03/19/2025
নিজস্ব প্রতিবেদক | Published: 2022-11-07 21:02:04
চট্টগ্রাম ষোলশহর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে একটি মাঝারি আকারের কনফেকশনারি (দোকান)। সেই দোকানে ক্যাশিয়ার হিসেবে যিনি আছেন, তিনি এক বছর আগেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা ছিলেন।
রোহিঙ্গা এনআইডি জালিয়াতি, কক্সবাজারের বড় বড় প্রকল্পের দুর্নীতিসহ চাঞ্চল্যকর তথ্য বের করে এনেছিলেন তিনি। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছিলেন। পরে রাঘববোয়ালের রোষানলে পড়ে চাকরি হারানোর গল্পটা তো সবারই জানা। কোথাও চাকরি না পেয়ে সেই শরীফ উদ্দিন এখন ভাইয়ের দোকান সামলাচ্ছেন।
গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ষোলশহর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখা যায়, দোকানে ব্যস্ত শরীফ। কর্মচারীরা খরিদ্দার সামলাচ্ছেন, সেদিকে চোখ রাখতে হচ্ছে। আবার পণ্যের দাম নেওয়া, টাকাপয়সার হিসাব রাখতে হচ্ছে।
কেমন আছেন জানতে চাইলে ধীরে ধীরে কথা বলা শুরু করেন শরীফ। সংসার-ভবিষ্যতের কথা বলতে গিয়ে একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।
শরীফ বলেন, ‘দেখেন ভাই, আমার বউ-বাচ্চা আছে। মা অনেক দিন ধরে অসুস্থ। আমিও অসুস্থ। গত ৯ মাস আমার চাকরি নেই। দুর্নীতি যদি করতাম, তাহলে বসে বসে খেতে পারতাম। যেদিন থেকে বেতন বন্ধ, ওই দিন থেকে সংসারে টান পড়েছে। চাকরির জন্য সবার কাছে গেছি, বিডিজবসে আবেদন করেছি। কিন্তু দুদক সবখানে বলে দেওয়ায় কোথাও চাকরি হয়নি। তাই ভাইয়ের এই দোকানের ক্যাশে বসে সংসার সামলাচ্ছি।’
উপসহকারী পরিচালক হিসেবে শরীফ উদ্দিন প্রায় সাড়ে তিন বছর দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। সে সময় এনআইডি সার্ভার ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি ভোটার করার অভিযোগে ২০২১ সালের জুনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একজন পরিচালক, ৬ কর্মীসহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেন। এ মামলার পরপর ওই বছরের ১৬ জুন তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। এর আট মাসের মাথায় চাকরি থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।
শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘আমার কাজে খুশি হয়ে কয়েকবার সেরা কর্মকর্তার পুরস্কারও দেওয়া হয়। আমি সেসব বিষয় তদন্ত করেছি, যেগুলো দুদকের ঊর্ধ্বতনেরা আমাকে তদন্তের জন্য দিয়েছেন। তাঁরা আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছেন, তাই শত বাধার মধ্যেও তদন্তে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়েছি।’
শরীফ ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইয়াবা চোরাকারবারি, রোহিঙ্গা, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এক ডজনের বেশি মামলা করেছিলেন।
সেগুলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তদন্তের সময় বা মামলা করার পর আমাকে একটিবারও বলা হয়নি যে আমার এসব কাজ ভুল হয়েছে। মামলা করার আগে দুদকের অনুমোদন লাগত, তারাই তো মামলা করার অনুমতি দিয়েছে।’
চাকরি হারানোর খবর যেদিন পেয়েছেন, ওই দিন ওয়াশরুমে ঢুকে দেড় ঘণ্টা কেঁদেছেন শরীফ। ‘এতটাই ইমোশনাল হয়ে গেছিলাম, মনে করেছিলাম মারাই যাব। মনে মনে বলতাম, হায় হায়! দেশের জন্য কাজ করে, এক টাকাও দুর্নীতির আশ্রয় না নিয়েও আমার চাকরিটা চলে গেল।’
চাকরি যাওয়ার আগে দুর্নীতিবাজেরা ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছিল বলে জানান শরীফ। তিনি বলেন, ফেসবুকে তাঁরা লিখেছিলেন, ‘শরীফ তোর আর সময় নেই। জেলের ভাত খাওয়াব, চাকরিটাও খাব।’ সেসব ফেসবুক স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েও লাভ হয়নি বলে দাবি করেন শরীফ।
শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘আমি এখনো আশায় আছি চাকরিটা ফিরে পাব। কারণ, আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। গত ৯ মাস মানবেতর জীবন যাপন করছি। সবখানে চাকরির জন্য গিয়েছি, কিন্তু কেউ চাকরি দেয়নি। এমন অবস্থায় আমার ভাই বলল, আলাদা করে দোকানে ক্যাশিয়ার রাখার দরকার কী? তুমি দোকানে সময় দাও। সেই থেকে এখন পর্যন্ত দোকানেই সময় দিচ্ছি।’
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81