29974

10/30/2025

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সঞ্চয়পত্রের অর্থ আত্মসাৎ

বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2025-10-29 21:49:01

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। অন্যের সঞ্চয়পত্র মেয়াদপূর্তির আগেই ভাঙিয়ে তারা অর্থ স্থানান্তর করে নিজেদের ব্যাংক হিসাবে। এই চক্রটির আরও প্রায় ৫০ লাখ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ঘটনাটি ধরা পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে কেনা সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে। এই ঘটনায় মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “যাদের হিসাবে অর্থ গেছে এবং যারা জালিয়াতিতে জড়িত, তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সঞ্চয়পত্র সিস্টেম পরিচালনাকারীদের কারও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই এই জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে।”

কীভাবে ঘটলো জালিয়াতি

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও গ্রাহক সঞ্চয়পত্র কেনার সময় যে ব্যাংক হিসাব দেন, মেয়াদ শেষে সেই হিসাবেই মূলধন ও মুনাফা স্থানান্তর হয়। এছাড়া তথ্য পরিবর্তন বা ভাঙানোর জন্য গ্রাহককে সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করতে হয়, যার পর তার মোবাইলে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পাঠানো হয়। গ্রাহক উপস্থিত থেকে সেই ওটিপি প্রদান করলে তবেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক গ্রাহক অভিযোগ করছেন, বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের সঞ্চয়পত্র বা প্রবাসী আয়ের টাকা থাকলেও উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না। এই সুযোগে ব্যাংক পরিবর্তনের আবেদন করে কেউ কেউ জালিয়াতি করছে বলে ধারণা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

২৫ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার কৌশল

গত বৃহস্পতিবার একজন গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনেন। তার ব্যাংক হিসাব ছিল অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায়। চার দিনের মাথায় সোমবার সেই সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে টাকা স্থানান্তর করা হয় এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখার এক অচেনা ব্যক্তির হিসাবে। পরে রাজধানীর শ্যামলী শাখা থেকে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়।

একই প্রক্রিয়ায় একই দিনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ লাখ ও এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর চেষ্টা করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আসায় পরবর্তী লেনদেনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।

চিহ্নিত হচ্ছে জড়িতরা

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিনজন সঞ্চয়পত্র ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছে—তারা কেউই সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর আবেদন করেননি এবং কোনো ওটিপিও পাননি। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের যেসব কর্মকর্তার কাছে সিস্টেমের পাসওয়ার্ড ছিল, তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নতুন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই এই জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে। যাদের কাছে পাসওয়ার্ড ছিল, তারা নজরদারিতে রয়েছেন। পাশাপাশি বাইরের কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্ত কমিটি গঠন

এনআরবিসি ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তৌহিদুল আলম খান বলেন, “ঘটনাটি জানার পরপরই ডিএমডির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজ শুরু করেছে, বিস্তারিত প্রতিবেদন শিগগিরই পাওয়া যাবে।”

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংক ও অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের মোট সঞ্চয়পত্রের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিস মিলে প্রায় ১২ হাজার শাখায় এসব সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও ভাঙানো হয়।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81