14225

05/10/2025

পবিপ্রবিতে রমরমা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2020-11-21 13:18:44

করোনা মহামারির কারণে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ। সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব নিয়োগ কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। ব্যতিক্রম পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন অর রশিদের অবসরের সময় ঘনিয়ে আসায় তড়িঘড়ি করে এই নিয়োগ তৎপরতা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে পবিপ্রবিতে পদোন্নতি ও পদায়নের কার্যক্রম চলছে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে। পবিপ্রবি থেকে একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পবিপ্রবি সূত্র বলছে, প্রফেসর স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পবিপ্রবির রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তবে ভিসি ড. হারুন অবসরে যাওয়ার আগে রেজিস্ট্রারের শূন্য পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে ব্যাপক অনিয়মরে মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ১৮ নভেম্বর পবিপ্রবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি ও পদায়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলতি নিয়োগ বোর্ডেই নতুন নিয়োগ কার্যক্রমও সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। সূত্রমতে, নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম চলবে আগামী মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত।

সূত্র বলছে, ২০১৮ সালে দেবাশীষ মন্ডল হত্যাকাণ্ডের ঘটনা 'দক্ষতার' সঙ্গে ধামাচাপা দেয়ার পুরস্কার হিসেবে রেজিস্ট্রার অফিসের শীর্ষ এক কর্মকর্তার পুত্রকে এবার সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সেই নিয়োগের প্রাথমিক সব ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু নিয়োগের আনুষ্ঠানিকতা বাকি।

অপরদিকে, মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে নতুন রেজিস্ট্রার হিসেবে দুর্নীতিবাজ এক ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে তথ্য মিলেছে। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ রয়েছে, যা তদন্তাধীন। গত ৩ আগস্ট দুদকের প্রধান কার্যালয়ে লিখিত ওই অভিযোগে দেয়া হয়েছে।

অভিযোগে গত ৪ বছরে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎসহ প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্নভাবে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ডেপুটি রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বর্তমান উপাচার্যের ঘনিষ্ঠতার কথাও বলা হয়েছে।

সূত্রমতে, ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন অর রশিদের পরিবারের এক সদস্য জড়িত। যদিও উপাচার্য এসব অভিযোগ নাকোচ করে দিয়েছেন।

এদিকে, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে পবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির প্রভাবশালী এক নেতার স্ত্রীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার তৎপরতা চলছে। সহকারী অধ্যাপক পদে তাকে নিয়োগ দিতে এরই মধ্যে ওই নেতার স্ত্রীকে ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়া হয়েছে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই ডিগ্রি বাগিয়ে নেয়ার পেছনে প্রভাব বিস্তারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে। 

একই প্রক্রিয়ায় প্রো-ভিসি'র মেয়েকে হার্টি কালচার বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে প্রো-ভিসি মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ডেপুটি রেজিস্ট্রার থেকে চিহ্নিত ওই দুর্নীতিবাজ রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন এমন খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৎ ও ন্যায় পরায়ন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ ধরনের ব্যক্তিকে নিয়োগ না দিতে নিয়োগ বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন বলেও জানা গেছে। এ বিষয়ে কথা বলতে ওই ডেপুটি রেজিস্ট্রারের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

সূত্রমতে, উপাচার্যের বিদায়ের আগে পবিপ্রবিতে উল্লেখিত পদগুলোসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে ঘুষ বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ হচ্ছে।

গত অক্টোবরের শেষ দিকে সেই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ৪ ধাপে প্রকাশিত এসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে আবেদনের সময় ছিল ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। এর দুদিন পরই নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হয়েছে পবিপ্রবিতে।

চলতি নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম আগামী ডিসেম্বরের ১২ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সভায় অনুমোদন দেয়ার কথা রয়েছে। নতুন নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন পাওয়াদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে রিজেন্ট বোর্ডের ওই সভায়।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81