11/29/2025
শাহীন আবদুল বারী | Published: 2025-11-29 02:45:13
বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশে মূলধারার রাজনীতি সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। তাঁর জীবনটাই সংগ্রামমূখর। তিনি আধিপত্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদবিরোধী দৃঢ় মনোভাবাপন্ন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে অবিচল আস্থাশীল দেশনেত্রী। এই দেশের খেটে খাওয়া মানুষের- কৃষক শ্রমিক মেহনতি জনতার সবচেয়ে বড় ভরসাস্থল। তিনি মৃদুভাষী অথচ প্রয়োজনের সময় কঠিন সংকল্পবদ্ধ।
শেখ হাসিনার মতো প্রতিহিংসাপ্রবণ রাজনীতিবিদ তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এটাই বেগম জিয়ার দুর্ভাগ্য। বাংলাদেশে বেগম খালেদা জিয়ার মতো রাজনীতিবিদ দ্বিতীয় কেউ আর নেই।
আজ তিনি অসুস্থ। দেশের মানুষ তাঁর অসুস্থতার খবরে বেশ উদ্বিগ্ন। মহান আল্লাহ পাক তার সহায় হোন। সুস্থ হয়ে বেগম জিয়া আবারও রাজনীতির ময়দানে ফিরে আসবেন; এটাই প্রত্যাশা করছেন বাংলাদেশের আপামর জনগণ।
খালেদা জিয়া অসময়ে স্বামী হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে একাকী জীবনযাপন করেছেন, রাজনীতি করেছেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, দুইবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তার শাসনামলে অনেক ভালো দিক যেমন ছিলো তেমনি অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতিও ছিলো। তিনি নিজেও ভুলের উর্দ্ধে ছিলেন না। কিন্তু উনার মধ্যে একটা বিরল প্রতিভা ছিলো। উনি দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন, যত্ন করতেন। বাংলাদেশের খুব কম রাজনীতিবিদদেরই এই গুনাবলীটুকু আছে।
নিকট অতীতে, সুযোগ থাকা সত্বেও বেগম খালেদা জিয়া দেশের মানুষকে শেখ হাসিনার হাতে সমর্পন করে বিদেশ সফরে যেতে রাজি হননি। তিনি স্পষ্টতই জানতেন, দেশে থাকলে মিথ্যা মামলায় তাকে জেলে যেতে হবে। তিনি এও জানতেন যে, এটি জেল নয় বরং কবর। এখানে একবার ঢুকলে আর বের হতে না পারার সম্ভাবনাই বেশি।
বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় সরকার পতনের আন্দোলনের সময় বেগম খালেদা জিয়াকে যখন নিজ বাসভবনেই বালুর ট্রাক দিয়ে আটকে দেয়া হলো তখন উনি রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলেছিলেন, "চাইলে কঠিন কর্মসূচী দিয়ে আমরা এই সরকার নামিয়ে ফেলতে পারি। কিন্তু এতে অনেক মানুষ মারা পড়বে। সরকারের না থাকলেও রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের প্রতি আমাদের মায়া আছে। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সরকার পতনের এই আন্দোলন আমি স্থগিত করলাম।"
এই আন্দোলন ভন্ডুল হতেই ওয়ান-ইলেভেনে গঠিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ২টি মিথ্যা মামলা হঠাৎ করেই গতি লাভ করে। তখন দেশের সবাই জানতো, আদালতে খালেদা জিয়া প্রকৃত ন্যায়বিচার পাবেন না। সবাই বুঝেছিল, উনাকে জেলে দেয়া হবেই। হয়তো মেরেও ফেলা হবে।
শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সেদিন তিনি লন্ডন থেকে উমরাহ করে দেশে ফিরে আসলেন। পক্ষপাতদুষ্ট বিচারিক প্রক্রিয়া মোকাবিলা করে জেলে গেলেন, নিশ্চিত মৃত্যুকে বেছে নিলেন।
দেশের সবাই জানতো, আদালতে খালেদা জিয়া প্রকৃত ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। সবাই বুঝেছিল, উনাকে জেলে দেয়া হবেই। হয়তো মেরেও ফেলা হবে। তারপরও লন্ডন থেকে, উমরাহ থেকে দেশে ফিরে আসলেন। পক্ষপাতদুষ্ট বিচারিক প্রক্রিয়া মোকাবিলা করে জেলে গেলেন, নিশ্চিত মৃত্যুকে বেছে নিলেন।
সবকিছু জেনেও খালেদা জিয়া কবরেই ঢুকেছিলেন। সেখানে তাকে ভালো খেতে দেওয়া হয়নি, চিকিৎসার সুযোগ চাইলে হাসিনা বলেছিল, অনেক বছরই তো বাঁচল, আর কত? মোট কথা, খালেদা জিয়া হাসিনার জেলে ছিলেন।
খাবারে বিষ মেশানোর ১০০ ভাগ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও খালেদা সেই খাবার খেয়েছেন। নিজের জন্য খাননি, খেয়েছিলেন দেশের মানুষের জন্য।
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী জানতেন, শেখ হাসিনার সাথে তিনি পারবেন না। তবুও বিদেশ না গিয়ে দেশের মানুষের সাথে কষ্ট ভাগ করে নিয়েছিলেন বেগম জিয়া।
মূলত, ৬টি বছর হাসিনার জেলে না থাকলে কি খালেদা জিয়ার আজ এই পরিণতি হত? তাঁর ভয়ংকর অসুস্থতা দেশবাসীর জন্য কুরবানী স্বরূপ।
বর্তমানে, রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা।
বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত ৮০ বছর বয়সী এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দীর্ঘদিন ধরে বহুমুখী শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস (গাঁটের ব্যথা), লিভার সিরোসিস (যকৃতের জটিলতা) এবং কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা।
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন জিয়া পরিবারের উত্তরাধিকারী এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও পরিবারের সকল সদস্য।
এই মুহুর্তে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দলটির নেতাকর্মীরাও। তার আশু রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় রাজধানীসহ দেশের সকল মসজিদে শুক্রবার বাদ জুমা দোয়া মাহফিল করেছে দলটি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মইন খান এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এছাড়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি প্রতিনিয়ত বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছেন এবং প্রয়োজনীয় সবধরনের চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা তিনবারের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের আন্তরিকতা, সৌজন্যতা ও মানবিক অনুভূতি প্রকাশের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এদিকে, বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমির ডা. শফিকুর রহমান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সহ অন্যান্য রাজনীতিবিদ।
এর আগে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দু’টি ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মহান আল্লাহ পাক আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা মহীয়সী এই নারীকে সুস্থ করে দেশের মানুষের কাছে ফেরত দিবেন এই প্রত্যাশায় প্রতিটি মুহুর্ত পার করছেন সারা দেশের মানুষ। কারণ, আজ থেকে ৮ বছর আগে একদা এই নারী নিজের জীবন, পরিবার, স্বজন সবকিছু বাদ দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রকে বেছে নিয়েছিলেন।
সম্প্রতি, সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। সেদিন অনুষ্ঠান শেষে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠার সময় সেনাপ্রধানের কাছে সকালে ঘটা ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে আটকেপড়া মানুষদের উদ্ধার করা এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন।
খালেদা জিয়া অসময়ে স্বামী হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে একাকী জীবনযাপন করেছেন, রাজনীতি করেছেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, দুইবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তার শাসনামলে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিলো। তিনি নিজেও ভুলের উর্দ্ধে ছিলেন না। কিন্তু উনার মধ্যে একটা বিরল প্রতিভা আছে। উনি দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন, যত্ন করতেন। বাংলাদেশের খুব কম রাজনীতিবিদদেরই এই গুনাবলী টুকু আছে।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় উনাকে যখন নিজ বাসভবনেই বালুর ট্রাক দিয়ে আটকে দেয়া হল তখন উনি রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলেছিলেন, "চাইলে কঠিন কর্মসূচী দিয়ে আমরা এই সরকার নামিয়ে ফেলতে পারি। কিন্তু এতে অনেক মানুষ মারা পড়বে। সরকারের না থাকলেও রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের প্রতি আমাদের মায়া আছে। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সরকার পতনের এই আন্দোলন আমি স্থগিত করলাম।"
দেশের সবাই জানতো, আদালতে খালেদা জিয়া প্রকৃত ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। সবাই বুঝেছিল, উনাকে জেলে দেয়া হবেই। হয়তো মেরেও ফেলা হবে। তারপরও লন্ডন থেকে, উমরাহ থেকে দেশে ফিরে আসলেন। পক্ষপাতদুষ্ট বিচারিক প্রক্রিয়া মোকাবিলা করে জেলে গেলেন, নিশ্চিত মৃত্যুকে বেছে নিলেন।
৫ আগস্ট একদিনে হয় নাই। ১৭ বছর ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জু*লুম জমা হতে হতে ৫ আগস্ট ঘটেছে। এই ৫ আগস্ট ঘটানোর পেছনে শাপলা চত্বরের ম্যা'সাকার ছিল, মানবতাবিরোধী অপরাধের নামে জামাত-বিএনপি নেতৃবৃন্দের হত্যাকান্ড ছিল, ইলিয়াস আলীর গু*ম ছিল, আবরার ফাহাদের শাহাদাত ছিল, কোটা আন্দোলন ছিল এরকম অসংখ্য ঘটনা ছিল। আর একজন ছিলেন খালেদা জিয়া। এই ভদ্রমহিলার নীরবে নিভৃতে জেল-জীবন বেছে নেয়া ৫ আগস্টের অন্যতম অনুঘটক ছিল।
খালেদা জিয়া আজ হাসপাতালে ভর্তি। এভারকেয়ারে কথা বলে জানলাম উনার অসুস্থতা একটু গুরুতর। এই অসুস্থতা উনি চুজ করেছেন। বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য। উনার জন্য একটু দোয়া করবেন। এইটুকু অন্তত উনি বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে ডিজার্ভ করেন।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81