May 2, 2024, 11:23 am


বিশেষ প্রতিবেদন

Published:
2022-10-31 04:30:32 BdST

আন্তর্জাতিকমানের টেকসই সড়ক ও অবকাঠামো নির্মান করছে সওজ অধিদপ্তর


 টেকসই আধুনিক নিরাপদ ও গতিশীল সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করছে সওজ। উন্নয়ন ও গণমুখী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। অর্থনীতির উন্নয়নের গতিশীলতা ও অগ্রযাত্রার এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অবকাঠামো প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকে।

এ লক্ষ্যেই দেশের পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক গুলো ৪ লেনে উন্নীত করাত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭১৭.৭৫ কিলোমিটার মহাসড়কে ৪ বা তদূর্ধ্ব  লেনে উন্নীত করনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, জয়দেবপু-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, নবীনগর ডিইপিজেড- চন্দ্রা মহাসড়ক। বর্তমানে ৬৭৩.৪৬ কিলোমিটার মহাসড়কে ৪লেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করনের কাজ চলমান প্রকল্প রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হলো- ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, আশুগঞ্জ-সরাইল-আখাউড়া মহাসড়ক, সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক এর বাহিরেও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ পদ্ধতির মাধ্যমে ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মহাসড়ক নির্মানের কাজ।

ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আমদানী রপ্তানি বাণিজ্য প্রসারে মহেষখালী মাতারবাড়ী বন্দর এবং পায়রা বন্দর নির্মানের পাশাপাশি বন্দর সমূহ সংযোগ সড়ক নির্মানের প্রকল্প। উল্লেখিত, সড়কে নিরাপত্তা জোরদারে উন্নতমানের অবকাঠামো যুক্ত হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা ও উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে।

আন্তর্জাতিক মানের সড়ক ও মহাসড়ক এবং ব্রীজ কালভার্ট নির্মাণ ও সক্ষমতা পরিচয় দিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। গ্রামেগঞ্জে, খাল-বিল, নদী-নালার পাশ দিয়ে সড়ক-মহাসড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ কাজ দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশকে এখন ফেরীবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার নেটওয়ার্ক বললে ভুল হবে না। চলতি মাসের শেষের দিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একযোগে প্রায় শতাধিক সেতু উদ্বোধনের কথা রয়েছে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রকল্প হলো দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। সরকারের মেয়াদ পূর্তির ধারাবাহিকতায় উন্নয়নের অন্যতম রোল মডেল দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা।

শহর থেকে গ্রাম, এক জেলা থেকে আরেক জেলা, এক দেশ থেকে আরেক দেশ, সাথে সড়ক-মহাসড়ক করে যুগান্তকারী বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

সময়ের পথ-পরিক্রমায় সওজ অধিদপ্তর এখন নিজেরাই বিশ্বমানের সড়ক, মহাসড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট করার মত প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনের ফলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দেশের বাহিরে ও কর্ম দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে পারবে বলে আশাবাদী।

আধুনিক বিশ্বের সড়ক নির্মাণের ছোঁয়া এখন দেশের ৪ লেন থেকে ৬ লেন মহাসড়কগুলোতে। যত্রতত্র সংযোগ, ক্রসিং নেই, মিসিং লিঙ্ক রোড কমিয়ে আনা হচ্ছে সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে।

প্রমত্তা নদীর উপরর পদ্মা সেতুর নির্মানের ফলে স্থল পথে বাংলাদেশ এখন বহিঃবিশ্বের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। এ বিশাল কর্মযজ্ঞের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সওজ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীগন দ্বি-পাক্ষিক প্রযুক্তিগত ট্রান্সফারে আরো অধিকতর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করেছে।

টেকনিক্যাল উইংসগুলো অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।

বাংলাদেশের  সাথে বহিঃর্বিশ্বের সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির ফলে অনেক ভারী যানবাহন চলাচল করবে। টেকসই সড়ক ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ ব্যতীত আন্তঃদেশীয় ও পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে মানসম্মত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ সম্ভবপর নয়।

সওজ ও অধিদপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ উইংসগুলো হলোঃ ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস উইং, টেকনিক্যাল সার্ভিস উইং, ব্রীজ ম্যানেজমেন্ট উইং, পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ উইং ও যান্ত্রিক উইং। সবগুলো উইংস এর যৌথ প্রচেষ্টায় অষ্টম বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে সওজ অধিদপ্তর।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ২০২১-২২ অর্থ-বছরে দু’টি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পসমূহ দ্বিতীয় শীতলক্ষ্যা দ্বিতীয় কাচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু নির্মান।দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের জন্য মানসম্মত ও টেকসই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। আর এ কারনেই সরকার রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নত সড়ক অবকাঠামো নির্মানকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি (কভিড-১৯) এর প্রকল্পের সময় সারা বিশ্ব যখন থমকে গিয়েছিল সে সময়ও বাংলাদেশের অন্যান্য সম্মুখ যোদ্ধাদের ন্যায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকৌশলীগন দীর্ঘ মনোবল সাহস নিয়ে চলমান কার্যক্রমকে অব্যাহত রেখে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রযাত্রাকে গতিশীল রেখেছিলো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা বিনির্মানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর উন্নয়ন কর্মকান্ডকে অব্যাহত রেখে চলছে। বর্তমানে সওজ অধিদপ্তরের মাধ্যমে জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ১৬৩টি এবং বৈদেশিক সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন ২২টি সহ ১৮৫টি প্রকল্পের মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৫টি প্রকল্প সফলভাবে সমাপ্ত করেছে এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে ১৭টি নতুন প্রকল্প গ্রহন করে। 

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এ.কে.এম মনির হোসেন পাঠান সম্প্রতি দ্য ফিন্যান্স টুডের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বর্তমান চলমান কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত খোলামেলা আলোচনা করেন।

মনির হোসেন পাঠান বলেন, সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সাথে সর্বপ্রথম যে বিষয়টির প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো সড়কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়ন। তিনি বলেন, দেশে জাতীয় সড়ক ও মহাসড়ক গুলো বর্তমানে ৪ লেন থেকে শুরু করে ৬ লেনের সড়কে উন্নতি হয়েছে। আমরা সড়ক মহাসড়ক ও অবকাঠামো নির্মানে আন্তর্জাতিক মানের সক্ষমতা অর্জন করেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদেশের অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সাথে টেকনোলজি ট্রান্সফারের কারনে আমাদের দেশের প্রকৌশলীগন অনেক বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমাদের দেশের ঠিকাদারগনও পুর্বের তুলনায় অনেক বেশি ইকুইপমেন্ট সমৃদ্ধ হয়েছে। টেকনোলোজি ট্রান্সফারের কারনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বমানের যে কোনো সড়ক মহাসড়ক ও বড় বড় অবকাঠামো সেতু, কালভার্ট নির্মান করতে সক্ষম।

তিনি আরো বলেন, ইন্টিলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (আইটিএস) এর মাধ্যমে সড়ক ও মহাসড়কের মধ্যে একটি সমন্বয় প্রয়োজন। সমন্বিত প্রয়াস ছাড়া কোনো সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট সম্ভব নয়। সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রোড মাস্টার প্ল্যান সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ন। সড়ক মহাসড়কের ক্ষেত্রে যত সম্ভব রোড মিসিং লিংক কমিয়ে আনতে হবে। সড়ক নির্মানের ক্ষেত্রে কস্ট এফেক্টিভ কিভাবে করা যায় তা পরিকল্পনা করতে হয়। একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সড়ক মহাসড়কে রিজিওন, সাব রিজিওন ও ইন্টারন্যাশনাল রিজিওনের মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। কারন এক দেশ থেকে অন্য দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার  ফলে রাস্তাঘাটগুলো আন্তর্জাতিকমানের টেকসই করতে হবে তা না হলে আন্তর্জাতিক যোগাযোগে পন্য পরিবহনে ভারী বাহন ও চলাচল করতে পারবেনা। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ এক পোর্ট থেকে অন্য পোর্টে অনেক ভারী যানবাহন চলাচল করে থাকে, অতএব রাস্তা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মানের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সার্ভিস উইংসের পরামর্শ মোতাবেক কাজ করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের টেকনিক্যাল সার্ভিস উইংস ও গবেষনা এখন অনেক প্রযুক্তিনির্ভর। এছাড়াও রাস্তা তৈরিতে পারফরমেন্স বেইজড বিটুমিন ব্যবহার করতে হবে। তা হলে রাস্তা ডেমেজ কমে আসবে।

মনির হোসেন পাঠান আরও বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ও তার অধীনস্থ সমস্ত বিভাগ ও সার্কেল এখন প্রতিটি কাজের সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে।

অদূর ভবিষ্যতে ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়নে সওজ অধিদপ্তর টেকসই অবকাঠামো নির্মানে আরও গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করতে পারবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেমন সক্ষমতা অর্জন করেছে তেমনি যোগাযোগ ও অবকাঠামো নির্মানে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এ অর্জনে সরকারের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সওজ অধিদপ্তরের প্রতিটি কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিরলসভাবে দেশগঠনে ভূমিকা রেখে চলছে। 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from Spot Light