03/19/2025
শাহীন আবদুল বারী | Published: 2025-03-19 11:49:39
গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে দলের নেতাকর্মীদের মাঠে নামিয়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটা কোন নতুন খবর নয়। বরং গত সাতমাসে এ বিষয়ে কোথাও কোন কৃতিত্ব দাবী করেননি তারেক রহমান। দেশব্যাপী এটাই এখন আলোচ্য বিষয়। চলমান রাজনীতিতে কৃতিত্ব নেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্ম। তারেক রহমান সেটা না করে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়েছেন ছাত্র-জনতা ও আপামর মানুষকে। এখানেই তিনি এগিয়ে আছেন সবার থেকে। দলের অন্যান্যদের চাইতে যোজন যোজন ফারাকে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে আরো স্পষ্ট হবে বিষয়টি, বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের বক্তব্য ও তারেক রহমানের বক্তব্যের ধরনের মাঝে রয়েছে আসমান-জমিন তফাৎ। তবে এটা ঠিক গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে ভাষায় বা যে ইঙ্গিত করে কথা বলেন দলের অনেক নেতারা হয়ত তা ধরতে পারেন না বা বুঝেও বলেন না। অনেকটা জেগে ঘুমানোর মতো অবস্থা হয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা কোথায় কি করছেন তাও খবর রাখছেন। বিভিন্ন ভাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যেমন যোগাযোগ রাখছেন, তেমনি মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথেও যোগাযোগ অটুট রেখেছেন তারেক রহমান। অনেক টা বাবার আদর্শকে ধরে রাখার আফরান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যেসব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে তা বারন করার চেষ্টাও করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অভিযোগে অনেক নেতাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। তারেক রহমানকে আগ বাড়িয়ে অনেক নেতা কথা বলতে গিয়েও আগের মতো সুবিধা করতে পারছেন না। অত্যন্ত বিচক্ষণতা এবং বিনয়ের সঙ্গে কথা বলেন তারেক রহমান। প্রতি টি কথা ঠোঁট থেকে ছাড়ার আগে চুলছেড়া বিশ্লেষণ করেন জননন্দিত নেতা তারেক রহমান
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ জন্যই তিনি নিজেকে বর্তমান সময়ে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। পেয়েছেন ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার নীরব সমর্থন। ৩১- দফা নিয়ে আর দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে জনসমাবেশ গুলোতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সরাসরি বা কোনভাবেই আন্দোলন সংগ্রামের এ বিজয়কে দলের একক কৃতিত্ব দাবী করেননি তারেক রহমান। তিনি এ বিজয়কে সামষ্টিক অর্জন হিসেবে তুলে ধরেছেন বার বার। গত বছরের ৫ আগষ্টের অর্জন ও বিজয়কে সংহত করতেও তাৎক্ষনিক কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। তারেক রহমান বলেছেন, 'প্রতিশোধ নেয়া কোন রাজনীতিবিদদের কাজ নয়।' এখনো এ কথার ওপর ভিত্তি করে আছেন তিনি। বিছিন্ন কিছু ঘটনায় দলের কিছু নেতা-কর্মীর জড়িত থাকার কথা প্রকাশ হওয়ার পর দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন। শোনা যায়, দোষী ও চিহ্নিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ঘটনাস্থলের বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের তিরস্কার করেছেন রূঢ় ভাষায়। দ্বিতীয়বার এমন ঘটনার অবতারণা হলে পদ হারানোর মতো কঠোর সতর্কবানী শোনানো হয়েছে নেতাদের। এতে স্থানীয় নেতারা পড়েছেন বিপাকে। কর্মী সামলাবেন না সংগঠন গোছাবেন-এমন উভ সংকটে রয়েছেন নেতৃবৃন্দ। তবে দলের কিছু সিনিয়র নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে যারা এখনো রাজনীতি বহির্ভূত সমাজ ও আইন বিরোধী কর্মকান্ডে নিজেদের জড়িত রেখেছেন তাদের জন্য সামনে শাস্তির