April 20, 2024, 3:18 pm


সামি

Published:
2020-02-11 02:44:34 BdST

চসিক নির্বাচন: ৫ কারণে এগিয়ে নাছির, পিছিয়ে ১০ কারণে


এফটি বাংলা

আসছে ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। চসিক নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে, হাজারো আলাপ আর জল্পনা-কল্পনার ডালপালা ছড়াচ্ছে। এখন সেখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আবার মনোনয়ন পাচ্ছেন নাকি তার বদলে নতুন কোন চমক আসছে।

গত নির্বাচনে হেভিওয়েট এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থন আদায় করে নেওয়া আ জ ম নাছির এবারও আলোচনায় এগিয়ে আছেন। তবে অনেকে আবার মনে করেন বেশকিছু কারণে পিছিয়েও যেতে পারেন নাছির। সেক্ষেত্রে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে তাপসের মত দৃশ্যপটে হাজির হতে পারেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল। এছাড়া আলোচনায় আছে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, কোষাধ্যক্ষ আব্দুচ ছালাম, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুর রহমানের নামও।

তবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নজর রাখা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন মনোনয়ন দৌড়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও বেশকিছু বিষয়ে মনোনয়নের দৌড়ে পিছিয়েও যেতে পারেন নাছির।

যে ৫ কারণে এগিয়ে থাকবেন নাছির

মোটামুটি ৫টি কারণে আগামী চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে আ জ ম নাছিরকে এগিয়ে রাখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেগুলো এরকম-

কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী নেই

গতবার এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো হেভিওয়েট নেতাকে পিছনে ফেলে মনোনয়ন পাওয়া নাছিরকে এবার মনোনয়ন দৌড়ে সেরকম কোনো হেভিওয়েট প্রার্থীকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে না। আ জ ম নাছিরের এগিয়ে থাকার বড় কারণ এটিই।

ওয়ার্ডে প্রভাব

নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মী-সমর্থক রয়েছে নাছিরের, নওফেল ছাড়া তুলনামূলকভাবে সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীদের সেটি নেই।

নিজস্ব একটি বলয়

মূল সংগঠন ও অঙ্গ সংগঠনগুলোতে তার নিজস্ব বলয় রয়েছে, যা বাকি প্রতিদ্বন্দ্বীদের নেই।

উপরমহলে যোগাযোগ সুবিধা রয়েছে

বর্তমান মেয়র হিসেবে প্রশাসন ও সরকারের সবপর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ থাকার সুবিধা তাকে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।

নওফেল নিশ্চুপ

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সরাসরি আগ্রহ না দেখানোয় অনেকটা নির্ভার থাকতে পারছেন তিনি।

নাছির পিছিয়ে পড়তে পারেন যে কারণে

তবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও মনোনয়ন দৌড়ে নাছিরের পিছিয়ে পড়ারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মোটামুটি এরকম ১০টি কারণের কথা বলছেন আওয়ামী লীগের দল ও সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র। তাদের ধারণা-

এক ব্যক্তি এক পদ

একই ব্যক্তিকে দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে না রাখার বিষয়ে আওয়ামী লীগের মানসিকতা আ জ ম নাছিরের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় একটি বাধা। সেক্ষেত্রে সংগঠন শক্তিশালী করার জন্য নাছিরকে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে এনে মেয়রপদে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নওফেলের প্রতি আগ্রহ

নওফেলকে নগরের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের আগ্রহের বিষয়ে গুঞ্জন এই সম্ভাবনার পালে বাড়তি হাওয়া দিচ্ছে।

উত্তর ঢাকার হাওয়া

উত্তর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মত চট্টগ্রামেও ব্যবসায়ীদের কাউকে আনার সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রামেও মেয়র পদে প্রার্থী হতে ব্যবসায়ী নেতাদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে এর মধ্যে। নগরের সাংসদদের কেউ কেউ এমন ব্যবসায়ীদের সমর্থনে মাঠেও নেমেছেন।

প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা

জলাবদ্ধতা নিরসনকে প্রধান দায়িত্ব বলে গত নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও সেই কাজে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি নাছির। বরং জলাবদ্ধতার বিষয়ে কাজ করার নিয়ন্ত্রণ খুইয়েছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে। চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে বাদ দিয়ে সিডিএকে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। নিজের নির্বাচনী প্রধান অঙ্গীকারের বিষয়ে কাজ করার ক্ষমতা হারানোকে মেয়রের একটি বড় ব্যর্থতা বলেই মনে করছেন চট্টগ্রামের ভোটাররা।

দলে দূরত্ব ও স্নায়ুদ্বন্দ্ব

নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব ও স্নায়ুদ্বন্দ্ব এবং সিনিয়র নেতাদের মূল্যায়ন না করার অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। দীর্ঘদিন নগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়া এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে আ জ ম নাছিরের বিরোধ বেশ আলোচিত ছিল চট্টগ্রামের রাজনীতিতে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ সময় মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের সঙ্গে স্নায়ু-দ্বন্দ্ব তৈরি হয় মেয়র নাছিরের। সর্বশেষ একটি অনুষ্ঠানে মহিউদ্দিন-পত্নী হাসিনা মহিউদ্দিনকে মঞ্চ থেকে অশোভনভাবে নামিয়ে দেওয়ার বিতর্ক সেই স্নায়ুযুদ্ধকে অনেকটা প্রকাশ্য রূপ দিয়েছে।

সৌন্দর্যবর্ধনের বাণিজ্য

‘সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের’ নামে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাত দখল করে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ ছিল ব্যাপকভাবে। নগরজুড়ে এ নিয়ে নাগরিকদের সীমাহীন বিরক্তি ও অসন্তোষ।

বিশৃঙ্খল সিটি কর্পোরেশন

গত ৫ বছরে সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ এবং দুদকের নজরদারি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতিতে অনিয়মের অভিযোগও আলোচনায় আছে বেশ শক্তভাবে। মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও বিবেচনায় নিতে পারেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এমন আশংকাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকরা।

দায়িত্বের ভারে মূল দায়িত্বে অবহেলা

মেয়র ও দলের শীর্ষ পদে থেকেও অন্তত অর্ধশতাধিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে এবং চট্টগ্রাম বন্দরসহ ব্যক্তিগত কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জড়িত থাকায় সিটি করপোরেশনের কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে মনে করেন অনেকেই। এই দীর্ঘ সময়ে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির সভাপতি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সহ-সভাপতিসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের দায়িত্বেও ছিলেন মেয়র নাছির। এক সাথে এতসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সিটি কর্পোরেশন মেয়রের মূল দায়িত্বে বলার মত সফলতা দেখাতে পারেননি তিনি বলে মনে করছেন ভোটাররা।

মেয়াদজুড়ে অনাস্থা

মেয়াদের পুরো ৫ বছরেই ‘অতিরিক্ত সচিব’ পদমর্যাদায় মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন চট্টগ্রামের সিটি মেয়র নাছির উদ্দিন। চট্টগ্রামের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ সিটির মেয়রদেরকেও প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হলেও আ জ ম নাছিরের মুকুট ছিল শূন্য। ঢাকার পরেই গুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অবস্থান হলেও মেয়র আ জ ম নাছিরউদ্দিনকে ধারাবাহিকভাবে পদমর্যাদার বাইরে রেখে দেওয়ার বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি তার ওপর নেই। এ কারণে গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রামভিত্তিক উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর প্রায় সবই সিটি কর্পোরেশনকে না দিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টিকে বড় করে দেখছেন তারা।

সড়কের দুরাবস্থা

দায়িত্ব পালনকালে চট্টগ্রাম নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নির্মাণকাজে দীর্ঘসূত্রতা ও এসব কাজ শেষ করতে না পারার ব্যর্থতাও ডোবাতে পারে মেয়র নাছিরকে। চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান দুটি সড়ক পোর্ট কানেকটিং রোড ও আগ্রাবাদ এক্সেস রোড। ২০১৭ সালের শেষের দিকে এই দুটি সড়কের কাজ শুরু করে চসিক। ২০১৯ সালের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এই দুই সড়কের বেশিরভাগ কাজই অসম্পন্ন। নির্বাচনের আগে এই দুটি সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

একই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে আরাকান সড়কের বহদ্দারহাট থেকে মোহরা অংশেও। প্রায় সাড়ে তিন বছর টানা ভোগান্তির পর গত বছরের জুলাই থেকে এই সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করে চসিক। তবে সেই সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়নি এখনো। এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজেই।

২০১৭ সালের ১২ মার্চ চট্টগ্রাম সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শুধু চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সড়কের অবস্থা দেখে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ নগরীর এ দুরাবস্থা আমি দেখতে চাই না। কার গাফিলতিতে এ দুরবস্থা তা জানতে চাই। আপনারা ডিপিপি প্রণয়ন করুন। একনেকে পাঠান, একনেকে তো আমি সভাপতিত্ব করি, আমি অনুমোদন দেব। কিন্তু কাজ হবে না তা সহ্য করব না।’ এই বিষয়টিও শেষ পর্যন্ত মেয়র নাছিরকে অস্বস্তিতে রাখবে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষকরা।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা