26565

05/12/2025

যে কারণে প্রতিবেশীর হক রক্ষা করা জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক | Published: 2024-11-13 09:15:34

মানব সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ প্রতিবেশী। তাই ইসলাম প্রতিবেশীর হককে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর ও কোনো কিছুকে তার শরীক করো না; এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্থ, নিকট প্রতিবেশী, দুর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক, অহংকারীকে। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)

প্রিয় নবীজি (সা.) প্রতিবেশীর হককে এতটা গুরুত্ব দিয়েছেন যে, তিনি প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণকে ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, যে, নবী (সা.) বলেছেন, যে লোক আল্লাহতে ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানের সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে। (বুখারি, হাদিস : ৬১৩৬)

আমাদের সমাজে অনেকে আছে সাধারণ বিষয়েও প্রতিবেশীকে ছাড় দিতে রাজি হয় না। প্রতিবেশীর কোনো উপকার করাতো দুরের কথা, উল্টো সুযোগ পেলে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করে। এধরণের লোকদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।

আবু শুরায়হ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) একবার বলেছিলেন, আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কে সে লোক? তিনি বললেন, যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না। (বুখারি, হাদিস: ৬০১৬)

অন্য হাদিসে তো নবীজি (সা.) আরো কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ না থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম, হাদিস: ৭৬)

প্রতিবেশীর সঙ্গে অসদাচরণের কারণে একটা মানুষের পরকাল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, যার শুরু আছে শেষ নেই। নাউজুবিল্লাহ। তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত, প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। সুখে দুঃখে তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করা।

একসঙ্গে বাস করতে গেলে মানুষ মাঝে মাঝে প্রতিবেশীর সাহায্যের প্রয়োজন হয়। কখনো ছোট খাটো জিনিস প্রতিবেশী থেকে ধার করতে হয়। এর প্রচলন পৃথিবীতে আদি যুগ থেকেই চলে আসছে। এমন কি রাসুল (সা.)-ও বিশেষ প্রয়োজনে ধার করেছেন। যার বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।

কোনো প্রতিবেশী কোনো কিছু ধার চাইলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়াও উচিত নয়। যেমন গ্রামে এখন বিভিন্ন কাজে প্রতিবেশীদের থেকে দা, কোদাল, শাবল, বালতি ইত্যাদি ধার করতে হয়। যেহেতু এগুলো মানুষের প্রতিদিন প্রয়োজন হয় না, তাই অনেকেই এগুলো তৈরি করেন না। কেউ এধরনের ছোট খাটো জিনিস চাইলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়াকে পবিত্র কোরআনে খুব নিকৃষ্ট কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এবং এই ধরণের ছোট খাটো বিষয়ে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(দুর্ভোগ তাদের জন্য)...এবং ছোট-খাট গৃহসামগ্রী দানে নিষেধ করে।’ (সুরা: মাউন, আয়াত: ৭)

আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর যুগে ‘মাউন’ গণ্য করতাম বালতি, হাঁড়ি-পাতিল ইত্যাদি ছোট-খাটো বস্তু ধারে আদান-প্রদান করাকে। (আবু দাউদ, হাদিস: ১৬৫৭)

যুগের পরিবর্তনের কারণে আরো অনেক ছোট খাটো জিনিস এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। যেগুলো আমাদের নিত্য দিনে প্রয়োজন হয়। আমাদের উচিত, প্রতিবেশীদের কখনো এরকম ছোট খাটো জিনিস প্রয়োজন হলে, যদি নিজের কাছে এগুলো থাকে, তাহলে তাদের সহযোগিতা করা।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81