22972

07/01/2025

দুর্নীতির মহা থাবায় ডুবতে বসেছে দত্ত নগর বীজ বর্ধন খামার

বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2023-11-04 12:34:43

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন:

দুর্নীতি ও অনিয়মের ভয়াল থাবা লেগেছে এশিয়ার বৃহত্তম ঝিনাইদাহ জেলার দত্ত নগর বীজ বর্ধন খামারে। খামারে বীজ উৎপাদনের জন্য বিষ্ঠা ক্রয় ও ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করছে খামারের উপ-পরিচালক জাহিদুল ইসলাম।

খামারে নিয়োজিত মহিলা শ্রমিকদের দৈনিক হাজিরা টাকা কম দেওয়া, ভুয়া মাস্টার রোলে শ্রমিক দেখানো সহ এমন কোন অনিয়ম নেই যা জাহিদুল ইসলাম করেন না। শুধু তাই নয় মন্ত্রনালয়ের আদেশকে তিনি তোয়াক্কা করেন না।

সুদ খোর, ঘুষখোর, গাজাখোর এর চেয়েও ভংঙ্কর একটি তথ্য অনুসন্ধানে বের হয়েছে তা হলো বিষ্ঠা খোর। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বীজ উৎপাদন খামার হিসেবে পরিচিত ঝিনাইদহ জেলার দত্ত নগর বীজ উৎপাদন ফার্ম।

উক্ত ফার্মের ডিডি জাহিদুল ইসলামকে অত্র এলাকায় সবাই বিষ্ঠা খোর হিসেবে পরিচিত। বিষ্ঠা হলো মুরগীর পায়খানা। উক্ত বিষ্ঠা জমিতে উর্বরতা বাড়াতে ও মাছের খামারে মাছ উৎপাদন বাড়াতে ব্যবহার করা হয়।

উপ-পরিচালক জাহিদুল ইসলাম ধানের বীজে উৎপাদন বাড়াতে ৯০ টন বিষ্ঠা ক্রয় করে খামারে ব্যবহার করেছে এই মর্মে দাবী করা হলেও বাস্তবে এর কোন তথ্য প্রমান পাওয়া যায় নাই। মুলত: ৯০ টন বিষ্ঠা ৩ কিস্তিতে ৩০ টন করে মোট ৯০ টন বিষ্ঠা ক্রয় দেখিয়ে পুরো অর্থ আত্বসাৎ করেছে বলে জানা গেছে।

দত্তনগর খামারের কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে সবাই বিষ্ঠা খোর হিসেবে চিনে। শ্রমিক ও অন্যান্য কর্মচারীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে যে ৯০ টন বিষ্ঠা সাপ্লাই দেওয়ার মত কোন মুরগীর খামার নেই। সরকারী প্রতিষ্ঠান কোন পন্য ক্রয় করতে হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ক্রয় টেন্ডার এর মাধ্যমে ক্রয় করতে হয় । কিন্তু জাহিদুল ইসলাম ৯০ টন বিষ্ঠা ক্রয় ক্ষেত্রে কোন রকম নিয়ম-নীতির ধার ধারেন নাই। নিজের ইচ্ছা মত বিষ্ঠা ক্রয় দেখিয়ে দেন।

তার অধীনস্থ একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আপনারা ক্রয় লেটার দেখেন কবে? কোথায় থেকে কোন প্রক্রিয়ায় বিষ্ঠা ক্রয় করা হয়েছে এবং কেন ক্রয় করা হয়েছে তা লিপিবদ্ধ নাই।

একাধিক সূত্রে থেকে জানা গেছে যে ওভার রাইটিং করে ভিন্ন কালি ও হাতের লেখায় ৩ কিস্তিতে ৯০ টন বিষ্ঠা ক্রয় দেখানো হয়েছে বাস্তবে এর কোন অস্তিত নাই। সমুদয় অর্থ উপ-পরিচালক নিজেই আত্বসাৎ করেছে।

এ ছাড়াও দীর্ঘ দিনের বীজ উৎপাদন তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে হাইব্রীড ধানের যে বীজ উৎপাদন হত; জাহিদুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর তা আরও কমে এসেছে। তাহলে বিষ্ঠা কেন ক্রয় দেখানো হলো।

জাহিদুল ইসলাম বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি শুধু বিষ্ঠা ক্রয়ই সীমবদ্ধ নয়। তিনি বিত্রডিসির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের কোন নির্দেশনাকেও তোয়াক্কা করেন না। এমনকি তার বিরুদ্ধে একাধিক অফিসিয়াল দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

ভুয়া বিল ভাউচারে অর্থ আত্বসাৎ, হাইব্রীড বীজ প্রেরনে অনিয়ম, শ্রমিকের টাকা মেরে দেওয়া, খামারের প্রয়োজনীয় উপকরন না কিনে টাকা আত্বসাৎ করা সহ নানা অভিযোগ রয়েছে উপ-পরিচালক বিরুদ্ধে। দত্ত নগর বীজ বর্ধন খামারের দুর্নীতির নাগালে টেনে ধরা কোন ভাবেই সম্ভবপর হচ্ছে না।

দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক শ্রমিকদের মজুরি ব্যাংক একাউন্টে প্রদান করার পরিপত্র থাকলেও উক্ত খামারে তা কার্যকর হয় না। মহিলা শ্রমিকদের প্রতিষ্ঠান যে মজুরি নির্ধারন করা আছে কাগজে কলমে তা প্রদান করা হলেও বাস্তবে এর চেয়ে কম মজুরি প্রদান করা হয়। এ রকম একাধিক তথ্যপ্রমান আমাদের হাতে রয়েছে।

আবার কোনমত খামারের রোল দেখিয়েও টাকা আত্বসাৎ করা হচ্ছে। ভুয়া মাস্টার রোল তৈরী করে শ্রমিকদের হাজিরা প্রদান করে থাকেন।

ইতিপূর্বে দত্তনগর কৃষি খামার উৎপাদিত ২ কোটি ৬৮ লাখ ৩১ হাজার ৭৭৫ টাকার ধান ও গমবীজ আত্বসাৎতের অভিযোগ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসির) ৮ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলা করা হয়েছে।

১৯৪০ সালে ২ হাজার ৭৩৭ একর জমির উপর এই খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন হেমন্দ্র নাথ দত্ত নামের একজন জমিদার। বিএডিসি খামারটিকে ১ জোকলি নগর ২.মাথুয়া ,৩. পাতিলা ৪. খরিজা এবং ৫, কুশাডাঙ্গাঁ এ পাঁচটি ভাগে ভাগ করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে টাটকা সবজী সরবরাহ করার লক্ষে এ খামারটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিএডিসির যুগ্ন পরিচালক কামরুজামানকে এই ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। অথচ তথ্য সূত্রে বলছে সকল কর্মকর্তাদের মুল কারিগর হচ্ছে কামরুজামান। তিনি সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি করার মূল হোতা।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81