্তা কর্মচারীরা পর্যন্ত নিয়মিত বেতন ও পরিশোধ করতে পারছে না। গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা কোম্পানীর চেয়ারম্যানের অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে সরিয়ে নিয়েছে। এ নিয়ে যে কোনো সময় দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীটি। কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) মান্নান। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরাই কোম্পানীর বোর্ড অব ডিরেক্টরস। অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও পরিবারতন্ত্রের কারনেই কোম্পানীটির আজ বেহাল দশা। মেজর (অবঃ) মান্নানের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি), বাংলা লায়নে রয়েছে কোম্পানীর কোটি কোটি টাকা। যে টাকা উদ্ধারের আর কোনো সম্ভাবনা নাই। এছাড়া সানফ্লাওয়ারের শেয়ার এবি ব্যাংকে মরগেজ রেখে মেজর (অবঃ) মান্নান শত কোটি টাকার ঋন নিয়েছে। ইতোমধ্যে ২০১৬ সালে সানফ্লাওয়ারের বিরুদ্ধে ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন উক্ত অভিযোগেরও কোনো সুরাহা হয়নি। এছাড়াও ২০১২-১৩-১৪ অর্থবছরে বার্ষিক প্রতিবেদনে কোম্পানীর বিরুদ্ধে ৪শত কোটি টাকার দুর্নীতিসহ মোট ২৬ ধরনের অনিয়ম খুজে পেয়েছিলো আইডিআরএ, যা বীমা আইন ২০১০ এর ২৯ ধারা ও প্রবিধানের লঙ্ঘন। দীর্ঘদিন পূর্বে অনিয়ম শনাক্ত হওয়ার পরেও আইডিআরএ যদি এর বিরুদ্ধে বীমা আইনের ধারা অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করতো তাহলে আজ গ্রাহকের আমানত হুমকির মুখে পরতো না। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সানফ্লাওয়ারের চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) মান্নানের সাথে বারবার তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

কোম্পানীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মৃধা দ্য ফিন্যান্স টু’ডে কে বলেন, আমরা ২০২৩ সালের মধ্যে গ্রাহকের পুরানো দাবি মিটিয়ে ফেলবো। গ্রাহকের দাবি মিটানোর জন্য তিনি আগামী বছরের মধ্যে ভালো ব্যবসা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা নতুন করে ব্যবসাকে ঢেলে সাজাচ্ছি। গ্রাহকের দাবি মিটানোর জন্য তিনি আরও এক বছর সময় চান। গ্রাহকের দাবি মিটানোর জন্য বর্তমানে যে পরিমান অর্থের প্রয়োজন তার উৎস সম্পর্কে তিনি তেমন কিছু সদুত্তর দিতে পারেনি। ভবিষ্যত ব্যবসা থেকে তিনি পুরানো গ্রাহকের দাবি মিটাবেন। কিন্তু বর্তমান চলমান গ্রাহকদের দাবি কীভাবে মিটানো হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোম্পানী থেকে যে পরিমান অর্থ বাহিরে বিনিয়োগ আছে তা আদায় করার জন্য কোম্পানী মামলা করবে। দ্য ফিন্যান্স টু’ডের প্রশ্ন ছিলো এ রকম...

সানফ্লাওয়ার চেয়ারম্যানের নিজস্ব কোম্পানী বিআইএফসি, বাংলালায়ন ‘অতএব আপনি কি আপনার কোম্পানীর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেই মামলা করবেন?’  তখন  ইউসুফ আলী মৃধা বলেন, প্রয়োজনে তাই করা হবে। কবে নাগাদ মামলা করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘’খুব শীগ্রই, আমরা টাকা আদায়ে মামলা করবো’’।

খোঁজ নিজে জানা গেছে, বিআইএফসি’র ৯৫শতাংশ ঋনেই কুঋন। আর এ ঋন বিতরন করা হয়েছে পর্ষদের সদস্যদের মধ্যেই। ঘুরেফিরে মেজর (অবঃ) মান্নান তার এক প্রতিষ্ঠানের টাকা দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অন্য প্রতিষ্ঠানে হাতিয়ে নিয়েছে। বীমা কোম্পানীটি প্রায় গ্রাহকের বকেয়া রয়েছে ৫০ কোটি টাকার অধিক। আর এ টাকা পাওয়ার জণ্য গ্রাহকেরা সারাদেশের শাখা অফিসগুলোতে ভিড় করছে। দীর্ঘ সময় ঘুরেও তারা নিজেদের তিন তিল করে সঞ্চিত টাকা ফেরত পাচ্ছেনা। নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাদপুর, পটুয়াখালী, বগুড়া, কক্সবাজার, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে। অথচ প্রতিষ্ঠানের সম্পদ চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত ও পরিবারের কাজে দেদারসে অপব্যবহার হচ্ছে। চেয়ারম্যান নিজে একটি প্রাডো ঢাকা মেট্রো-খ-১১-৮০৬৫ গাড়ি ও স্ত্রী, শ্যালক একাধিক গাড়ি ব্যবহার করছে। মূলত এটি একটি পরিবারতন্ত্রে রূপ দিয়েছে। বোর্ড সদস্য না হয়েও ছোট মেয়ে তানজিলা নিয়মিত বোর্ড ফি নিচ্ছেন ও অফিসিয়াল কার্যক্রমে দিকনির্দেশনা প্রদান করছে। এছাড়াও দৈনিক বাংলা মোড়ে  মেজর (অবঃ) মান্নানের তিনটি প্রতিষ্ঠান সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী, স্টার্ন ইন্স্যুরেন্স ও বিআইএফসি’র ১২ কোটি টাকা মূল্যের একটি জমি ক্রয় করা হয়েছে। উক্ত জমি এখনও কোম্পানীর নামে নামজারি করতে পারেনাই।  মূলত জমিটি নিয়ে মামলা চলছে। জমি ক্রয়ের পূর্ব থেকেই এ নিয়ে মামলা ছিলো।

সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীটি চলছে জোড়াতালি দিয়ে। কোম্পানীটি গ্রাহকের পাওনা পরিশোধের সক্ষমতা নিয়ে এখন প্রশ্নের মুখে। যেকোনো সময় দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে কোম্পানীটি। শুধুমাত্র পরিচালনা পর্ষদের স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, আত্মীকরন ও অদক্ষতার কারনেই ডুবতে বসেছে কোম্পানীটি।

(সানফ্লাওয়ার নিয়ে পরবর্তী পর্বে রয়েছে গ্রাহক হয়রানি ও দুর্নীতির সচিত্র প্রতিবেদন)

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা