30598

12/22/2025

কৃষি জমিতে লবণ, চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষের আগ্রাসন বন্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

মোস্তফা কামাল আকন্দ | Published: 2025-12-21 18:00:53

কৃষি জমিতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করিয়ে চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষের ফলে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে, মাটির উর্বরতা কমছে এবং স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর কারণে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে এবং কৃষিনির্ভর জনগোষ্ঠী দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির মুখে পড়ছে। তাই জীবন-জীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি জমিতে লবণ, চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ বন্ধ করা জরুরি।

কৃষি জমিতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে, ফসলি জমিতে চিংড়ি ও কাকঁড়া চাষ নিষিদ্ধ করতে কার্যকর আইন প্রয়োগ করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বিকল্প আয় ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, স্থানীয় জনগণের সম্মতি ছাড়া ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন বন্ধ করতে হবে আমাদের কৃষিতে ফিরতে হবে।

আজ ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ সাতক্ষীরা জেলার শ্যমনগর উপজেলার নওয়াবেঁকি বাজারে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এসকল দাবিসমূহ তুলে ধরেন।

কোস্ট ফাউন্ডেশন ও উদয়ন বাংলাদেশ যৌথভাবে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর এম.এ. হাসান-এর সঞ্চলনায় মানববন্ধন শেষে আয়োজিত এক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উদয়ন বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক শেখ আসাদ।

এই সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সামিউল ইসলাম মনির, সভাপতি, শ্যমনগর প্রেস ক্লাব, এম,এম শওকত হোসেন,সাবেক ইউপি সদস্য, ইমরান পারভেজ, উন্নয়ন কর্মী, শিবু প্রসাদ বৈদ্য, গণচেতনা ফাউন্ডেশন, ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর নারী প্রতিনিধি নাজমা আবু, ঝরনা খাতুন প্রমুখ।

কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর এম.এ. হাসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও চিংড়ি বা কাকঁড়ার ঘের এই অঞ্চলকে কৃত্রিমভাবে লবণাক্ত করে তুলছে এবং পরিবেশগত বিপর্যয় বাড়াচ্ছে। কৃষি জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে লবণ, চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ কিছু মানুষের জন্য লাভজনক হলেও এটা জীব বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করছে এবং বহু মানুষের জমি, খাদ্য, জীবিকা ধ্বংস করে তাদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ফসলি জমিতে লবণাক্ততা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জমিগুলি বহু বছর ধরে চাষের অযোগ্য থেকে যাচ্ছে। কৃষি জমি সংরক্ষণ আইন ২০০০ -এ বলা হয়েছে যে যদি কোনও কৃষি জমি শিল্প, আবাসিক বা অন্য কোনও অকৃষি ব্যবহারের জন্য রূপান্তর করতে চায়, তাহলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বাধ্যতামূলক, আমরা এই আইনের কঠোর বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

উদয়ন বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক শেখ আসাদ বলেন, শ্যামনগর ও সাতক্ষীরার চিংড়ি ও কাঁকড়ার ঘের-এর লবণাক্ততার কারণে কৃষির উৎপাদন ও জমির গঠন হুমকির মুখে পড়েছে, যা স্থানীয় কৃষি ও জীবিকাকে সরাসরি প্রভাবিত করছে। কৃষিকাজের জমিগুলো দীর্ঘমেয়াদে জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে অনেক কৃষক নিজের বসতভিটা এবং কৃষি কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন, জীবিকার সন্ধানে তারা অন্যত্র মাইগ্রেশন বা স্থানান্তর হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য মাসিক ভাতা, স্বল্পমেয়াদী ঋণ বা নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য সাহায্য গুরুত্বপূর্ণ।

শ্যামনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি সামিউল ইসলাম মনির বলেন, অবৈধভাবে দেওয়া খালের ইজারা বাতিল করতে হবে, অবৈধ বালি উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙন তীব্র হচ্ছে; অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। আমাদের কৃষিতে ফিরে যেতে হবে; আমাদের জমি এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে, আমাদের সেগুলোকে তিন ফসলি জমিতে পরিণত করতে হবে এবং খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনে আমাদের ধান ও সবজির উৎপাদন বাড়াতে হবে।

গণচেতনা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শিবু প্রসাদ বৈদ্য বলেন, এমনিতেই পুরো উপকুলীয় অঞ্চল জুড়ে খাবার পানির তীব্র সঙ্কট। যেখানেই চিংড়ি, কাকড়া চাষ বেশি সেখানেই খাবার পানির সঙ্কট তীব্রতর। অবাধে চিংড়ি ও কাকড়া চাষকে যদি এখনই কঠোর নীতিমালার আওতায় আনা না হয়, তাহলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশ, প্রকৃতি ও অর্থনীতি আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। কৃষি জমিতে লবণ, চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষের আগ্রাসন বন্ধ বরতে হবে।

ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর নারী প্রতিনিধি ঝরনা খাতুন বলেন, লবণাক্তার প্রভাবে আমরা নারীরা রয়েছি মারাত্নক ঝুঁকিতে, আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে, কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ায় স্থানীয়ভাবে খাদ্য সংকট তৈরি হচ্ছে, কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো নিজেদের খাবার নিজেরা উৎপাদন করতে না পারছেনা, বাজারের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে, দারিদ্রতা ও দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে চাহিদা অনুযায়ী যোগান না থাকায় পরিবারগুলো বিশেষ করে নারী, শিশুরা অপুষ্টির শিকার হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কৃষি উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকারত্ব বেড়েছে, কাজের সন্ধানে মানুষ শহরমূখী হচ্ছে।, ফলে পুরুষশুন্য পরিবারগুলোতে নারীদের নিরাপত্তার ঘটিতি, বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ সহ নানাবিধ সামাজিক অপরাধের মাত্রা বেড়েছে। টেকসই সমাধানের জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

উন্নয়নকর্মী ইমরান পারভেজ বলেন, পানীয় জলের তীব্র ঘাটতি রয়েছে, সরকারকে এটি মোকাবেলায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে, জলবায়ু-অভিযোজিত কৃষি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে, কৃষকদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং তাদের জন্য প্রণোদনা বৃদ্ধি করতে হবে।

প্রাক্তন ইউপি সদস্য এম.এম. শওকত হোসেন বলেন, সিডর ও আইলার পর থেকে আমাদের অঞ্চল লবণাক্ততার ঝুঁকিতে পড়েছে, কৃষি উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে, পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে এবং লবণাক্ততার কারণে আমাদের জমির উর্বরতা হ্রাস পেয়েছে। আমরা এ থেকে মুক্তি পেতে সরকারের কাছ থেকে যথাযথ উদ্যোগ দেখতে চাই।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81