03/16/2025
Siyam Hoque | Published: 2020-04-14 02:57:24
‘ইতিহাসের শিক্ষাই এই যে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না’—বহুল ব্যবহৃত এ কথাটা মনে রেখেই ত্রাসসঞ্চারী করোনাভাইরাস পৃথিবীকে যেভাবে বুঝিয়ে দিল প্রকৃতির ওপর মানুষের অত্যাচারের ফল কী হতে পারে—কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গসহ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আন্দোলনকারী হাজার হাজার কণ্ঠের আকুতি তা পারেনি। আমরা শুধু কোটি কোটি অর্থ ব্যয় করে নিয়মিত জলবায়ু সম্মেলন করেছি, জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছি, বাস্তবায়ন হবে না জেনেও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পশ্চিমা ধনী দেশগুলোর বিলাসী জীবনের উপকরণ জোগাতে প্রকৃতিকে ধ্বংস
করেছি, বায়ুমণ্ডলকে বিষিয়ে তুলেছি। আমরা কি এখন বুঝতে পারছি যানবাহন কম চলাচল করলে বা আকাশে বিমান কম ওড়াউড়ি করলে প্রকৃতি কত সুন্দর ও নির্মল হয়ে ওঠে? সভ্যতার বিকাশ ও মানুষের ভোগ-বিলাসের জোগান দিতে আমরা প্রকৃতির ওপর অনেক অত্যাচার করেছি। সর্বংসহা ধরিত্রী এত দিন মুখ বুজে সব সহ্য করেছে। এবার যা ঘটছে তা হচ্ছে প্রকৃতির প্রতিশোধ। প্রকৃতির কাছে আমরা কত অসহায়! এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার শুধু মানুষের নয়, পশু-পাখি, গাছপালা, নদী-সমুদ্র, বন-উপবন, জীবজন্তু—সবারই সমান অধিকার আছে এ পৃথিবীতে আপন আপন নিয়মে বসবাস করার। এ সত্যটি কি আমরা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি না?
গোটা পৃথিবীর মানুষের মতো বাংলাদেশেও আমরা এখন বন্দি জীবন যাপন করছি। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এরই মধ্যে অনেকেই আমরা এমন জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছি। আমরা জানি না, কত দিন এ অবস্থা চলবে। শুধু একটাই জানি, এভাবে থাকা ছাড়া বাঁচার উপায় নেই। হতাশার মধ্যেও আমাদের আশা—এ কৃষ্ণপক্ষের অবসান একদিন হবেই।
আমাদের এখন প্রধান করণীয় গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষদের রক্ষা করা। একা সরকারের পক্ষে এ বিরাট কাজ করা সম্ভব নয়। সমাজের শক্তি কাজে লাগাতে হবে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফোনে আলাপ-আলোচনা করে নিজ নিজ এলাকায় সমন্বিত সহায়তা কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। ত্রাণ বিতরণেও নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ত্রাণ বিতরণের ছবি কাগজে বা ফেসবুকে প্রকাশের লজ্জাজনক মানসিকতা পরিহার করতে হবে। যাঁরা গোপনে মানুষকে সাহায্য করেন, তাঁদের আমি নতমস্তকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি যে কৃষি—তাকে বাঁচাতে হবে। কৃষক বাঁচলে আমরা বাঁচব—এটা যেন আমরা ভুলে না যাই। গ্রামের লাখ লাখ কৃষক ও হাঁস-মুরগি, মাছের খামারি যাতে সরকারের বিশেষ প্রণোদনা পায়, তার জন্য সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি। সেদিন একজন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ লিখেছেন, সরকারের নানা প্রণোদনা থেকে ধনীরাই আরো লাভবান হবে। এটা যেন মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
আমাদের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে এমন মানুষও আছেন, যাঁদের আশু আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। আমরা যদি নিজ নিজ সংগঠন থেকে তার তালিকা করে কেন্দ্রীয়ভাবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটকে জানাই, তবে একটা ব্যবস্থা করা যাবে। জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ এরই মধ্যে একটা তালিকা করে আসাদুজ্জামান নূরকে দিয়েছেন; তিনি ও নূর এ ব্যাপারে সমন্বয় করবেন। সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
সম্প্রতি পোশাকশিল্প মালিকরা হাজার হাজার কর্মীর সঙ্গে যে অমানবিক আচরণ করলেন তার দায় কে নেবে? কোনো সমন্বয় ছাড়াই কেন এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? শ্রমিকরা এত কষ্ট করে কারখানায় পৌঁছে দেখল, কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ওই দিন মার্চ মাসের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেত না? পোশাকশিল্প মালিকরা কি এমনই বিত্তহীন যে মাস দুই বা তিনেক তাঁরা কর্মচারীদের নিজেদের তহবিল থেকে বেতন দিতে পারেন না?
এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনীতি চালু রাখার জন্য যে প্যাকেজগুলো ঘোষণা করেছেন, তা অত্যন্ত সুবিবেচনাপ্রসূত। সেখানেও কিন্তু সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন পোশাকশিল্প মালিকরা। এ প্যাকেজের টাকা যেন শুধু কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়—তার জন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবে। দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত বলে পোশাকশিল্প মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে।
এখনকার সংকটময় সময়ের নায়করা হলেন আমাদের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী—যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সেবা করে চলেছেন। তাঁদের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার সীমা নেই।
আবারও বলি, এ সংকট একদিন কাটবেই। পৃথিবী নির্মল হবে, পাপমুক্ত হবে। নতুন বছরে বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে আমরা গাইতে চাই :
‘তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক।
এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।’
অমানিশা শেষে আবারও ভোর হবে জানি। আসবে নতুন পৃথিবী এক। নতুন সে পৃথিবীতেও মানুষ ঠিকই হেসে-খেলে-নেচে-গেয়ে উদ্যাপন করবে জীবনের জয়গান।
নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81