09/09/2025
নিজস্ব প্রতিবেদক | Published: 2025-09-08 19:10:34
গণপূর্ত অধিদপ্তর ই-এম শাখার দুর্নীতি ও অনিয়ম ওপেন সিক্রেট। সিন্ডিকেট ঠিকাদারদের সাথে কমিশন বাণিজ্য নিত্যদিনের ঘটনা। ই-এম শাখার কাজগুলো সাধারণত দৃশ্যমান কম হওয়ার কারণে নিম্নমানের সামগ্রীর ব্যবহার ও সময়মতো কাজ শেষ না করে বিল পরিশোধ করার ঘটনা ই-এম বিভাগে নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ই এম শাখার অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মাঝে মধ্যে সংবাদ প্রকাশ হলেও এ বিভাগে দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন আসেনি। এর প্রধান করেন ই-এম শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ কর্মকর্তা দুর্নীতির বরপুত্র হিসেবে খ্যাত বিগত আওয়ামী শাসনের আমলের চিহ্নিত সিন্ডিকেট ঠিকাদারগণ এখনও দাপটের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। আর এ কাজে সহযোগিতা করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী।
গণপূর্ত ই-এম বিভাগ-৬ এ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে কাজ না করে ঠিকাদারদের বিল দেওয়ার ঘটনা অতি পুরোনো। আর এ কাজের সাথে বর্তমানের যুক্ত রয়েছে ই-এম বিভাগ-৬ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম এর অভিযোগ একাধিক ঠিকাদারের। নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। তিনি ইতোপূর্বে গণপূর্তের উড-ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে । কাজ সমাপ্ত না করে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করা। সর্বশেষ ই-এম শাখায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেরামতের জন্য ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় ই-এম-৬ বিভাগকে। উক্ত বরাদ্দ প্রাপ্তির পর পুরোনো সেই অনিয়ম ও দুর্নীতির ধারাবাহিকতায় ঠিকাদারদের সাথে আঁতাত করে কাজ সমাপ্ত না করেই সম্পূর্ন বিল পরিশোধ করার অভিযোগ উঠেছে এবং এ অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।
প্রতি অর্থ বছরের জুন মাসে বিল পরিশোধ না করলে অথবা অর্থ খরচ করতে না পারলে উক্ত টাকা ফেরৎ চলে যায় এ অজুহাতে নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারদের সাথে যোগসাজস করে গোঁজামিল দিয়ে বিল পরিশোধ করে দিয়েছে গণপূর্ত ই-এম-৬ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষনের জন্য বরাদ্দকৃত ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বাবদ যে সমস্ত কাজ রয়েছে তা হল
১। ৫টি লিফট অকেজো/নষ্ট মেইন কন্ট্রোলার পরিবর্তনসহ আনুসঙ্গিক মেরামতের জন্য ৪০ লাখ টাকার কাজ।
২। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নীচ তলার নষ্ট/অকেজো সুইচ, সকেট, ফ্যান, লাইট ফিটিংস পরিবর্তন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ১০ লাখ টাকার কাজ।
৩। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২য় তলার পূর্ব-পশ্চিম পাশের নষ্ট/অকেজো সুইচ, সকেট, ফ্যান, লাইট ফিটিংস পরিবর্তন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ১০ লাখ টাকার কাজ।
৪। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের নষ্ট/অকেজো সুইচ, সকেট, ফ্যান, লাইট ফিটিংস পরিবর্তন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ৮ লাখ টাকার কাজ।
৫। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ ওয়ার্ডের এসি পরিবর্তন, লাইট ফিটিংস পরিবর্তন ও করে নতুন সরবরাহ ও স্থাপন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ১৫ লাখ টাকার কাজ।
৬। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়ালাইসিস বিভাগের নতুন এসি সরবরাহ ও স্থাপন এবং লাইট ফিটিংস পরিবর্তন ও করে নতুন সরবরাহ ও স্থাপন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ১৩ লাখ টাকার কাজ।
৭। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনফারেন্স রুমের এসি পরিবর্তন, লাইট ফিটিংস পরিবর্তন করে নতুন সরবরাহ ও স্থাপন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ১০ লাখ টাকার কাজ।
৮। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মহোদয়ের কক্ষের ইন্টেরিয়র কাজের জন্য নতুনভাবে ওয়্যারিং সহ বৈদ্যুতিক ফিটিংস ফিকচার ও এসি মেশিন সরবরাহ ও স্থাপন করন ১৫ লাখ টাকার কাজ।
৯। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবষ্টেশন ভবনে একজাষ্ট ফ্যান সরবরাহ ও স্থাপন সহ নষ্ট/অকেজো সুইচ, সকেট, ফ্যান, লাইট ফিটিংস পরিবর্তন ও পাওয়ার পয়েন্ট স্থাপন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ১০ লাখ টাকার কাজ।
১০। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিচেনের নষ্ট/অকেজো সুইচ, সকেট, একজাষ্ট ফ্যান ও সিলিং ফ্যান, লাইট ফিটিংস পরিবর্তন ও পাওয়ার পয়েন্ট স্থাপন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ৮ লাখ টাকার কাজ।
১১। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অক্সিজেন সেন্টারের অকেজো/নষ্ট ওয়্যারিং, লাইট ফিটিংস, ফ্যান, সুইচ সকেট পরিবর্তন এবং এসি সরবরাহ ও স্থাপন করন ৮ লাখ টাকার কাজ।
১২। মুগদা হাসপাতালের সিসিইউ ওয়ার্ডের এসি মেশিন সার্ভিসিং সহ আরও নতুন ৫টনের ০৪টি এসি মেশিন স্থাপন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ১০ লাখ টাকার কাজ রয়েছে।
চিঠিতে দেখা যায়, এই বরাদ্দের কাজ শেষ করে বিল পরিশোধ করার জন্য গত ২৬ জুন পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া ছিল। এই সময়ের মধ্যে কাজ সম্পাদন করে বিল পরিশোধ না করলে বরাদ্দকৃত অর্থ সরকারের কোষাগারে ফেরত যাবে। এই বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে সরকারের কোষাগারে ফেরত না যায় সেইজন্যই কাজ সম্পাদন না করে ২৬ জুনের মধ্যে ঠিকাদারকে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করে দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম। অসম্পন্ন কাজের বিল পরিশোধ করে পরে সেই কাজ সম্পূর্ন সম্পাদন করার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। এতে তিনি ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।
পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস) অনুযায়ী কাজ সম্পাদন না করে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করার ফলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও ঠিকাদার উভয়ের বিরুদ্ধেই বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্ত বা সাময়িক বরখাস্ত, আর্থিক জরিমানা, এবং সরকারের রাজস্ব ক্ষতিপূরণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
দ্য ফিন্যান্স টুডে’র নিজস্ব অনুসন্ধানেও এর সত্যতা মিলেছে। এ ব্যাপারে জানতে নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। হোয়াটস অ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন উত্তর মিলেনি। উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন না। তার একই কথা আমি আমার কাজের জন্য আমার অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তথ্য দিতে বাধ্য। গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে বাধ্য নই। আমি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজী নই। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রায়শই বলে থাকেন দুদককে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা যায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে তার নিকট কলিগদের কাছ থেকে। অতএব আমি কেন গণমাধ্যমের সাথে কথা বলবো।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81