03/15/2025
আবু তাহের বাপ্পা | Published: 2024-09-18 11:39:33
কোকেন পাচার, মানবপাচার, স্বর্ণ চোরাকারবারিসহ সরকারি কাজের ক্রয় ও টেন্ডার ভাগাভাগির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং সিভিল এভিয়েশন অথরিটির দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা উৎসবে মেতে উঠেছে। দূর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি এখনো অনেকটাই হাসির খোরাকের মত ব্যাপার মনে করেন এসব কর্মকর্তাদের অনেকেই। কারন হিসেবে জানা যায়, দূর্নীতিবাজ সে সব কর্মকর্তাদের রক্ষায় বেপরোয়া সরকারি দলের শীর্ষ অনেক নেতা। আমাদের হাতে আসা দূর্নীতিবাজ ও তাদের রক্ষাকাজে বেপরোয়া সরকার দলীয় নেতাদের একটি তালিকা থেকে এ সত্যটি প্রতীয়মান হচ্ছে। জানা গেছে বেবিচকের এক একজন উপসহকারি পরিচালকও এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। যাদের সম্পদ ছড়িয়ে পড়েছে দেশে ও দেশের বাইরে। অনেকে আবার ঘুষ দূর্নীতির টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে সে সব টাকা রেমিটেন্স হিসেবে দেশে এনে টাকা সাদা দেখানোর চেষ্টা করছেন। এমন কয়েকজন কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে আমাদের অনুসন্ধানে।
বেবিচকের কর্মকর্তাদের দূর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে পূর্বের ঘটনাগুলোর তদন্তে কর্তৃপক্ষের উদসীনতার কারেণেই এমন ঘটনা ঘটছে বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে।
সূত্র মতে, মানব পাচার , কোকেন পাচার, স্বর্ণ চোরাচালনাসহ নানা অভিযোগে মামলায় থাকা কর্মকর্তাদের অনেকেই স্ব পদে দায়িত্ব পালন করছেন; আবার মামলায় হাজিরাও দিচ্ছেন। এ সব কারণে দূর্নীতি এখানে অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পেয়েছে। দূর্নীতি করে স্ব-পদে থাকা কর্মকর্তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে দুদক থেকে দায়মুক্তির চিঠিও নিয়েছেন। এখন সেই সব দায়মুক্তির চিঠি দেখিয়ে নিজেকে সৎ দেখানোর পাশাপাশি দূর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
জানা যায়, বেবিচকের লাগামহীন দূর্নীতি বিষয়ে দুদক ১১টি খাতকে চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে সুপারিশ করে দুদক। সেগুলো হল- ক্রয় খাত, নির্মাণ ও উন্নয়নমূলক কাজ, সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, বিমানবন্দরের স্পেস বা স্টল ও বিলবোর্ড ভাড়া, কনসালটেন্ট নিয়োগ, কর্মকর্তাদের বিদেশ প্রশিক্ষণ, যাত্রীদের অধিকার বিষয়ে মন্ট্রিল কনভেনশন বাস্তবায়ন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, পাইলট, ফ্লাইং ইঞ্জিনিয়ার ও উড়োজাহাজের লাইসেন্স দেয়া, ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সিও শিডিউল অনুমোদন। এসব খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে বুয়েটের শিক্ষকসহ অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ক্রয় কমিটি গঠন করা, নিমার্ণকাজ মূল্যায়নের জন্য বুয়েটের শিক্ষকসহ বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে নিরপেক্ষ মেয়াদী কমিটি গঠন, বেবিচকের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার জন্য অভিজ্ঞ পরিচালক পদায়নের সুপারিশ করে, কিন্তু সে সব সুপারিশ কাগজ কলমেই রয়ে গেছে। আর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা হয়ে উঠেছে আরো বেপরোয়া।
জানা গেছে,বিমানের দুর্নীতির যে কত শাখা-প্রশাখা তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এবার সিভিল এভিয়েশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, আকাশপথের চার্জ আদায়ে ব্যাপক দুর্নীতির। আন্তর্জাতিক বিমান পরিচালনা নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পরিচালিত যে কোনো এয়ারলাইন্সের সিডিউল ও নন-সিডিউল ফ্লাইটের ওভারফ্লাই, ল্যান্ডিং ও রিফুয়েলিংয়ের জন্য পারমিশন চার্জ দিতে হয়।এটি আদায় করে থাকে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। নিয়মটা হল, সিডিউল ফ্লাইটের জন্য একবারই ছয় মাসের জন্য পারমিশন দেয়া হয়, আর নন-সিডিউল ফ্লাইটের পারমিশন দেয়া হয় কেস-টু-কেস ভিত্তিতে।
সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহারে পছন্দের কোম্পানিকে নন-সিডিউল ফ্লাইটে পারমিশন আদায়ের কাজ দিয়ে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই পছন্দের কোম্পানির সঙ্গে একটি গোপন চুক্তি করেছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। পুকুর চুরি আর কাকে বলে! বিদেশি এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে প্রতিটি পারমিশনের জন্য ১৯৫ ডলার আদায় করা হলেও সিভিল এভিয়েশন খাতা-কলমে পাচ্ছে মাত্র ৩০ ডলার। এভাবে প্রতি মাসে আত্মসাৎ হয়ে যাচ্ছে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা, অর্থাৎ বছরের হিসাবে ২৭ কোটি টাকার বেশি।বলা প্রয়োজন, সিভিল এভিয়েশন অ্যাক্ট ২০১৭-এর ১০ ধারা অনুযায়ী যে কোনো পারমিটের আবেদন ও প্রদানের পদ্ধতি এএনও দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং সব ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন বাধ্যতামূলক।
বেবিচকের এতসব দর্নীতি ও চিহ্নত দূর্নীতিবাজদের বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ কি ভাবছে এমন বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে সিভিল এভিয়েশনের নতুন চেয়ারম্যান একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা। তিনি যোগদানের পর থেকেই বিমানে দূর্নীতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। সেই সাথে দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর বলেও জানা গেছে। সূত্র মতে, তার কারণে বিমানের দূর্নীতিবাজরা খানিকটা বিব্রতকর সময় পার করছেন।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81