03/20/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2023-07-04 00:33:06
প্রকল্পে অনিয়ম বা দুর্নীতি বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দেশের অধিকাংশ খাতের প্রকল্পেই কম বেশি দুর্নীতি হয়ে থাকে। তবে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির পরিমাণটা বেশি। করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য খাতের নানা দুর্নীতির বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
২৬৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার ২৭টি অডিট আপত্তি, আরপিও বিধান লঙ্ঘন, বৈদেশিক ঋণের অপচয়, টেস্ট রিপোর্ট পাওয়ার আগেই জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী গ্রহণ ও বিতরণসহ নানা অনিয়ম করা হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ফ্যামিলি প্ল্যানিং ফিল্ড সার্ভিসেস ডেলিভারি অপারেশনাল প্ল্যানে।
সম্প্রতি প্রকাশিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আইএমইডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ১৪৪৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির আওতায় ফ্যামিলি প্ল্যানিং ফিল্ড সার্ভিসেস ডেলিভারি অপারেশনাল প্ল্যান গ্রহণ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। পাঁচ বছর মেয়াদি এই অপারেশন প্ল্যানটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুনে। কিন্তু অগ্রগতি হতাশাব্যঞ্জক হওয়ায় এটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয় এবং ব্যয় ৮১৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয় ২২৬২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই মেয়াদেও লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এজন্য খরচ না বাড়িয়ে ওপি’র মেয়াদ আবারো বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপারেশন প্ল্যানের ক্ষেত্রে ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রতি অর্থবছর শেষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফরেন এইডেড প্রজেক্টস অডিট ডিরেক্টরেট (এফএপিএডি) কর্তৃক অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। অডিটসমূহে বেশকিছু অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। যেমন: ৫ বছরে মোট ২৬৮ কোটি ৮৩ লাখ ৯ হাজার ১৮ টাকার ২৭টি অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। উল্লেখিত অডিট আপত্তিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আরওপি’র বিধান লঙ্ঘন, চাহিদা মূল্যায়ন না করে অতিরিক্ত সামগ্রী ক্রয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক ঋণ সহায়তার অপচয়, টেস্ট রিপোর্ট পাওয়ার পূর্বে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী গ্রহণ ও বিতরণ, পিপিএ-২০০৬ এবং পিপিআর-২০০৮-এর বিধি লঙ্ঘন করে ক্রয় কার্য সম্পাদন ইত্যাদির ব্যত্যয় হয়েছে। বিপুল পরিমাণ স্টক থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ক্রয়ের ফলে বিপুল পরিমাণ খাবার বড়ি, ইনজেক্টটেবল আইটেম ব্যবহারের পূর্বেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে।
প্রকৃত চাহিদা নিরুপণ না করে ক্রয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করায়/ক্রয়কাজ সম্পন্ন করায় বৈদেশিক ঋণ সহায়তার একটি বড় অংশের অপচয় হয়েছে।
ফ্যামিলি প্ল্যানিং ফিল্ড সার্ভিসেস ডেলিভারি অপারেশনাল প্ল্যানের অগ্রগতি হতাশাব্যঞ্জক জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপারেশনাল প্ল্যানের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ২২৬২ কোটি ৮০ লাখ টাকার বিপরীতে এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ১৪২৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি ৬৩ দশমিক ০১ শতাংশ। প্রকল্পের মূল কার্যক্রম জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ক্রয় এবং বিতরণের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হতাশাব্যঞ্জক। অপারেশন প্ল্যানের (ওপি) মেয়াদকাল বাকি আছে ১ বছর ২ মাস, কিন্তু এই খাতে প্রকৃত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫৯ দশমিক ১২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি না হওয়া, মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের ঘাটতি, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী, ওষুধ এবং সার্জিক্যাল উপকরণের মান এবং মেয়াদ অনুযায়ী সরবরাহ করতে না পারা অপারেশন প্ল্যানের (ওপি) অন্যতম দুর্বলতা। জনবল সংকটের কারণে পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মীদের বাড়ি বাড়ি ভিজিটের
চিত্র খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। যেমন, উত্তরদাতাদের এক-চতুর্থাংশ বলেছেন যে গত ৩ মাসে কোনো পরিবার পরিকল্পনা কর্মী পরামর্শ প্রদানের জন্য তাদের বাড়িতে এসেছিলেন। একইভাবে, মাত্র ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা গত ৩ মাসে সেবা গ্রহণের জন্য কোনো স্যাটেলাইট ক্লিনিক ভিজিট করেছেন এবং মাত্র ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা পরিবার পরিকল্পনা কর্মীর ডাকা কোনো উঠান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলায় কর্মরত অনেক পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের মতে, ওপি’র আওতায় দুর্গম এলাকায় পরিবার পরিকল্পনা সম্প্রসারণের জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। একইভাবে নববিবাহিত দম্পতিদের উদ্বুদ্ধকরণের জন্য গৃহীত কার্যক্রমও নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় না।
অনিয়ম ও অডিট আপত্তির বিষয়ে জানতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একাধিক উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও সবাই কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, অডিটে যতটুকু ধরা পড়েছে এর চেয়ে বেশি অনিয়ম হতে পারে বলে আমার ধারণা। তবে বিষয়টি চিহ্নিত হয়েছে এটি একটি ভালো দিক। এখন তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শাস্তি প্রদান করতে হবে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81