05/13/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2025-05-13 14:36:55
> প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টার সফরের পর সুখবর পাওয়ার আশা
> মন্ত্রণালয় কাউকে কাজ এনে দিতে পারে না
> হামলা মামলার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে
বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া থেকে সুখবর পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী ১৫ মে (বৃহস্পতিবার) মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছে।
এর আগে গত ৮ মে মালয়েশিয়ার রাজধানী পুত্রজায়ায় দেশটির স্বরাষ্ট্র, মানবসম্পদ এবং কৃষি ও প্লান্টেশন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রায় ১২ লাখ বিদেশী কর্মী নিয়োগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় বিদেশী কর্মী নিয়োগ করা হবে, সেই বিষয়ে খোলাসা করেনি মালয়েশিয়া সরকার।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৪ মে (বুধবার) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, একই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া ও উপসচিব মো. সরোয়ার আলম সরকারি সফরে মালয়েশিয়া যাবেন। সেখানে তারা শ্রমবাজার খুলে দেওয়ার লক্ষ্যে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।
এই সভায় বাংলাদেশ দেশ থেকে কোন প্রক্রিয়ায়, কী পরিমাণ শ্রমিক নিবে মালয়েশিয়া, সেই বিষয়টি আলোচনা হতে পারে।
জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সরোয়ার আলম বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে বিশদ আলোচনা করবো। আমাদের সরকার ও তাদের সরকারের নিয়মনীতি মেনে শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা করে শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে আলোচনা হবে। শ্রমিক গ্রহণকারী দেশ হিসেবে তারা যেসব শর্ত দিবে, প্রেরণকারী দেশ হিসেবে সেগুলো আমরা শুনবো। আমাদের সঙ্গে আগামী ২১ মে নিরাপদ অভিবাসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণসহ শ্রমবাজার সম্পর্কিত তৃতীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভার তারিখ নির্ধারিত আছে। সেখানেও বিষয়গুলো আলোচনা পর্যালোচনা করা হবে। এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী। আশা করছি সফর থেকে ফিরে আমরা শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে সুখবর দিতে পারবো।’
জানা গেছে, মালয়েশিয়া আগামী কয়েক বছরে সোর্স কান্ট্রিগুলো (প্রেরণকারী দেশ) থেকে প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক নিবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য বড় সুখবর আশার সম্ভাবনা রয়েছে। কারন দেশটিতে সাধারণ শ্রমিকের বেতন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর চাইতে দিগুন বা তারও বেশি।
প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ীদের নানা বিরোধের আবর্তে ঝুলে আছে বিশাল এই শ্রমবাজার। ধীরে ধীরে সেই জটিলতা কাটতে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বৈধভাবে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেভাবেই হোক বিশাল এই শ্রমবাজার খুললে; বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক গেলে দেশ উপকৃত হবে, অভিবাসী কর্মী উপকৃত হবে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) একাধিক নেতা বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সির কে ব্যবসা করলো, কে করল না এটাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নানান ধরনের জট পাকানো হচ্ছে। অনেক লোক এতে জড়িয়ে পড়ছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে দু'দেশের সরকারের নিয়মনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে শ্রমিকের সুরক্ষা ও স্বার্থের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিশাল এই শ্রমবাজার খোলার পথে সরকারের এগুনো উচিত। এতে সরকার ও দেশ উপকৃত হবে। দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ‘নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে সরকার বা মন্ত্রণালয় কাউকে ব্যবসা বা কাজ এনে দিতে পারে না। ব্যবসায়ীদের একটি অংশ প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে এবং আমাদের দেশের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও মন্ত্রণালয়কে দুর্বল ভেবে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হাঙ্গামা করে গন্ডগোল করে। শুধু বাংলাদেশ নয়, কোন দেশেই রিক্রুটিং এজেন্সিকে কাজ সংগ্রহ করে দেওয়া বা কাজ এনে দেওয়া ওই দেশের মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। এটা স্ব স্ব এজেন্সিকে করতে হয়। যেসব এজেন্সি বিদেশ থেকে কাজ আনবে; সরকার তাদেরকে শ্রমিক পাঠানোর অনুমতি দিবে।’