নানা খড়গ ঝুলছে বলে কানাঘুষা শোনা যায় দলটির বিভিন্ন স্তরের লোকদের সাথে কথা বলে। তখন আম-ছালা উভয়ই হারানোর শংকা থাকবে চিহ্নিতদের। তবে সেটা সময়েই দেখা যাবে এই দুষ্টু চক্রকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কার্যত কেউ স্বীকার না করলেও দলের সবাই জানেন দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে থানা-ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রতিটি নেতা-কর্মীর বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফিরিস্তি লিপিবদ্ধ করা হয় নানা কৌশলে। পদ-পদবী ও বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির সময় এই ফিরিস্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানা যায়।
ওয়ান ইলেভেন থেকে গত বছরের ৫ আগষ্ট পর্যন্ত তারেক রহমান নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, অসংখ্য সাজানো মামলার আসামী হয়েছেন। তার -অনুপস্থিতিতে বিচার হয়েছে, সাজা দেয়া হয়েছে, বার বার আবেদন করেও পাসপোর্ট পাননি, অরাজনৈতিক ব্যক্তি হয়েও তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধেও মামলার আসামী করা হয়েছিল। মৃত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে নিয়ে নোংরা ভাষায় কথা বলা হয়েছে। অথচ আশ্চর্যের বিষয় ৫ আগস্টের পর একটি বারও তারেক রহমান কোন প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দেননি। কারো বিরুদ্ধে কোন বিষোদগার করেননি।
গত সাড়ে ১৬ বছরে তাঁর বিরুদ্ধে যত খবর প্রচার ও প্রকাশ হয়েছে স্বাভাবিক কারনেই সেসবের প্রতিবাদ জানানোর কথা। মানুষের সহমর্মিতা আদায় করার কথা। কিন্ত তিনি কোন জবাব দেননি। মিথ্যা অভিযোগ-অপবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। তবে বার বার বলছেন, দলের নেতা-কর্মীদের মামলা- হামলা, জেল- জুলুম ও গুম-খুনের কথা। বিচার চেয়েছেন এসব ঘটনার। পতিত সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির বিচারও চেয়েছেন অসংখ্য বার। কিন্তু কোথাও কোন কর্মসূচীতে নিজের ওপর, তার পরিবারের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক কোন শব্দ উচ্চারণ করেননি তারেক রহমান।
তাঁর এ ভূমিকা নিশ্চয়ই প্রমান করে তারেক রহমান এখন আর ২০০১-২০০৬'র চেনা মানুষটি নন, একজন পরিপূর্ণ ও পরিনত রাজনীতিবিদ হিসেবে হাজির হয়েছেন জাতির সামনে। নিজেকে তৈরি করেছেন এক ভিন্ন ভাবমূর্তিতে। একই সময় জাতির সামনে একক নেতৃত্বের সুযোগও চলে আসছে তারেক রহমানের সামনে।
সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি - এনসিপি'র পক্ষ থেকেও বৃহত্তর নির্বাচনী জোট করার প্রাথমিক আলাপ আলোচনা চলছে। এখন শুধু আসন সংখ্যা নিয়ে চলছে দরকষাকষি। জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারী দল ঘোষনার আগ থেকে এ বিষয়ে কথা চালাচালি হচ্ছিল ঢাকা- লন্ডন। রাজনৈতিক মঞ্চে বিএনপির কিছু নেতা যতই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকদের সমালোচনা বা রক্ত চক্ষু প্রদর্শন করুক না কেন, তারেক রহমান ঠিকই তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনর নেতাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, 'কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই লন্ডনে যোগাযোগ রক্ষা ও সময় সময় আন্দোলনের গতি প্রকৃতি নিয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কথা বলেছেন ছাত্র নেতারা।' সার্বক্ষণিক যোগাযোগের কথাও জানালেন সাংবাদিক নেতারা। এসব তথ্য দলের নেতারা জানালেও তারেক রহমান কখনো বলেননি এ বিষয়ে কোন কথা। তিনি হয়ত অনুধাবন করেছেন ফ্যাসিবাদ উৎখাতের সেই যুদ্ধের শেষ বাঁশিটা যে ছাত্ররাই বাজিয়েছিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে উত্তাল সময়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে ৩ আগস্ট একদফার ঘোষনা দিয়েছিল এই সাহসী তরুণেরা। ৪ আগস্ট হঠাৎ করেই 'মার্চ টু ঢাকা' একদিন এগিয়ে আনা হলো। পতন তরান্বিত হলো ফ্যাসিস্ট সরকারের। এ সবই ছিল পরিকল্পিত কর্মসূচি। এটা অস্বীকার করার জো নেই যে, সেদিন পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার ব্যানারে। মাঠের নেতা তখন ছাত্র-জনতা আর অদৃশ্যের চালিকাশক্তি ছিল তারেক রহমান।
