03/19/2025
শাফিন আহমেদ | Published: 2025-03-18 18:19:37
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্প এলাকা, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জমি নিবন্ধনও এখানে হয়ে থাকে। অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি ও নতুন বিধিনিষেধ আরোপের কারণে এখানে জমির দলিল নিবন্ধনের হার প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এতে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ব্যক্তিগত কিংবা বিশেষ প্রয়োজনেও জমি বিক্রি করতে না পারায় ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ জমির মালিকদের।
উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁ উপজেলার সব মৌজায় জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কাঠাপ্রতি বিক্রয় মূল্যের ওপর নিবন্ধন ফি ছিল তিন শতাংশ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আওতাধীন অঞ্চলের জন্য এ নিবন্ধন ফি ছিল চার শতাংশ প্রযোজ্য ছিল। পরবর্তীতে আয়কর আইন, ২০২৩ ও আয়কর বিধিমালা, ২০২৩ (উৎস কর বিধিমালা ১৩ জুলাই ২০২৩ এর সংশোধিত) মোতাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (আয়কর) প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন অনুসারে সোনারগাঁয়ের জমি রেজিষ্ট্রেশনের ক্ষেত্রে উৎসকর শুধুমাত্র রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তালিকায় জমি কাঠা প্রতি পঞ্চাশ হাজার টাকা নির্ধারিত হয়। উপজেলার ১২০টি মৌজার মধ্যে অধিকাংশ মৌজায় ভূমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বিক্রয় মূল্যে তিন থেকে চার গুন বেশি কর নির্ধারণ করা হয়। এতে করে দলিল দাতা, গ্রহিতাসহ রেজিষ্ট্রশনে সংশ্লিষ্টরা ভোগান্তিতে পড়েন।
এ ছাড়াও জমি নিবন্ধনের জন্য জমির নামজারি ও খাজনা পরিশোধ বাধ্যতামূলক করায় এর নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে।
পৌর এলাকায় জমির দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই টিন সার্টিফিকেট ও আয়কর রিটার্ন সার্টিফিকেট লাগবে। এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপের কারণে অনেকেই জমি ক্রয় থেকে বিরত থাকছেন।
জমি নিবন্ধনে ফি কমানোর দাবিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে স্মারকলিপি দিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন ভূমিগ্রহীতারা। গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর উপজেলার স্থানীয়রা জনসাধারণের পক্ষে গণস্বাক্ষর দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে স্মারকলিপি দেয়। স্মারকলিপির অনুলিপি নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার ও সোনারগাঁ উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারকেও দেওয়া হয়েছিল। অথচ সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।
নারায়ণগঞ্জের ৫টি উপজেলার মধ্যে শুধু সোনারগাঁয়ে অতিরিক্ত ফি দিয়ে জমি নিবন্ধন হয়। আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলায় কাঠাপ্রতি নিবন্ধন ফি ২০ হাজার টাকা। অথচ এ উপজেলায় নিবন্ধন ফি ৫০ হাজার টাকা। সাব-কবলা দলিল রেজিস্ট্রিকালে উৎস কর অত্র উপজেলার পার্শ্ববর্তী আড়াইহাজার/রূপগঞ্জ উপজেলা হতে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী হওয়ায় সাব-কবলা দলিল রেজিস্ট্রি অর্ধেকাংশ কমে যাওয়ার ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, একই সঙ্গে উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। আগে যারা এখানে জমি কিনে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও আবাসন গড়ার আগ্রহ দেখাতেন তারা এখন রেজিস্ট্রি খরচের ভয়ে এই এলাকায় জমি কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। চলতি অর্থবছরের রাজস্বের পরিমাণ বিগত সময়ের চেয়ে অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান বলেন, 'নিবন্ধন ফি বাড়তি থাকায় সাব-কবলা দলিল সৃজন কমে যাচ্ছে। সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে নানা বিড়ম্বনায় জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা।'
নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিষ্ট্রার মোহাম্মদ আব্দুল হাফিজ বলেন, 'সোনারগাঁয়ে নতুন করে উপ কর নির্ধারণ প্রয়োজন। তাহলেই দলিল সৃজন সংখ্যা বাড়বে।'
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81