03/20/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2023-09-21 21:10:20
প্রানীসম্পদ অধিদপ্তরে ছাগলের জন্য পেস্টেডেস পেটিস রুমিনান্টস (পিপিআর) কেনা কাটায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শর্ত লংঘন করে নিম্নমানের ভ্যাকসিন ক্রয় এবং অনভিজ্ঞ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেনা হয়েছে সাড়ে ২৫ কোটি টাকার ভ্যাকসিন। নেপালের যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভ্যাকসিন আনা হয়েছে তাদেরও মান সম্পন্ন ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল না। এমনকি নমুনা পরীক্ষার এক মাস আগেই ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের পিডি এবং অধিদপ্তরের পরিচালক কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানা গেছে, ছাগলের পিপিআর একটি ভাইরাল রোগ। রাইন্ডারপেস্ট নামক এক ধরনের ভাইরাসের থেকে ছাগল, ভেড়া, দুম্বা জাতীয় গৃহপালিত পশুকে আক্রমণ করেন। এই ভাইরাস আক্রান্ত ৭৫ শতাংশ ছাগল মারা যায়।
বাংলাদেশে প্রতিবছর পিপিআর ভাইরাসে বিপুল সংখ্যক ছাগল, ভেড়া মারা যায়। গৃহপালিত পশুর এই প্রাণঘাতি রোগ প্রতিরোধে প্রতিবছর পিপিআর ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। অন্যদিকে প্রানীসম্পদ অধিদপ্তর পিপিআর রোগ নির্মূল ও ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের মাধ্যমে এসব ভ্যাকসিন ক্রয় করে থাকে। এই প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ডা. অমর জ্যোতি চাকমা।
গত বছরের ১০ নভেম্বর দেশের ৬৪ জেলায় ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্রে শর্ত ছিল তিন বছরের মধ্যে কমপক্ষে দুই বারে ৩০ কোটি টাকা বা তারও বেশি মূল্যের ভ্যাকসিন বা ওষুধ সফলতার সঙ্গে সরবরাহ করেছে এমন প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিতে পারবে।
প্রকল্প পরিচালক কৌশলে তার পছন্দের ৪টি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেন। কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা না থাকায় ননরেসপন্সিভ করে পুন:রায় দরপত্র ডাকা হয়। পুন:রায় ডাকা দরপত্রের পিডি তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান মের্সার্স টেকনো ড্রাগসকে কাজ দিতে শর্ত পরিবর্তন করে নেন। টেকনো ড্রাগস নামক প্রতিষ্ঠানের দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ভ্যাটেরিনারি ওষুধ বা ভ্যাকসিন সরবরাহের অভিজ্ঞতা ছিল না। তারা যেহেতু ফার্মাসিউটিক্যালস আইটেম (কনডম ও মায়াবড়ি) সরবরাহকারী। তাই দ্বিতীয় দরপত্রে ফার্মাসিটিক্যালস আইটেম সরবাহের অভিজ্ঞতার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এছাড়া প্রথম দরপত্রে ৩ বছরে ৩০ কোটি টাকার ভ্যাকসিকন ও ভেটিরিনারি মেডিসিন সরবরাহের অভিজ্ঞতার শর্ত দ্বিতীয় দরপত্রে রাখা হয়নি। কারন টেকনো ড্রাগসের সেরকম কোন অভিজ্ঞতা ছিল না।
দরপত্রে শর্ত ছিল ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বছরে ন্যুন্যতম চাহিদাকৃত ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা থাকতে হবে। কিন্তু টেকনো ড্রাগস নেপালের হোস্টার নামক যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পিপিআর ভ্যাকসিন আমদানী করে তাদের সেই পরিমান সক্ষমতা ছিল না।
জালিয়াতির উদ্দেশ্যে প্রকল্প পরিচালক প্রথম বারে আড়াই লাখ ডোজ এবং দ্বিতীয় দফায় আড়াই লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করার বিষয়টি যুক্ত করে দেন। এছাড়া দরপত্রের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী হোস্টার কোম্পানীর ভ্যাকসিনের গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। নেপালের হোস্টার কোম্পানী নামের প্রতিষ্ঠানটির ফ্রিসেল সনদ থাকা জরুরী ছিল কিন্তু তাদের সেই সনদ ছিল না।
দরপত্রে পিপিআর ভ্যাকসিন জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি ও কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক সেটা না করে বিভাগীয় ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করান। সেখানে প্রভাব খাটিয়ে নমুনা অনুমোদন করানোর মাধ্যমে কার্যাদেশ দেন। দরপত্রে উল্লেখিত পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা না করেই প্রথম দফায় সরবাহ করা আড়াই কোটি ভ্যাকসিনের বিল ঠিকাদারকে পরিশোধ করেছেন।
এছাড়া টেকনো ড্রাগের সরবরাহ করা ভ্যাকসিন যথাযথ বা কার্যকর কিনা সেটা ছাগলের শরীরে পুশ রিপোর্ট নিতে হবে। পুশ রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ডিবির অনুরোধে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গত ১৩ আগস্ট সাভারে সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারের কর্মকর্তাকে চিঠি দেন।
সেই প্রেক্ষিতে সাভারের সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারের প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবুল কালাম আজাদ গত ২০ আগস্ট একটি প্রতিবেদন পাঠান। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামার কর্তৃপক্ষের পুশ প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা। কিন্তু প্রকল্পের পরিচালকসহ অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতিবেদন পাওয়ার এক মাস আগেই বিল পরিশোধ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাগলের পিপিআর রোগ নির্মূলের জন্য প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের সংগ্রহ করা ভ্যাকসিন দরপত্রের শর্ত অনুসারে জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি ও কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা নিম্নমানের ভ্যাকসিন সরবরাহের প্রমাণ পাওয়া যাবে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81