December 25, 2025, 3:47 pm


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-12-25 14:06:19 BdST

বিমানবন্দরে আবেগের বিস্ফোরণ।। খালি পায়ে হাঁটলেন তারেক রহমানদেশে ফিরেই হাতে এক মুঠো মাটি


খালি পায়ে মাতৃভূমির মাটি ছুঁয়ে এক আবেগঘন দৃশ্যের জন্ম দিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন, অপেক্ষা ও নানান উত্থান-পতনের পর অবশেষে তিনি ফিরলেন জন্মভূমিতে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর থেকেই তার চোখেমুখে ফুটে ওঠে গভীর আবেগ আর না-বলা অনুভূতি। বিমানবন্দর ত্যাগের মুহূর্তে তিনি খুলে ফেলেন জুতা, খালি পায়ে স্পর্শ করেন দেশের মাটি, এরপর হাতে তুলে নেন এক মুঠো মাটি। যেন ফেলে আসা স্বদেশকে হৃদয়ে ধারণের প্রতিচ্ছবি।

আজ বৃহস্পতিবার ২৫ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার পর বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে তিনি প্রথমে জুতা খুলে রাখেন পাশে। তারপর নিচু হয়ে হাত দিয়ে এক মুঠো মাটি তুলে নেন। সেই মুহূর্তে তার চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে আবেগের ঢেউ। অনেকেই বলেন, এটি ছিল তার দেশের প্রতি ভালোবাসার এক প্রতীকী প্রকাশ।

বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর প্রথমেই তিনি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।উপস্থিত আরো কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। এরপর তিনি কুশল বিনিময় করেন তার শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর সঙ্গে। এসময় মেয়ের জামাইকে গলায় গোলাপ ফুলের মালা পরিয়ে স্বাগত জানান তিনি। দৃশ্যটি ছিল আবেগমাখা, দীর্ঘদিনের প্রবাস জীবন শেষে পরিবারের কাছেই যেন ফিরে পেলেন আপন মানুষ।

বিমানবন্দর ত্যাগ করার পর লাল ও সবুজ রঙের একটি বিশেষ বুলেট প্রুফ বাসে ওঠেন তারেক রহমান।এই বাসেই তিনি ৩০০ ফিট রোড নামে পরিচিত ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে অতিক্রম করে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন বলে জানানো হয়। দীর্ঘ ভ্রমণ ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে বিমানবন্দর এলাকায় ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ছাড়াও অসংখ্য সমর্থক জড়ো হন তার একনজর দেখার জন্য। অনেকে হাতে হাতে জাতীয় পতাকা, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন রাস্তার দুই পাশে। তার বাস বিমানবন্দর এলাকা ছাড়ার সময় সমর্থকরা হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।কেউ কেউ আবেগে স্লোগানও দেন।

দলীয় নেতাদের দাবি, এই মুহূর্তটি ছিল শুধু রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন নয়, বরং একটি আবেগের, সংগ্রামের এবং দীর্ঘ অপেক্ষার ফসল। তাদের মতে,১৭ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে দেশে ফিরে নতুন করে আশার আলো দেখেছেন তারা।

জুতা খুলে খালি পায়ে দেশের মাটি ছোঁয়া এবং পরে হাতে এক মুঠো মাটি তুলে নেওয়ার দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, এটি ছিল জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসার এক নিঃশব্দ ঘোষণা। আবার কেউ কেউ এটিকে দেখছেন দীর্ঘ নির্বাসন জীবনের মানসিক চাপ এবং পারিবারিক বিচ্ছেদের কষ্ট থেকে মুক্তির আবেগঘন প্রকাশ হিসেবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে। তবে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটি দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী দিনগুলো।

দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্যে আসা তারেক রহমানের জন্য ছিল এক বিশেষ মুহূর্ত। শাশুড়ির দেওয়া ফুলের মালা শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং ছিল আত্মিক টান আর সম্পর্কের উষ্ণতার বহিঃপ্রকাশ। পাশে ছিলেন পরিবারের ঘনিষ্ঠজন ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা, যারা এই প্রত্যাবর্তনকে দেখছেন নতুন এক যাত্রার শুরু হিসেবে।

বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন,তারেক রহমানের দেশে ফেরা দলের জন্য নতুন অনুপ্রেরণা যোগাবে। তাদের দাবি, এই প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে তারা নতুন উদ্যমে রাজনীতিতে মাঠে নামতে পারবেন। এদিকে সাধারণ সমর্থকরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করছেন।

১৭ বছরের দীর্ঘ নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফিরে যে দৃশ্যের জন্ম দিলেন তারেক রহমান, তা অনেকের কাছে ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। খালি পায়ে মাতৃভূমির মাটি ছোঁয়ার দৃশ্যটি হয়তো কেবল একটি প্রতীকী কাজ, কিন্তু এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে আবেগ, ভালোবাসা, সংগ্রাম এবং দীর্ঘ অপেক্ষার ব্যথা। এখন দেশবাসীর দৃষ্টি থাকবে তার আগামীর পথচলার দিকে, যেখানে ব্যক্তিগত অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ।

৬৩১৪ দিন পর মাতৃভূমিতে তারেক রহমানকে সুস্বাগতম

সুপ্রিয় তারেক রহমান, আপনি শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য উত্তরসূরী। তাদের অনুসৃত আদর্শ, ঐক্য-সমন্বয়-সহনশীলতার রাজনীতি এবং সততা ও দেশপ্রেমকে মূলমন্ত্র করে আধিপত্যবাদবিরোধী দৃঢ় মনোবল নিয়ে অগ্রসর হলে সফল হবেন নিশ্চয়ই।

তেলবাজ, মতলববাজ, চাটুকার, ধান্ধাবাজ, বাম-রামপন্থী গুটিবাজ থেকে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। আর জুলাইয়ের শহীদ ও স্বজনহারা, অঙ্গ হারানো হাজারও বিপ্লবীর অপরিসীম ত্যাগকে অনুগ্রহ করে ভুলবেন না। তাদের অকাতর জীবন, অপরিমেয় রক্ত আমাদের সবার জন্যে অপরিশোধ্য ঋণ। তারাই আজ আপনার ফেরার পথকে মসৃণ করেছে। শুভকামনা রইল। আপনি নিজভূমে নিরাপদ থাকুন সবসময়।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.