03/20/2025
অনুসন্ধানী প্রতিবেদক: | Published: 2023-10-10 15:54:30
# শতাধিক কোটিপতি রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ অধিদপ্তরে
# বেপরোয়া শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন
# একাধিক ইউনিয়ন নেতাদের ও রয়েছে ১০-৫০ কোটি টাকার সম্পদ
# বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্প পরিচালকদের রয়েছে শতকোটি টাকার সম্পদ ।
নাম বেনামে দেশ ও দেশের বাহিরে পাচার
# একাধিক কর্মকর্তা মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের সাংসদের নাম ভাঙ্গিয়ে
নিয়ন্ত্রণ করছে বিআইডব্লিউটিএ
“দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ কঠোর বাক্যটি যে প্রতিষ্ঠানে অচল মুদ্রার মত তা হলো বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ-অধিদপ্তর। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের রন্ধে রন্ধে দুর্নীতি সংগঠিত হয় । দেশের দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নির্মূলে যে সংস্থাটি কাজ করে যাচ্ছে তার নাম দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতি অনুসন্ধান চালাছে কচ্ছপ গতিতে । এর পিছনে প্রধান কারন অনুসন্ধানে দেখা গেছে শত শত কোটি টাকার প্রকল্পে কোটি টাকার দুর্নীতি হয় তাই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের হাতে অগাধ টাকা থাকার ফলে তাদের হাত ও অনেক বড় প্রসারিত। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে ও বিআইডব্লিউটিএর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়েরের পরেও তা আলোর মুখ দেখেনি এ নিয়ে রয়েছে মুখরোচক সমালোচনা ও ধুম্রজাল । গোয়েন্দা ডায়রির অনুসন্ধানী টিম দীর্ঘ দিন এ নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়েছে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ অধিদপ্তরের শতাধিক কোটিপতির তালিকা । এর মধ্যে অনেকের নামে বেনামে রয়েছে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। এদের অবৈধ সম্পদ দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশে ও বিনিয়োগ রয়েছে। উক্ত তালিকার ট্রেড ইউনিয়ন নেতা থেকে শুরু করে রয়েছে মন্ত্রনালয়ের একজন কর্মকর্তা পর্যন্ত । দুর্নীতির ডালপালা এতই বেশী ভারী যে দুদক ও ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করেছে। প্রায় শতাধিক কর্মকর্তার আমলনামা ও অবৈধ সম্পদের তালিকা আমাদের হাতে রয়েছে।
ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ অধিদপ্তরের কয়েক ডজন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ দাখিল করার পরেও তার কোন দৃশ্যমান তদন্তের অগ্রগতি গণমাধ্যমের নজরে আসেনি। দু’চারটি অভিযোগে মামলা হলেও উক্ত কর্মকর্তারা রয়েছে বহাল তবিয়তে । আদালতে মামলা চলাকালীন সময়ে ও তাদের পদোন্নতি ও থেমে থাকেনি , পুরোদমে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছে একই সময় যে অভিযোগে তাহারা দুদকের মামলায় আদালতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঠিক সেই একই কাজ গুলো অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছে পুরোদমে । বিচিত্র এক সেলুকাস! বিআইডব্লিউটিএ । ট্রুথ কমিশনের কাছে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি ও জরিমানা দেওয়ার পরে তাদের দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমান করার আর কোন বিধান আছে কিনা তা জানা না থাকলেও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে তা ঘটেছে। পুরো অধিদপ্তর দাবিয়ে বেড়িয়ে দুহাতে টাকা কামাচ্ছে আর তা খরচ করছে আদালত ও আইনজীবির পিছনে।
৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মকর্তাদের সংগঠন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এর কর্মকর্তারা নিয়োগ, বদলী, টেন্ডার, কেনাকাটা, ইজারা , নৌ ও গাড়ী ভাড়া এমন কোন বাণিজ্য নেই যে তাহারা করে না। একেকজন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নেতা ৫০ কোটি থেকে শত কোটি টাকার মালিক। এত টাকার উৎস কি? তাদের আত্নীয় স্বজন এমনকি আপনজনদের ও জানা নেই। তাদের অবৈধ সম্পদের উৎস সম্পর্কে ।
নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ড্রেজিং, প্রকৌশল, প্রশাসন ও মানব সম্পদ, পরিকল্পনা, ও সংরক্ষন , নৌ সংরক্ষন ও পরিচালন, বন্দর ও পরিবহন, ল্যান্ড এন্ড এস্টেট , যান্ত্রিক ও নৌপ্রকৌশল, হাইড্রোগ্রাফি, অর্থ ও নিরিক্ষা, প্রতিটি বিভাগের কর্মকর্তাদের দুর্নীতিবাজ নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ কেন বিআইডব্লিউ ও নৌ অধিদপ্তরে অচল? । অনুসন্ধানে নেমে দেখা গেছে মন্ত্রনালয়ের একজন কর্মকর্তা তিনি সমস্ত বিআইডব্লিউটিএ লুটে পুটে খাচ্ছে। তিনি এতই ক্ষমতাধর যে অফিস শেষে তিনি নিয়মিত বিআইডব্লিউটিএ তে আসেন। সমস্ত কাজেই তিনি তদারকি করেন ও ভাগ বসান। তার প্রশ্রয়েই কর্মকর্তারা এতো বেপরোয়া । কারন তিনি মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে চলেন। তার ভয়ে কেউ মুখ পর্যন্ত খুলে না।
বিআইডব্লিউটিএ সবচেয়ে বড় প্রকল্প বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে “চট্রগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ ও সংযুক্ত নৌ পথ খনন এবং টার্মিনাল সহ আনুসঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মান “প্রকল্প। উক্ত প্রকল্পের পরিচালক শত কোটি টাকার মালিক। তিনি দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের মাগুরার একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের আত্নীয় বলে পরিচয় দেন এবং তার নামে ভাঙ্গিয়ে চলেন যতদুর খোঁজ নিয়ে জানা ঐ সংসদ সদস্য কোন অন্যায় কে প্রশ্রয় দেয় না । তার প্রভাবেই তিনি অনেকটা বেপরোয়া । কাউকে পরোয়া করেন না।
নৌ অধিদপ্তরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা দুর্নীতির দায়ে দুদকের ট্রা্প এ ধরা পড়ে মামলা মোকাবেলা করছে। এ ছাড়া ও একাধিক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত তাদের নামে দুদকের অনুসন্ধান চলমান আছে। উক্ত কর্মকর্তা বর্তমানে নৌ অধিদপ্তরের আধিপত্য বিস্তার করেছে । তিনি বিশেষ একটি জেলার লোক হওয়ার কারনে ধরা কে সরা জ্ঞান করেছে উক্ত কর্মকর্তার ফাইল নিয়ে দুদক সাপ-লুডু খেলা খেলছে । তার শত কোটি অবৈধ সম্পদের তালিকা আমাদের হাতে এসেছে । তিনি চট্রগ্রাম থাকা কালীন একক আধিপত্য চালিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ অধিদপ্তরে ক্ষমতাধর একজন ঠিকাদারের অতি স্নেহাধন্য তিনি । তার ক্ষেত্রে ও দুদক অতি নমনীয় । ঢাকা বদলী হয়ে এসে পুরো অধিদপ্তরকে কবজা করতে উঠে পড়ে লেগেছে । একটি প্রকল্পকে তার হাতের মুঠোয় নেওয়ার জন্য তিনি চেষ্টা করছে। বিআইডব্লিউটিএ যত টেন্ডার তার সিংহভাগ কাজ করে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট । উক্ত সিন্ডিকেট এর প্রভাব দুর্নীতি দমন কমিশন এতটা নমনীয় কিনা তা নিয়ে চলছে কানঘুষা ।
এ ছাড়া ও বিআইডব্লিউটি এর কয়েকজন উধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছে যাহারা যখন যে চেয়ারম্যান আসে তাকে ভুল পথে পরিচালনা করে থাকে । নৌ-বাহিনী থেকে আসা চেয়ারম্যান বিব্রতকর অবস্থায় মধ্যে পড়ে । জনমনে প্রশ্ন বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ অধিদপ্তরের এর প্রতি দুদকের সহনশীলতার পিছনে এমন কি রহস্য লুকিয়ে আছে? আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আজ প্রকাশিত হলো ১২ আউলিয়ার ফাইল কেন ধামাচাপা পড়ে আছে।
কেস স্টাডি -১
বিআইডব্লিউটিএ ১২ আউলিয়ার নামে মামলা করার আবেদনের পরেও তা কেন আলোর মুখ দেখেনি ?
বিআইডব্লিউটিএ'র সাবেক পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন বিভাগ) কাজী ওয়াকিল নওয়াজ। আপাত: ভদ্র, বিনয়ী, সুবেশী, শ্মশ্রুমন্ডিত অবয়বের নিপাট ভদ্রলোক। ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআইডব্লিউটিএ)র এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার নাম। বর্তমানে তিনি পরিচালক (প্রশাসন) পদে কর্মরত। তিনি এতোটাই প্রভাবশালী যে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)ও তার বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়ে থমকে যায়। এক নজিরবিহীন ইতিহাসের জন্ম দিয়ে সংস্থাটি তীব্র সমালোচনা সহ্যেরও ঝুঁকি নেয়। বিকিয়ে দেয় ১৮ বছরের অর্জন। মামলার অনুমোদন দিয়েও দায়ের করেনি মামলা। দুর্নীতি বিরোধী একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা দুদকের এমন ইতিহাসের যাত্রাও শুরু সম্ভবত: কাজী ওয়াকিল নওয়াজদের সুরক্ষা প্রদানের মধ্য দিয়েই।
সরকারি পন্টুন বিক্রি, নিয়োগ বাণিজ্য, নামমাত্র মূল্যে ইজারা প্রদান, ড্রেজিং প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মতো জাজ্জল্যমান দুর্নীতি অফিসিয়ালি ধামাচাপা দেয়ার ঘটনাও সম্ভবত: এটিই প্রথম। মামলার অনুমোদন হয়েছে গতবছরের ২০ সেপ্টেম্বর। ১২ মাস অতিবাহিত হলেও সেই মামলা আজও আলোর মুখ দেখেনি। মামলাটি আদৌ রুজু হবে কি না-এ নিয়েও দেখা দিয়েছে গভীর সন্দেহ। কারণ, আলোচিত এই মামলার পেছনে রয়েছে দুর্নীতিবাজদের এক অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট অর্থ ঢালছে দুদক কর্মকর্তাদের পেছনে। রয়েছে হেভিওয়েট মন্ত্রী ও আমলাদের তদবির।
জানা গেছে, অনুমোদন দিয়েও শেষ পর্যন্ত মামলা না করার পেছনের কারণ শুধুমাত্র সশস্ত্রবাহিনীর একজন পদস্থ কর্মকর্তাকে বাঁচানোই নয়। তাকে সুরক্ষা দেয়ার আড়ালে বিআইডব্লিটিএ’র শত শত কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ধামাচাপা দেয়া। যার নেপথ্যে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ১২ কর্মকর্তা। সব দায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সদ্য বিদায়ী কমোডর গোলাম সাদেকের ঘাড়ে চাপিয়ে যা কি না ‘বিআইডব্লিউটিএ’র ১২ আউলিয়া’ খ্যাত দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আড়ালের প্রয়াস মাত্র।
প্রতিষ্ঠানটির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশন মাত্র পৌনে ৭ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণাদি পেয়েছে। এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে ঘাট ইজারা বাবদ। এটি শুধু একটি দিক। কিন্তু বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতি রয়েছে বহুমাত্রিক। নদী খনন প্রকল্প, শত শত কর্মী নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে বিক্রি করে দেয়া, নৌ-যান পরিদর্শন, নৌ-যানকে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে রয়েছে বিশাল বিশাল দুর্নীতি। বিআইডব্লিউটিএ’র প্রতিটি টেবিলে, প্রতিটি অফিসে রন্দ্রে রন্দ্রে রয়েছে দুর্নীতি। দুর্নীতির এই তথ্য যাতে সংবাদ শিরোনাম না হয় সে লক্ষ্যে সাংবাদিকদের তথ্য প্রাপ্তিকে কঠিন করে তোলা হয়েছে। দুর্নীতি আড়াল করতে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান কার্যালয়কে পরিণত করা হয়েছে দুর্নীতির দুর্গে। দুদক মাঝে-মধ্যে হানা দিয়ে দু’য়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করলেও বড় দুর্নীতিবাজদের টিকিটিও স্পর্শ করে না। ফলে দুদকের প্রতি বিআইডব্লিউটিএ’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ভ্রুক্ষেপহীন। টাকা দিলে দুদকে সব সম্ভব-এমন একটি ‘মিথ’ সৃষ্টি হয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র দফতরে। কারণ, ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থগত দ্বন্দ্বে কোনো একটি পক্ষের হয়ে দুদককে প্রায়ই ‘ফাঁদ মামলা’র নামে টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতারের নাটক