May 21, 2025, 5:05 am


নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:
2025-05-21 00:14:32 BdST

ডিআরইউতে বায়রা সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় দোষীদের বিচার দাবিমালয়েশিয়া-বাংলাদেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠককে ঘিরে সিন্ডিকেটমুক্ত জনশক্তি রপ্তানির আহবান


অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের দুয়ার খুলতে যাচ্ছে শিগগিরই। প্রবাসী কল্যাণ ও আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল মালয়েশিয়ায় দ্বিপাক্ষিক সফরে রয়েছেন। আগামীকাল পুত্রজায়ায় বসবে বহুল প্রতিক্ষিত দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাধারণ সদস্যরা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।

বায়রা সদস্যরা বলেন, বায়রার কিছু নেতা ইউনূস সরকারকে বিতর্কিত আর বেকায়দায় ফেলতে কখনও সিন্ডিকেট, কখনও অনলাইন সিস্টেম এবং কখনও শ্রমচুক্তিকে দায়ী করছেন। শুধুমাত্র গুটিকয়েক নেতার নিউজ মিডিয়াতে দায়িত্বহীন বক্তব্য আর বিভিন্ন শ্রমবাজার নিয়ে অহেতুক বিতর্কের কারণে বিদেশে সংকোচিত হচ্ছে শ্রমবাজার, প্রভাব পড়ছে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের।

এরই জেরে গত ১৯শে মে, ২০২৫ইং তারিখে বায়রার সাবেক জ্যৈষ্ঠ সহ-সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ন মহাসচিব -১ মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, প্রবীর নেতাদ্বয় মোয়াজ্জেম হোসেন ও মোস্তফা মাহমুদের নেতৃত্বে সিন্ডিকেটমুক্ত সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার দাবিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড খ্যাত ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার পলাতক রুহুল আমিন স্বপনের পালিত সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলায় মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, নজরুল মনির জহিরুল ইসলামসহ বায়রার ১০-১২ জন সদস্য আহত হন।

এসময় রুহুল আমিন স্বপনের পালিত সন্ত্রাসীরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গুরুত্বপূর্ণ কক্ষসমূহ ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। পরে দুই গ্রুপের লোকজনকে নিয়ে বসেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতারা। তারা ডিআরইউ ও ক্র্যাবে হামলা চালানোর ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনার পর হামলাকারীরা ডিআরইউকে ২ লাখ এবং ক্র্যাবকে ৪০ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ প্রদান করে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি—বায়রা সদস্যদের ওপর এই হামলার ঘটনায় দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার সিন্ডিকেট বিরোধী সাধারণ সদস্যদের পক্ষে বিবৃতিতে দিয়ে এই দাবি জানানো হয়। এতে সই করেন— সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াজ উল ইসলাম, বায়রার সিনিয়র সদস্য খন্দকার আবু আশফাক, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব-১ মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আকবর হোসেন মঞ্জু, সাবেক সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ইসি সদস্য জহিরুল হক।

বায়রা সদস্যরা এই ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

বিবৃতিতে বায়রা সদস্যরা আসন্ন মালয়েশিয়া-বাংলাদেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের শুভকামনা জানানোর পাশাপাশি মাননীয় উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের মালয়েশিয়া সফরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রস্তাবিত সিন্ডিকেটমুক্ত সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির অনুকূলে শ্রমবাজার উন্মুক্তের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠককে কেন্দ্র করে বায়রার সদস্যরা কিছু দাবি উত্থাপন করেন। এই দাবি সমূহ নিম্নরূপ।

> যে কোন দেশের শ্রমবাজারে জনশক্তি রপ্তানির পথে প্রধান বাধা সিন্ডিকেট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই নেপালের পথ অনুসরণ করে সিন্ডিকেটমুক্ত জনশক্তি রপ্তানির পরিচালনা পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে। সিন্ডিকেটকে সরাসরি না বলতে হবে যাতে তারা ভবিষ্যতে এরকম হীন কোন কর্মকান্ডে যুক্ত হতে না পারে।

> মালয়েশিয়াতে আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া পূর্বের সমঝোতা স্মারকের পৃষ্ঠা নং ২৮ এর (c) এর (v) ধারা বাতিল/সংশোধন করে অন্যান্য কান্ট্রির ন্যায় মালয়েশিয়ান সরকারের পরিবর্তে সেখানকার নিয়োগকর্তা কর্তৃক বাংলাদেশের রেকর্ডিং এজেন্সি নির্ধারণের ব্যবস্থা করতে হবে।

> মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কোন নির্ধারিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য নয় বরং সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত করতে হবে এবং স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে। বায়রার সদস্যরা মনে করেন এখনই মোক্ষম সময় ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে সৃষ্ট সিন্ডিকেটের মূলোৎপাটন করার।

> সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যাতে করে বিপ্লবী সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা অক্ষুন্ন থাকে।

বায়রার এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত করের বোঝা থেকে মুক্ত হতে চীন মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ বহুগুণে বাড়ানোর চিন্তা করছে। গত কয়েক দশকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের সবচেয়ে সুবিধাভোগী দেশগুলোর একটি হলো মালয়েশিয়া। বাণিজ্য যুদ্ধের সুবাদে মালয়েশিয়াতে চীনা মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক চাহিদা যার প্রধান যোগানদাতা হতে পারে বাংলাদেশ।

উল্লেখ্য যে, মালয়েশিয়া সরকার যে ১৪টি দেশ থেকে ১২ লক্ষ কর্মী নেবে তার মধ্যে নিয়োগকর্তাদের প্রধান পছন্দ বাংলাদেশি কর্মীরা। কিন্তু জনশক্তি খাতের কিছু পরিচিত মুখের নিয়মিত নেতিবাচক প্রচরণা, সংবাদ সম্মেলনের কারণে অন্য ১৩টি দেশ শ্রমিক প্রেরণ শুরু করলেও বাংলাদেশ পারেনি।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.