সামিউর রহমান লিপু
Published:2025-11-21 11:02:35 BdST
আতঙ্কে রাস্তায় মানুষ৫.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে কাঁপল ঢাকা, নিহত ৪
ছুটির দিনের সকালে শক্ত ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠল ঘরবাড়ি, আতঙ্ক ছড়াল ঢাকাসহ সারা দেশে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সময় স্থায়ী হওয়া এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত শিশু সহ ৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
অ্যান্ড্রয়েড আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিসেট্ম বলছে, সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৭। ভূমিকম্পটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল।
এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিলো রাজধানী ঢাকার কাছাকাছি নরসিংদীর ঘোড়াশাল। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়।
আরও পড়ুন: বংশালে ভবনের রেলিং ভেঙে পড়ে তিন পথচারীর মৃত্যু
সকালের এই ভূমিকম্পের সময় ঢাকার বংশালে একটি ভবনের রেলিং ভেঙে পড়ে তিন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে।
বংশাল থানার ওসির রফিকুল ইসলাম বলেন, “ভূমিকম্পের মধ্যে কেপি ঘোষ স্ট্রিটের ওই পাঁচ তলা ভবন থেকে রেলিং ভেঙে পড়ে। সেখানে ঘটনাস্থলেই দুই পথচারীর মৃত্যু হয়। মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরেকজন।"
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে দেয়াল ধসে শিশুর মৃত্যু
এছাড়া, ভূমিকম্পের সময় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার একটি ভবনের দেয়াল ধসে দশ মাস বয়সী এক শিশু মারা গেছে।
রূপগঞ্জ থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকালে উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকায় এই ঘটনায় শিশুটির মাসহ আরও দুজন আহত হয়েছেন।
নিহত ফাতেমা গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ ৫ নম্বর ক্যানেল এলাকার আব্দুল হকের কন্যা। তার বাবা ঢাকার শ্যামবাজারে ব্যবসা করেন।
আহতরা হলেন- ফাতেমার মা কুলসুম বেগম এবং তাদের প্রতিবেশী প্রবাসী মাসুদের স্ত্রী জেসমিন।
আজকের এই ভূমিকম্পকে এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে উল্লেখ করেছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার। তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান সিসমোলোজিক্যাল সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬।
যে অঞ্চলে ভূমিকম্পটি হয়েছে, সেটি ইন্দো-বার্মা টেকনিক প্লেটের অংশভুক্ত বলে জানান অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার। তিনি বলেন, ভূমিকম্পটিতে যে তীব্র, যে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে, তা তাঁর অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
মাগুরা, চাঁদপুর, নীলফামারী, সীতাকুণ্ড, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালী, বগুড়া, বরিশাল, মৌলভীবাজার থেকে এই ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পের সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই আতঙ্কে ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর মাতুয়াইলে একটি ভবন হেলে পড়েছে। আরমানিটোলা ও খিলগায়ে ভবন ধসের ঘটনা শোনা গিয়েছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হেলে পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোন হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, কম্পন থামার পর ঢাকার বাড্ডা, ধানমন্ডিসহ কয়েকটি এলাকায় ভবনে ফাঁটল ধরার এবং পলেস্তরা খসে পড়ার খবর এসেছে।
আরমানিটোলায় একটি ছয়তলা ভবন ধসে পড়ার খবর পেয়ে সেখানে গেছে ফায়ার সার্ভিস, তবে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত তথ্য মেলেনি।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, "বিভিন্ন জায়গায় খবর পেয়ে আমাদের টিম গেছে। তবে বড় ধরনের কোনো খবর এখন পর্যন্ত আসেনি।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, "ভূমিকম্প শুরু হওয়ার পর ১০৫ নম্বর কক্ষ পুরো তছনছ হয়ে যায়। আমরা এসে দেখি, সব নিচে পড়ে আছে"
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ আশপাশের এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.