তারেক রহমানের এই ভূমিকাকে একদিকে যেমন বলা যায় রাষ্ট্রনায়কসুলভ আচরণ তেমনি বিজয়ী ছাত্রদের ইস্পাত-দৃঢ় ঐক্য ছিল হার না মানার শপথ। এই যুগলবন্দীই দেশকে দিয়েছে নতুন সূর্য।
২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ভবিষ্যতে নানা আঙ্গিকে গবেষণা হবে, রচিত হবে ইতিহাস-তখন হয়ত জানা যাবে আরো বিস্তারিত। তবে সবকিছু নিয়েই জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান এক ঐতিহাসিক সময়োচিত সিদ্ধান্ত। ইতিহাস সবার ভূমিকাকে যার যার মর্যাদায় স্থান দিবে নিশ্চয়ই। তা না হলে যুগে যুগে প্রতিবাদ-বিপ্লব হতেই থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ওয়ান ইলেভেনের দুই বছর এবং আওয়ামী দুঃশাসনের সাড়ে ১৫ বছরে অনেকটাই কোনঠাসা ছিল বিএনপি । নেতা-কর্মীদেরদের মামলা-মকদ্দমা দিয়ে হয়রানি, ঘুম-খুনের শেষ ছিলনা। সরকারের কিছু পা-চাটা প্রশাসনের লোকজন খালি করেছে হাজার হাজার মায়ের বুক। প্রশাসনের নির্মম পাষণ্ডতায় এতিম হয়েছে হাজার হাজার শিশু সন্তান। তাদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠলেও মন গলেনি নিষ্ঠুর পাষণ্ডদের। বাবাকে ফিরে পেতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গিয়েও ফেরত তো পায়ইনি উপরন্তু মিথ্যা নাটক করা হয়েছে। বিএনপিকে রাজধানী সহ দেশের কোথাও দিতে হতোনা মিটিং-মিছিল এবং অনুষ্ঠানের অনুমতি। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারম্যান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মামলা দিয়ে সাজাঁ দিতেও কারপন্ন করেনি পতিত সরকার। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলা সহ বিভিন্ন মামলায় আসামি করে তাকে করা হয় দেশান্তরী। শুধু তাই নয়, ফখরুদ্দিন-মঈনূদ্দিনের নির্মম নির্যাতনের শিকার হোন তারেক রহমান। নির্যাতন ও মামলার যাতেকলে পড়ে পাড়ি জমান লন্ডনে। সেখান থেকেই দলের হাল ধরেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পুত্র তারেক রহমান। ওয়ান ইলেভেনের সময় ছোট ভাই আরাফাত রহমান ককোকে হারান। সরকারি ভাবে বরাদ্দকৃত ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাসা টিও ছাড়তে বাধ্য করে আওয়ামী সরকার। স্ত্রী জুবায়দা রহমানকেও কৌশলে সরকারি চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। আটকানোর চেষ্টা করা হয় দুদকের জালে। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। কঠিনতম বাস্তবতা এবং নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করে বিএনপি জিয়াউর রহমানের আদর্শের পথে এগুচ্ছে। মাঠ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদেরকে চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য, মারামারি-হাঙ্গামা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সাংগঠনিকভাবে দল গোছানোর পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কৌশলী পথে এগোচ্ছে বিএনপি। বিভিন্ন দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের মতো সরকার ও দল পরিচালনার মধ্যে সীমারেখা টানতে চাইছে বিএনপি। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে এমন চিত্র দেখা গিয়েছিল দলের মধ্যে। বিগত ১৭ বছরের ত্যাগী ও পরীক্ষিত সব নেতার মূল্যায়নের চেষ্টা চলছে। বিগত সরকার যে সব ভুল করেছে বিএনপি সে পথে হাটবেনা। তারেক রহমান প্রতিটি মুহুর্ত মনিটরিং করছেন।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81