March 28, 2024, 6:12 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2023-01-18 12:06:25 BdST

পদোন্নতির নতুন নীতিতে রূপালী ব্যাংকে উল্লাসকপাল পুড়লো রাষ্ট্রায়ত্ত্ব অন্যান্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের


সরকারি খাতের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) পদে পদোন্নতি ও পদায়নের এখতিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপর ন্যস্ত করায় তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মাঝে। এই অসন্তোষ চূড়ান্ত পরিনতিতে ব্যাংক সেক্টরে স্থবিরতা নেমে আসবে বলে আশংকা বিশ্লেষকদের।

আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই জিএম পদে পদোন্নতি দিয়ে আসছিল। সে ক্ষেত্রে শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যাংকেই পদায়নের সুযোগ ছিল।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত সপ্তাহে সরকারি খাতের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও জিএম পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন নীতিমালা জারি করে এই বিধান যুক্ত করেছে। নতুন এ নীতিমালা নিয়ে রূপালী ব্যাংক ছাড়া রাষ্ট্রমালিকানাধীন অন্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

সূত্র মতে, ২০০৫-২০০৬ সালের দিকে রূপালী ব্যাংক বিক্রির আলোচনা হয়েছিল। এ নিয়ে ওই সময়কার সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্যোগও নেওয়া হয়। তাতে সে সময় অনেকে ব্যাংকটির চাকরি ছেড়ে দেয়। তাতে শূন্য পদে দ্রুত পদোন্নতি পান ব্যাংকটির অনেক কর্মকর্তা।

এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট কমিটির (বিআরসি) মাধ্যমে ১৯৮৮, ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের কেউ কেউ পদোন্নতি পেয়ে এমডি হয়ে গেছেন। আর অন্য ব্যাংকে একই ব্যাচে নিয়োগ পাওয়া অনেকে এখনো উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) পদে রয়েছেন।

এখন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জিএম পদোন্নতির সিদ্ধান্তে রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারাই বেশি লাভবান হবেন। কারণ, তাঁরা রাষ্ট্রমালিকানাধীন অন্য ব্যাংকের শূন্য পদে পদায়নের সুযোগ পাবেন।

বিআরসির অধীনে নিয়োগের সময় কর্মকর্তারা কর্মস্থল হিসেবে পছন্দের তালিকায় একেবারে শেষে রাখতেন রূপালী ব্যাংককে। ওই সময় পছন্দের তালিকায় শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বিআরসির অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংকে ১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়া কর্মকর্তাদের কেউ কেউ নির্বাহী পরিচালক হিসেবে অবসরে গেছেন। আর দুজন ডেপুটি গভর্নর হয়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৮ সালে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও নিয়োগ নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়েছিল, এমডি, ডিএমডি ও জিএম পদে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ওপর ন্যস্ত থাকবে। এখন এসব কর্মকর্তা নিয়োগের দায়িত্ব পুরোপুরি মন্ত্রণালয় নিয়ে গেছে। অথচ সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হওয়ার পর নিজেরাই জিএম পদে পদোন্নতি দিয়ে আসছিল।

অর্থ মন্ত্রণালয় এর আগে ২০১৯ সালেও একবার নীতিমালা করে সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জিএমদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়নের দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু পরে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে। এখন নতুন করে একই ধরনের উদ্যোগে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেশির ভাগ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মন্ত্রণালয়ের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, জিএম পদে পদোন্নতি পেতে ডিজিএম হিসেবে কমপক্ষে তিন বছর এবং ৯ম গ্রেড হতে ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করা হবে। এ শর্তের কারণে জনতা, সোনালী, অগ্রণী ব্যাংকের ৯ম গ্রেড থেকে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যাংকাররাও পদোন্নতির তালিকায় আসতে পারছেন না।কারণ, ডিজিএম হিসেবে তাঁদের তিন বছর পূর্ণ হয়নি। অথচ রূপালী ব্যাংকে একই গ্রেডের অনেকেই জিএম পদের পদোন্নতির জন্য যোগ্য হবেন।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী মহাব্যবস্থাপক পদে পদন্নোতি গ্লোবাল সিস্টেমে দেয়া হলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মাঝে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হবে। বাড়বে অসন্তোষ।যার চূড়ান্ত পরিনতিতে ব্যাংকিং খাতে নেমে আসবে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা। স্থবিরতাসহ পড়বে অন্ততঃ ৭ ধরনের বিরূপ প্রভাব।

সিনিয়রিটি লংঘিত হবে

১৯৮৮, ১৯৮৯, ১৯৯৩, ১৯৯৮ (বিআরসি ও ব্যাংকের নিজস্ব রিক্রুটমেন্ট) সালের দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরই জিএম পদে পদন্নোতি হবে। নতুনভাবে জিএম'র পদ শূন্য হবে না। সার্বিকভাবে ব্যাংকসমূহের পদন্নোতি স্থবির হয়ে পড়বে। এ থেকে সৃষ্ট হতাশা ও কর্মবিমুখতা এই সেক্টরকে দুর্বল করে দেবে। অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।

প্রতিটি বৃহৎ তফসিলি রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাংকের জিএম পদ পর্যন্ত নিজস্ব কর্মীবাহিনী দ্বারা পরিচালিত হবে এটি একটি সাধারণ প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলে শুধু অফিসার/নির্বাহীগণই নন, প্রতিটি ব্যাংক তার নিজস্বতা হারাবে।

ব্যাংকারদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের ১৮ই অক্টোবর/২০১৮ ইং এর বি আরপিডি সার্কুলার-১৪ মোতাবেক মহাব্যবস্থাপক পদটি ব্যাংকের নিজস্ব পদ। শুধুমাত্র মহাব্যবস্থাপক পদটি ব্যাংকের পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে তাতে। ফলে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত বোর্ড এই পদে পদন্নোতি দিয়ে এসেছে। 

প্রজ্ঞাপনের নম্বর বিভাজন পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ২০১৯ সালের প্রজ্ঞাপনে শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যাংকে চাকরির কাল, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, নেতৃত্বের গুনাবলী, বহুমুখী কর্মঅভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত, প্রণোদনা, ইনোভেশন ইত্যাদির ওপর যেভাবে নম্বর বন্টন করা হয়েছিল বর্তমান প্রজ্ঞাপনে তা ভিন্নভাবে করা হয়েছে।

একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে পদন্নোতি প্রদানের উদ্দেশ্যেই এমন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বলে মনে করেন ব্যাংকারগণ। তাই ব্যাংকিং প্রশাসনে ভারসাম্য বজায় রাখতে মন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নতুন বিধিমালা বাতিল এবং পূর্বের বিধান বহালের দাবি জানান তারা।       

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা