06/20/2025
নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ী | Published: 2025-06-19 16:18:10
প্রায় সোয়া ১১’শ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জেলা রাজবাড়ী। প্রায় ১২ লাখ মানুষের বসবাস। প্রতিদিনই মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। জরুরী প্রয়োজনে প্রাইভেট হাসপাতাল অথবা পার্শ্ববর্তী জেলাই একমাত্র ভরসা। এই রোগীদের মধ্যে একটি বড় অংশ চক্ষু রোগী। বায়ু দুষন, পানি দুষন, অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ফলে চোখের উপর চাপ বাড়লেও নেই কোন সতর্কতবার্তা।
বর্তমানে রাজবাড়ী জেলার কোন সরকারি হাসপাতালে নেই কোন চক্ষু চিকিৎসক। চোখের যে কোন সমস্যাজনিত কারণে রোগীদের ছুটতে হচ্ছে বেসরকারী ক্লিনিকে। নয়তো জরুরী প্রয়োজনে ছুটে যেতে হয় রাজধানী ঢাকায় যা সময়সাপেক্ষ। এতে করে অর্থের পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার মানুষের চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যা বিশিষ্ট রাজবাড়ী সদর হাসপাতালটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। এই হাসপাতালে দুইজন চক্ষু চিকিৎসক ছিলেন। হাসপাতালটিতে প্রতিমাসে গড়ে ২০০ টি চোখের বিভিন্ন ধরণের অপারেশন করা হতো। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তারা দুইজনই এক সঙ্গে বদলি হয়ে চলে যান। তারপর থেকেই হাসপাতালটি চক্ষু চিকিৎসক বিহীন রয়েছে।
এদিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আওতায় পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। পাঁচটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোনটিতেই চক্ষু চিকিৎসক নেই।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় চক্ষু কনসালটেন্টের কক্ষে তালা ঝুলছে।
হাপাতালের জরুরি বিভাগের পাশেই বহিঃ বিভাগের টিকিট কাউন্টার। সেখানে রোগীরা চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য টিকিট চাচ্ছেন। কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে চোখের ডাক্তার নেই। রোগীরা বাধ্য ও হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
রাজবাড়ী পৌর এলাকার লক্ষীকোল গ্রামের বাসিন্দা অলোকা রানী দাস চোখের সমস্যা নিয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছেন। টিকিট কাউন্টারে টিকিট চাইলে কাউন্টার থেকে বলা হয় চোখের ডাক্তার নেই।
এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। কিন্তু হাসপাতালে ডাক্তার নেই। এখন বাইরে থেকে কোন বেসরকারি ক্লিনিক থেকে চোখ দেখাতে হবে। ক্লিনিকে একবার ডাক্তার দেখাতে শুধু ৮০০ টাকা ফি দিতে হয়। এখন আমি এত টাকা কই পাবো।’
সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের বাসিন্দা মাজেদ মোল্লা বলেন, কাজ করার সময় আমার চোখে লোহা ঢুকে রক্ত জমে গিয়েছিল। প্রথমে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে যাই। সেখানো কোন চিকিৎসক পাইনি। পরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চোখের চিকিৎসককে দেখাই। প্রথমবার চিকিৎসককে দেখাতেই আমাকে ৮০০টাকা পরামর্শ ফি দিতে হয়েছে। ওষুধপত্র মিলিয়ে আমার প্রায় দের হাজার টাকা লেগেছে। এক সপ্তাহ পর আবারও আমাকে যেতে বলেছে। হাসপাতালে চিকিৎসক থাকলে আমাকে এত টাকা দিতে হতো না।
পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. এবাদত হোসেন বলেন, ‘কমপ্লেক্সে চক্ষু চিকিৎসকের পদটি শূন্য রয়েছে। চক্ষু রোগীদের জন্য কমপ্লেক্সে একটি ‘কমিউনিটি আই কর্ণার’ রয়েছে। সেখানে চক্ষু রোগীদেরকে সেবা দেওয়া হয়। প্রয়োজন হলে অনলাইনের মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করা দরকার।
পরিবেশবিদ এমদাদ সালেহীন বলেন, রাজবাড়ী জেলা চিকিৎসায় একটি অনগ্রসর জেলা হিসেবে পরিচিত। এখানে কোন ভালো হাসপাতাল নেই। যে হাসপাতাল আছে সেখানে কোন জটিল রোগী গেলে তাৎক্ষণিক তাকে ফরিদপুরে রেফার্ড করা হয়। জেলার কোন সরকারি হাসপাতালে চোখের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে কোন চিকিৎসক নেই। এটি ভাবাও বিস্ময়কর। সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য কোথায় যাবে। কর্তৃপক্ষের বিষয়টি নজরে আনা দরকার।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ববধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মো. জিয়াউল আহসান বলেন, হাসপাতালে প্রায় ১৮জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে চক্ষু চিকিৎসক নেই। এতে রোগীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষটি জানিয়েছি। হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসক খুবই জরুরি হয়ে পরেছে।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন এস. এম. মাসুদ বলেন, জেলায় অনেক চিকিৎসকের পদই শূন্য রয়েছে। অন্যান্য চিকিৎসক থাকলেও চক্ষু চিকিৎসক একেবারেই নেই। এটি খুবই জরুরি বিষয়। আমরা চিকিৎসকের শূন্যপদ পুরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত হলে এই চিকিৎসক সংকট কেটে যাবে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81