03/12/2025
শাফিন আহমেদ | Published: 2025-03-06 13:43:40
ভোলার লালমোহন উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার মঞ্জুরুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৬ জুন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর ৯ মাস। মাত্র ৫ বছর বয়সেও মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি চাকরি পেয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে। মঞ্জুরুল ইসলামের মতো আরও একাধিক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী সাব-রেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার এখনও দাপটের সঙ্গে বহাল তবিয়তে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধার সর্বনিম্ন বয়স ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে সাড়ে ১২ বছর নির্ধারণ করে ২০১৬ সালে গেজেট জারি করা হলে পরবর্তীতে সেই গেজেটও অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। শুধু তাই নয়, স্বৈরাচার সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক'কে আদালত নির্দেশ দেয় "মুক্তিযুদ্ধের সময় যার বয়স চার বছর ছিল, তাকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে", কিন্তু ৫ই আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রায় ৭ মাস পর গণমাধ্যমে উঠে আসে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের তিন মেয়াদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক নিজেও একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তার বিরুদ্ধে ‘ভুয়া সনদ বাণিজ্য’ ও নিজের মুক্তিযোদ্ধার তালিকা টেম্পারিং করে সনদ নেওয়ার অভিযোগ উঠে আসে।
মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে মধ্য বয়সে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে চাকরিতে যোগদানের পর ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করে রাতারাতি কোটিপতি ও বেশিরভাগ কর্মকর্তারা তেমন কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার পরও ডজন খানেক কর্মকর্তা লাখ লাখ টাকার সমারোহে ভুয়া শিক্ষাগত সনদ দেখিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার হয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। বেশি বয়সে যোগদান করায় তাদের চাকরি যেহেতু অল্প কয়েক বছরের জন্য তাই তারা এই অল্প সময়ের মধ্যেই প্রচুর অর্থ সম্পদ বানিয়ে নিয়েছেন।
মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে ২০০৯ সালে ১৯০ জনকে সাব-রেজিস্ট্রার পদে আত্তীকরণ করা হয়েছিল উচ্চ আদালতের নির্দেশে। নিয়োগের সময় একটি কমিটি যাচাই-বাছাই করে ১৯০ কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ৩০ জনকে প্রকৃত মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে চিহ্নিত করলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় সবাইকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের নেপথ্যে ছিলেন তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৯৬৮, ১৯৬৭, ১৯৬৬ ও ১৯৬৫ সালে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিরাও ছিলেন যাদের বয়স মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র ৩ বছর থেকে ৬ বছর ছিল। জালিয়াতির মাধ্যমে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া নিয়ে তখন নিবন্ধন দফতরসহ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। কারণ মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। ওই সরকারের কর্মচারী হতে হলে তাদের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হওয়া বাঞ্ছনীয়। সে ক্ষেত্রে তাদের জন্মসাল হওয়া দরকার ১৯৫২ অথবা তার পূর্বে। কিন্তু নিয়োগ পাওয়াদের সবারই জন্মতারিখ ছিল ১৯৫৩ সালের পরে। এর মধ্যে ১৩৮ জনের বয়সই ছিল ১০ বছরের নিচে। আর ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সালে জন্মতারিখ আছে এমন সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ জন। মূলত ৬৫ সালের পরে যাদের জন্ম দেখানো হয়েছিল তারাই এখন কর্মরত রয়েছেন এবং আগামী বছর তারা সবাই অবসরে যাবেন। তাই শেষ মুহূর্তে দুর্নীতির মাত্রা এমন ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে যে ভূয়া কাগজ পত্রে ও দলিল সম্পাদন করছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ১২ বছর নির্ধারণ করা আছে। অনেকে মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও তালিকাভুক্ত হয়ে সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারীর নামে যারা ৪-৫ বছর বয়সে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে, তারা সবাই ভুয়া। বিষয়টি হাস্যকর। ৪-৫ বছর বয়সে কীভাবে কর্মচারী হয়, এটা কীভাবে সম্ভব? সরকারের উচিত হবে, সঠিকভাবে তদন্ত করে ভুয়াদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।
ঢাকার ধামরাই কালামপুরে সাব রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান পরিচালনা করে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে অভিযান শেষে সাবরেজিস্ট্রার মো. মঞ্জুরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার কাছ থেকে দুর্নীতি হয়েছে মর্মে একটি লিখিত পত্র নেয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, টাকার বিনিময়ে ব্যক্তি নামে খাস জমি নিবন্ধন, শ্রেণি পরিবর্তন করে ও ভুয়া খাজনা খারিজ নিয়ে জমি নিবন্ধন করে প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক বনে যাওয়া হেভিওয়েটের প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা পদায়ন বাগিয়েছেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোতে।
গত ১৯-০২-২০২৫ তারিখ মহা-পরিদর্শক নিবন্ধন অধিদপ্তর মোঃ নূর ইসলাম এর স্বাক্ষরিত স্মারক নং- ১০.০০.০০০০.১৩০.১৯.০০১.২১-৪৬ মূলে সাব-রেজিষ্ট্রার মঞ্জুরুল ইসলাম'কে লালমোহন সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ভোলা বদলী করা হয়।
বদলীকৃত কর্মস্থলে গিয়েও থেমে নেই অনিয়মে জর্জরিত মঞ্জুরুল ইসলাম। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকি, নির্ধারিত ফিসের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, মূল দলিলের নকল উত্তোলন করার জন্য সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি ফি আদায়সহ দুর্নীতির মহোৎসবের লীলাখেলায় সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
প্রাতিষ্ঠানিক টিমের তদন্তে উঠে আসা এসব অনিয়ম প্রসঙ্গে সাব রেজিস্ট্রার মঞ্জুরুল ইসলামকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81