12/28/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2025-12-28 14:31:57
গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলম। বরিশাল অফিসে কর্মরত। তার বিরুদ্ধে উঠে এসেছে ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। ঠিকাদার সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে দুহাতে লোপাট করছে অর্থ।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা আমির হোসেন আমুর ”পালিত পুত্র” এবং খুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও গণপূর্ত অধিদপ্তর, বরিশাল-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলম রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও দাপটের সাথে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
ঝালকাঠি রাজাপুরের সন্তান ফয়সাল আলম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাধর ব্যক্তি আমির হোসেন আমুর অত্যন্ত আস্থাভাজন। আর সেই সুবাদে ঝালকাঠি ও বরিশালে কর্মরত অবস্থায় তিনি ধরাকে সরাজ্ঞান করে গণপূর্তের অফিসকে দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন।
টেন্ডারবাজি, ভুয়া বিল, ভাউচারের মাধ্যমে অঢেল অর্থের মালিক বনে গেছেন এই নির্বাহী প্রকৌশলী, এমন অভিযোগ তার এলাকার জনগণের মুখে মুখে বিরাজমান।
ঝালকাঠিতে কর্মকালীন সময়ে ২০২২-২০২৪ সালে এলটিএম টেন্ডারে ব্যাপক জালিয়াতি, সদর মডেল মসজিদ, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল, এনএসআই ভবন, পুলিশ মেস লাইনের ভবন নির্মান প্রকল্প সহ বিভিন্ন দপ্তরের একাধিক প্রকল্পে কাজ করার সময় তিনি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিলেন।
৩২তম বিসিএস’র বহুল বিতর্কিত ফয়সাল আলমের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার শুক্তঘর এলাকায়। খুলনায় তিনি পড়ালেখা করেছেন। প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে ফয়সাল আলম ঝালকাঠিতে দীর্ঘদিন একই চেয়ার আঁকড়ে ধরে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নিজেকে বড় আওয়ামী লীগার হিসেবে জাহির করতেন তিনি। রাজনৈতিক অঙ্গন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন মহলে আমির হোসেন আমুর দালাল হিসেবেও বেশ পরিচিত প্রকৌশলী ফয়সাল আলম। ঝালকাঠিতে আমুর আস্তাভাজনে ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে সাধারণ ঠিকাদারদের তোপেরমুখে পড়েছিলেন তিনি। একপর্যায়ে ঝালকাঠির ঠিকাদাররা দুদকে অভিযোগও দিয়েছিলেন। দোর্দন্ড প্রভাবশালী আমুর আর্শিবাদপুষ্ট হওয়ায় কোনভাবেই তার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়নি। ঝালকাঠি থেকে বরিশাল গণপূর্তে দায়িত্ব নেওয়ার পর সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন বনে গিয়ে নানা ধরণের অন্যায়-অনিয়মে জড়িয়ে পড়লেও তৎকালীন সময়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি।
মূলতঃ আমির হোসেন আমুর কল্যাণেই অতীতে সকল নিয়ম ও দুর্নীতি করে পার পেয়ে গেছেন। বদলি, পদোন্নতি, নিয়োগ, টেন্ডার সিন্ডিকেট সবই ছিল তার হাতের মুঠোয়। এখন ভোল পাল্টে পূর্বের ন্যায় দুর্নীতির সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট।
৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবের পর নতুন করে নব্য বিএনপি সেজে আবারো দুর্নীতি ও অনিয়মের নোংরা খেলায় মেতে উঠেছেন বরিশাল অফিসে।
স্বৈরাচারের শাসনামলের মতো দাপিয়ে বেড়াতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরও পদ পদবী ও আধিপত্য ধরে রাখতে বিভিন্ন অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন ফয়সাল আলম। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজেকে বিএনপি ঘরোনার ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে নানা কায়দায় অপতৎপরতায় চালিয়ে আসছেন।
অপতৎপরতার অংশ হিসেবে স্বৈরাচার শাসনামলের অন্যায়-অপকর্ম অন্ধকারে রেখে খোলস পাল্টিয়ে তিনি ইতোমধ্যে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তাদের তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ করেন। এমনকি, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এর বরিশালে নবগঠিত কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসীন হন বহুল বিতর্কিত নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল।
অন্যদিকে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর কর্তৃপক্ষ তার বদলির আদেশ দেয়, কিন্তু পরিবহন ব্যাবসায়ী ও বরিশালের শক্তিশালী ঠিকাদার মিজান খান (কাশি মিজান) ও নাসির খান ম্যানেজ করে তাকে বহাল রাখে।
