03/18/2025
নিজস্ব প্রতিবেদক | Published: 2021-06-06 19:52:56
FT রিপোর্ট : লক্ষ্য মাত্রা ছাড়ালো মধ্যপাড়া খনির পাথর উত্তোলন প্রকল্পের উত্তোলনে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ‘জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)’। নানা সীমাবদ্ধতা এবং আইনি জটিলতা পেরিয়ে লাভের মুখ দেখেছে প্রকল্পটি। অবদান রাখতে শুরু করেছে রাজস্ব খাতে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে আবিষ্কৃত হয় খনিটি। আবিষ্কারের ৪৮ বছরের মাথায় কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রার দিকে যাত্রা শুরু করে খনিপ্রকল্প।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সত্তরের দশকে দিনাজপুরের মধ্যপাড়ায় আবিষ্কৃত হয় কঠিন শিলার এখনি। বঙ্গবন্ধুর নির্র্দেশনায় বাংলাদেশ জরিপ অধিদফতর (জিএসবি) ১৯৭৩ সালে ওই স্থানে ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করে। ওই জরিপে ১২৮ মিটার গভীরতায় আবিষ্কৃত হয় কঠিনশিলা। ১৯৭৫ সালের পরবর্তী সরকার প্রাকৃতিক সম্পদের বিরাট এই সম্ভাবনাকে মাথায় নেয়নি। বৈদেশিক যোগাযোগহীনতা এবং প্রযুক্তিগত পশ্চাদপদতার কারণে ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায়নি। ১৯৯৪ সালের ২৭ মার্চ পাথর খনি উন্নয়নে উত্তর কোরিয়ার‘সাউথ কো অপারেশন (নামনাম)’র সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করে তৎকালিন সরকার। কিন্তু চুক্তি হলেও পাথর উত্তোলনে কয়েক দফা উত্তোলন ব্যয় বৃদ্ধি করে প্রতিষ্ঠানটি। মুখ থুবড়ে পড়ে উত্তোলন প্রকল্প। এক পর্যায়ে ২০০৭ সালে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পাথর উত্তোলনের চেষ্টাচালায় সরকার। কিন্তু খনির রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচর্যানা থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে পাথর উত্তোলন। প্রকল্পটি ছিলো বাণিজ্যিক। এ সময় প্রতি শিফটে পাথর উত্তোলন ছিলো ৩ থেকে ৪শ’ মেট্টিকটন। এতে দ্রুতই লোকসানের মুখে পতিত হয় প্রকল্পটি। কয়েকশ’ কোটি টাকা লোকসানের দায় মাথায় চাপে। সম্পূর্ণরূপে বন্ধের উপক্রম হয়।অব্যহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে অচল হয়ে পড়ে যন্ত্রপাতি।
সূত্রমতে, বর্তমান সরকার দায়িত্বে এসে কঠিন শিলাপ্রকল্পকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়। লোকসানবন্ধে খনিব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন, উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং পরিষেবা প্রদানে শরণাপন্ন হয় অভিজ্ঞ কোনোপ্রতিষ্ঠানের। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে ‘মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি (এমজিএমসিএল)’ এবং জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান‘ জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)’র মধ্যে চুক্তি হয়। ৬ বছর মেয়াদি চুক্তির ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাথর উত্তোলন শুরু হয় ২০১৪ সালে। কিন্তু বিপত্তি হয়ে দাঁড়ায় এমজিএমসিএল’র পুরাতন যন্ত্রপাতি। অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি, উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালনায় ড্রইং ডিজাইন অনুমোদনে লেগে যায় দু’বছর। এতে তিন বছর নিরবচ্ছিন্ন পাথর উত্তোলন কার্যক্রম ব্যহত হয়। এদিকে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয় আইনগত জটিলতা। বিষয়টি আন্তর্জাতিক আর্বিট্টেশনে ওঠে। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের নেতৃত্বে গঠন করা হয় তিন সদস্যের আর্বিট্টেশন বোর্ড। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান এবং আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী এ বোর্ডের অপর দুইসদস্য। বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী এমজিএমসিএল এবং জিটিসি’র মধ্যকার চুক্তির মেয়াদ ১ বছর বাড়ানো হয়। সাধারণত: চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় উৎপাদন ব্যয়। কিন্তু মধ্যপাড়া কঠিনশিলা প্রকল্পে উৎপাদনের সাত বছরেও উত্তোলন ব্যয় বাড়েনি। বিগত সময়ের ঘাটতি পোষাতে এখন কাজ চলছে তিন শিফটে। চুক্তি মতো তিন শিফটে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো সাড়ে ৫ হাজার মেট্টিকটন পাথর। কিন্তু এখন তিনশিফটে ৬ হাজার মেট্টিকটন পাথর উত্তোলন হচ্ছে। শতাধিক বিদেশী খনিবিশেষজ্ঞ, অর্ধশত দেশীয় প্রকৌশলী এবং সাড়ে ৭শ’ দক্ষ খনিশ্রমিকের শ্রম-ঘামেছাড়িয়ে যায় চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা। রেকর্ডপরিমাণ পাথর উত্তোলন হওয়ায় ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে প্রথম লাভেরমুখ দেখে সরকার। ওই বছর ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা মুনাফা হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরও ২২ কোটি টাকা মুনাফা অর্জনের মধ্য দিয়ে লাভেরধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখে। চলমান অর্থবছরেও এই ধারাবাহিকতা থাকবে-মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এমজিএমসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবু দাউদ মুহম্মদ ফরিদুজ্জামান।
এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে চলমান করোনা মহামারির মধ্যে দেশের অন্যান্য খনিপ্রকল্পগুলো জনবল অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। পক্ষান্তরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মধ্যপাড়া পাথর খনির উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়েছে। বর্ধিত চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার তিনমাস আগেই আরও দু’টি স্টোপ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। পাথরউত্তোলন হয়েছে ১ দশমিক ১ মিলিয়নটন পাথর। এ হিসেবে অন্তত: ২০ শতাংশ বেশি পাথর উৎপাদন হয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, মধ্যপাড়া কঠিন্ শিলাপ্রকল্প থেকে শিলা উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানটি (জিটিসি) ভালো করছে। তাদের পারফর্মেন্স পর্যবেক্ষণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করছি তারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখতে সচেষ্ট থাকবে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81