তারা আরও বলেন, ‘অথচ বিদেশে না গিয়ে, কাজ না এনে সেখানে কোন ধরনের অবকাঠামো তৈরি না করে দেশে বসে এক শ্রেনীর ব্যবসায়ী আন্দোলন, মানববন্ধন, সাংবাদিক সম্মেলন করা, স্মারকলিপি দেওয়া, সেমিনার ও টকশো করে অপরকে দোষারোপ করে ব্যবসায়ীদের একটি মহল। এই দোষারোপের অপসংস্কৃতি থেকে জুলাই বিপ্লবের পরে মামলা মোকদ্দমাও শুরু হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারকে ভুল বুঝিয়ে ব্যবসায়ীদের একাংশ অপরাংশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আবার সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নানা অভিযোগে বা অভিযোগ এনে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করছে। এইসব মামলাসহ নানান প্রক্রিয়া আমাদের শ্রমবাজারকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এতে শুধু মালয়েশিয়া নয় অন্যান্য দেশের শ্রমবাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ’
তারা আরও বলেন, ‘রিসিভিং কান্ট্রি বা যারা বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয় তারা দেখছে বাংলাদেশে কি হচ্ছে। সুতরাং বৈধ অভিভাসনের পরও কথায় কথায় মানব পাচারের মামলা হচ্ছে, বৈধ অভিবাসনের পরও এসব মামলা-মোকদ্দমা আমাদের দেশের ইমেজ ক্ষুন্ন করছে। ক্রমাগত মামলা মোকদ্দমা চলতে থাকলে আমাদের শ্রমবাজার খোলার ক্ষেত্রে এটা বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকারের পক্ষে সকল রিক্রুটিং এজেন্সিকে খুশি করা সম্ভব নয়। এখন দেখা যাচ্ছে যারা অতীতে শ্রমিক পাঠানোর ব্যবসা করেছে সব দোষ তাদের। যারা সহযোগী এজেন্সিতে ছিল তাদের দোষ তারা শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। যারা মার্কেটিং করেছে, সাপ্লাই চেইন রক্ষা করেছে তাদেরও নানান ধরনের ক্ষোভ রয়েছে। তারা মনে করে তারা কেন সরাসরি লোক পাঠাতে পারলো না। কারও কারও ক্ষোভ প্রসেস সাপ্লাই মার্কেটিং কিছুই করতে পারেনি এসব নিয়ে। কিছু নতুন এজেন্সি যারা নতুন লাইসেন্স করেছে অভিজ্ঞতা বা সক্ষমতা কোনটাই নেই তাদের ক্ষোভ তারা কেন শ্রমিক পাঠানোর ব্যবসা করতে পারল না। এসব নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের মনে কষ্ট। এরকম বহুমুখী অভিযোগ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর আছে। এভাবে আমরা যদি পরস্পর বিরোধী অবস্থানে থাকি, সবাইকে খুশি করতে যাই তাহলে শ্রমবাজার খোলা হবে না। বাজার না খুললে কেউ শ্রমিক পাঠাতে পারবে না। বাজার খুললে একটা অংশ লোক পাঠাবে, একটা অংশ সহযোগী হিসেবে, রিক্রুটিং এজেন্সি হিসেবে উপকৃত হবে। দেশ উপকৃত হবে, বৈধভাবে ও কম অভিভাসন ব্যয়ে শ্রমিকরা মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন যেতে পারবে। এই বিষয়টিকে আমাদের প্রাধান্য দেয়া দরকার। সেখান থেকে আমাদের দেশ বারবার সরে যাচ্ছে। যা আমাদের দেশের রেমিটেন্স ও শ্রমবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
আশার কথা হচ্ছে, অন্তর্বতী সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আগামী ১৪ মে মালয়েশিয়া যাবেন। সেখানে শ্রমবাজার খোলার লক্ষ্যে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করবেন। ওই সভা শেষে আগামী ২১ ও ২২ মে ঢাকায় নিরাপদ অভিবাসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণসহ শ্রমবাজার সম্পর্কিত তৃতীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভার অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় আগামী ছয় বছরে প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে সুখবর পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এই অবস্থায় সব পক্ষের উচিত ধৈর্য্য সহকারে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং শ্রমবাজার খোলার লক্ষ্যে ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা।
এই বিষয়ে বায়রার মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘দুই দেশের সরকার নিয়মনীতিকে প্রাধাণ্য দিয়ে শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা করে কম ব্যয়ে শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থা করা জরুরী। কোন এজেন্সি ব্যবসা করলো বা করলো না সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো শ্রমবাজার খোলা ও সেখানে নিরাপদে কম খরচে শ্রমিক যাওয়া। আমাদের সেদিকেই মনোযোগ দেয়া উচিৎ।'
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81