বরিশাল গণপূর্ত কার্যালয় বর্তমানে ভয়ংকর ঠিকাদার সিন্ডিকেটের দখলে। এই ঠিকাদার সিন্ডিকেটের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত খান বিল্ডার্স, খান ট্রেডার্স, বাবর অ্যাসিয়েটস, এসএ এন্টারপ্রাইজ সহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। আর এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে গোপন আঁতাত করে বরিশাল গণপূর্ত'র নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলম হাতিয়ে নিচ্ছেন শত শত কোটি টাকা।
সূত্র মতে, শেবাচিম ক্যান্সার ইউনিটের দুই দফা কাজ বাড়িয়ে ২৩৯ কোটি টাকার প্রকল্প ৯৯ কোটি টাকায় ভবন নির্মাণের পাশাপাশি কোটি কোটি টাকার মালামাল সরবরাহ দেখিয়ে পুরো বিল আদায় করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মালামাল প্রকল্প সাইটে বসানোর জায়গায় নাই বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
একইভাবে বরিশাল নভোথিয়েটারের অর্ধেক ভবনও শেষ হয়নি অথচ কোটি কোটি টাকার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, সাউন্ড সিস্টেম, জেনারেটর, এসি সরবরাহ দেখিয়ে বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
শেবাচিম হাসপাতালে ক্যান্সার ইউনিট নির্মাণে দুর্নীতির মহোৎসব
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালে ক্যান্সার ইউনিট নির্মাণে দুই দফা ব্যয় বাড়িয়ে বরাদ্দ হয় ২৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৯ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে বেজমেন্টসহ ১৫তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে।
প্রকৌশলী ফয়সাল আলমের গোপন ব্যবসায়িক পার্টনার 'খান বিল্ডার্স' নামক প্রতিষ্ঠানটি এই কাজের বাস্তবায়নে রয়েছে।
ভবন নির্মাণ পুরোপুরি শেষ না হলেও ২০৩৪-২৪ অর্থবছরে ৪,৮৪,১০,৫০৮ টাকা চুক্তিমূল্যে ওই ভবনের জন্য পিবিএক্স সিএটিভি/ডিস পিএ সিস্টেম ডিজিটাল কনফারেন্স সিস্টেম সোলার সিস্টেম পিএবিএক্স সিসিটিভি কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং গ্রীড সোলার সিস্টেম নার্স মনিটরিং সিস্টেম ডিঙ্কিং ওয়াটার পিউরিফায়ার সিস্টেম; একই অর্থবছরে ৫,৯৫,৮০,০০০ টাকা চুক্তিমূল্যে মেডিকেল ওয়াস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম; ৫,৩৬,১৬,৪৭৪ টাকা চুক্তিমূল্যে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি), ৫,৯৪,৪৩,৯৮০ টাকা চুক্তিমূল্যে ডিস্ট্রিবিউশন লাইনসহ মেডিকেল গ্যাস সিস্টেম সরবারহ ও স্থাপণ; ৩,১৪,১৯,৫১৩ টাকা চুক্তিমূল্যে ফায়ার ফাইটিং ম্যানেজমেন্ট সিষ্টেম সরবরাহ ও স্থাপন কাজ।
এছাড়াও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১০,৮৮,৯৮,৮৮৪ টাকা চুক্তিমূল্যে ২টি ১৫০০ কেভি সাবস্টেশন এইচটি এলটি সার্ভিস ক্যাবল ৫০০ কেভি জেনারেটর ও পাম্প মোটর সেট সরবরাহ কাজগুলোতে মালামাল সরবরাহ দেখিয়ে ঠিকাদারদের পুরো বিল পরিশোধ করে প্রায় ২ কোটি টাকা লোপাট করেছেন প্রকৌশলী ফয়সাল আলম।
অথচ এই সকল মালামাল নির্দিষ্ট সাইটে স্থাপণের প্রয়োজনীয় জায়গার সংকুলান হয়নি এখনও। চাইনিজ ব্র্যান্ডের মালামাল সরবরাহ নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে ডিভিশনটির প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে।
বরিশালে নভোথিয়েটার প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি
বরিশালে নভোথিয়েটার স্থাপণ প্রকল্পে ভবন নির্মাণের কাজ অর্ধেক শেষ না হলেও শূধুমাত্র কোটি টাকা লোপাটের উদ্দেশে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে প্রকৌশলী-ঠিকাদার সিন্ডিকেট।
বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬,২১,৭৭,৪৫২ টাকা চুক্তিমূল্যে ফিডার ক্যাবলসহ ২০০০ কেভিএ সাবষ্টেশন ৪০০ কেভি জেনারেটর ৪০০ কেভি সাবস্টেশন ১৫০ কেভি জেনারেটর; ১১,৪৯,৯৯,০০০ টাকা চুক্তিমূল্যে এসি সরবরাহ ও স্থাপন ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশ্লিষ্ট কাজসহ পাম্প মোটর সেট পিএবিএক্স ও ইন্টারকম সিস্টেম সাউন্ড/পিএ কনফারেন্স সিস্টেম অডিটোরিয়াম সাউন্ড সিস্টেম স্টেজ লাইট ও ভিডিও ওয়াল অডিটোরিয়াম স্টেজ কারটেইন সরবরাহ ও স্থাপণ কাজগুলোর সকল মালামাল সরবরাহ দেখিয়ে ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এখানেও নিম্নমাণের মালামাল সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বকয়েক কোটি টাকা বরাদ্দে দুর্গাসাগর ট্যুরিজম ফ্যাসালিটিজ প্রকল্প, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১,৪৭,৮২,৭৭০ টাকা চুক্তিমূল্যে সার্কিট হাউজ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১,০৭,৯৫,০৩২ টাকা চুক্তিমূল্যে জেলা প্রশাকের বাসভবনে বিভিন্ন ধরণের মেরামত পুণর্বাসন কাজে ওভার ইষ্টিমেটের মাধ্যমে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশী বরাদ্দ করে অর্থ লোপাট করা হয়েছে বলে জানাগেছে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81