মঞ্চস্থ করতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএ’র দুর্নীতির লাগাম টানা হচ্ছে না। বরং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা তাদের প্রয়োজনে দুদককে ইচ্ছে মতো ব্যবহার করছেন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে অর্থের বিনিময়ে ভাড়া খাটছেন দুদক কর্মকর্তারা। যদি তা-ই না হতো তাহলে কাজী ওয়াকিল নওয়াজদের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাতে হাতকড়া পড়তো সবার আগে। বিআইডব্লিটিএ’র দুর্নীতির ১২ আউলিয়াখ্যাত কর্মকর্তাদের বর্তমান ঠিকানা হতো কেন্দ্রীয় কারাগার।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বিআইডব্লিটিএ’র চেয়ারম্যান হিসেবে কমোডর গোলাম সাদেক চাকরি করেন মাত্র ২ বছর। এই অল্পসময়ে তার একার পক্ষে পৌনে ৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা অসম্ভব প্রায়। মূলত: এই দুর্নীতিটি সামনে আনা হয়েছে ১২ আউলিয়ার দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার জন্য। বৃহৎ দুর্নীতিগুলো সংঘটিত হয় মূলত: পরিকল্পনা, প্রশাসন ও মানব সম্পদ, বন্দর ও পরিবহন বিভাগে। এসব টেবিলে দুর্নীতির মহোৎসব চলে সারা বছর, সব সময়। কিন্তু দুদককে সেদিকটা স্পর্শ করতে দেখা যায় না।
অভিযোগ রয়েছে, বিআইডব্লিউটিএ’র দুর্নীতির ফাইলগুলো দুদকের যেসকল কর্মকর্তাগণ অনুসন্ধান ও তদন্ত করেন, তারাই জড়িয়ে পড়েন দুর্নীতিতে। ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র দুর্নীতিগ্রস্তদের দায় মুক্তির সুপারিশ করছেন। যাদের কাছ থেকে কোনো ধরণের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না; তাদের অনুসন্ধান-তদন্ত ঝুলিয়ে রাখছেন বছরের পর বছর । বিআইডব্লিটিএ’র অনুসন্ধান-তদন্ত সংক্রান্ত এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে ভুরিভুরি। দুর্নীতিপ্রবণ প্রতিষ্ঠান হলেও বিআইডব্লিটিএ’র প্রতি দুদক কর্মকর্তাদের রয়েছে এক ধরণের বিহব্বলতা। অকাট্য প্রমাণ হাতে পেয়েও মামলা প্রদানে রয়েছে মারাত্মক অনীহা। প্রতিষ্ঠানটির সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা ঝুলিয়ে রাখার ঘটনা সর্বশেষ প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
দুদক সূত্র মতে, কমোডর গোলাম সাদেকসহ সংশ্লিষ্ট ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদক মামলার অনুমোদন (স্মারক নং- ০০.০১.২৬০০.৬০৩.০১.২৩৩.২১) দিয়েছে গতবছর ২৭ সেপ্টেম্বর। এজাহার অনুমোদনের পর কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেন ডেস্ক অফিসার উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-১) মো: জাহিদ হোসেন। এর আগে উপ-সহকারি পরিচালক মো: আলিয়াজ হোসেন অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে মামলার সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু মামলা রুজুর জন্য উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজের টেবিলে যাওয়ার পর রহস্যজনক কারণে থেমে যায় মামলা রুজুর প্রক্রিয়া। অনুমোদনের পর ৬ মাস অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি দায়ের হয়নি সেই মামলা।
সূত্রমতে, ১৩ জনের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন। অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, বাজার মূল্যের চেয়ে কমমূল্যে ঘাট ইজারা দিয়ে গোলাম সাদেকসহ সংশ্লিষ্ট ১৩ ব্যক্তি সরকারের পৌনে ৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এ কারণে গোলাম সাদেকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত হয়। অন্যরা হলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিচালক; পরিকল্পনা) মো: দেলোয়ার হোসেন (যুগ্ম সচিব), প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ আবু জাফর হাওলাদার, বন্দর ও পরিবহন বিভাগের পরিচালক কাজী ওয়াকিল নওয়াজ, অতিরিক্ত পরিচালক মো: সাইফুল ইসলাম (বর্তমান পরিচালক), যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) জুলফা খানম ও উপ-পরিচালক (ইজারা) মো: মোস্তাফিজুর রহমান, ইজারাদার মোহাম্মদ এজাজ আহমেদ সোহাগ, সাকিব আহমেদ ইমন ও মো: রফিকুল ইসলাম খান।
এছাড়া অনুসন্ধান প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক তিন উপ-পরিচালককেও আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন, শেখ মো: সেলিম রেজা, মো: কবির হোসেন, মোহা. মাসুদ পারভেজ।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহনের কর্তৃপক্ষ (বিডাইডব্লিউটিএ) আওতাধীন আরিচা নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন নব্যসৃষ্ট ‘নগরবাড়ী-কাজিরহাট নরদেহ নদী বন্দরের’ আওতাধীন নগরবাড়ী/কাজিরহাট/নগাদহ বন্দর এলাকায় (এল.এস.সি) শুল্ক আদায় কেন্দ্র ঘাট পয়েন্ট ইজারা প্রদানে অনিয়ম করেছেন।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশে ব্যক্তিস্বার্থে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাজার মূল্যের চেয়ে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬৩৪ টাকা কমে ও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজার মূল্যেও চেয়ে ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯০২ টাকা কমে ইজারা দিয়ে সরকারের ৬ কোটি ৮০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৩৬ টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
কমিশনের অনুমোদিত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হিসেবে নিয়োজিত থেকে আমদানি-রপ্তানি/খালাসকৃত মালামালের পরিমাণ সংক্রান্ত তথ্য/ রেকর্ড পর্যালোচনা না করে ঘাটটির চলমান বাৎসরিক ইজারা মূল্য ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা হলেও প্রাক্কলতি মূল্য নির্ধারণে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদন ব্যতিরেকেই ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ২ কোটি টাক ধরে ইজারা অনুমোদন করেন।
দুদকের অনুসন্ধানে বলা হয়, পূর্ণকালীন চুক্তিনামাধারী ইজারাধার না হওয়া সত্বেও ঘাট পয়েন্টের জন্য ২০১১-২০১২ অর্থবছরে নবায়নের মাধ্যমে ইজারা প্রদান করা হয়। যেখানে ঘাট ইজারা দেয়ার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি।
দুদক সূত্র জানায়, কমোডর গোলাম সাদেক ও তার সহযোগীদের দুর্নীতি সূর্যের আলোর মতোই সুস্পষ্ট। অপরাধের বহু দালিলিক প্রমাণ উঠে আসে অনুসন্ধানে। তাই এটিকে ধামাচা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। হয়তো বিলম্বিত করা যাবে। কিন্তু প্রমাণভিত্তিক দুর্নীতি কখনও পুরনো হয় না। তাই দুদককে আজ না হোক কাল মামলা করতেই হবে। এই দুর্নীতির মামলাটি আপাত: ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে দুদকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে। এছাড়া দুদকের মধ্যম পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তারও নানাবিধ স্বার্থ রয়েছে এ মামলার পেছনে। তবে দুদকের শীর্ষ কর্মকর্তার স্বাভাবিক বিদায় আসন্ন। চলতি বছর মাঝামাঝিতে তিনি অবসরে যাবেন। আর তখনই মামলাটি দায়ের করা হবে বলে জানায় সূত্রটি।
সূত্র আরও জানায়, শুধু পৌনে ৭ কোটি টাকা আত্মসাতই নয় এই মামলাটির গভীর তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে গোলাম সাদেকের পাহাড় সমান দুর্নীতির অন্যান্য প্রমাণও। তার নিয়োগ বাণিজ্য, কার্গো ভ্যাসেল লাইসেন্স ও ফিটনেস ইস্যু, ঘাট ইজারা, নদী খননসহ বিভিন্ন খাতের দুর্নীতির বহু প্রমাণ তিনি রেখে গেছেন। রয়েছে নামে বেনামে তার কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বিদেশ পাচারের অভিযোগ। এসব অভিযোগ নিয়ে দুদকের ২টি ডেস্কে পৃথক ২টি অনুসন্ধান এখনও চলমান বলে জানা গেছে।
কেস স্টাডি - ২
পে অর্ডারের মাধমে ঘুষ নেওয়া ড্রেজিং শাখার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও কর্মকান্ড নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন- থাকছে আগামী পর্বে.....।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81