05/31/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2025-05-29 14:57:48
আলোচিত ব্যবসায়ী এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় জামিন আবেদন শুনানি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছেই না। উচ্চ আদালতে টানা ৩৩ বার মামলার শুনানির দিন ধার্য্য হলেও সেটার শুনানি হয়নি। ফের পিছিয়েছে শুনানির তারিখ।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গুলশান নিকেতনের বাসা থেকে জিকে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিন নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার দাবী করে র্যাব।
অভিযানের পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলা করেন র্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার মিজানুর রহমান। ওই মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ থেকে ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই মানিলন্ডারিং চেষ্টার মামলার রায় হয়।
জিকে শামীমের আইনজীবীরা জানান, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় মামলায় মানি লন্ডারিংয়ের চেষ্টার যে কথা বলা হয়েছে, সেটা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। তার যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, ব্যাংক স্থিতি, এফডিআর মিলে ২৯৭ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
আদালত কর্তৃক এই মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট ২৯টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, এফডিআর অবমুক্ত করার জন্য চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় সর্বমোট সম্পদের পরিমান উল্লেখ করা হয়েছে ২৯৭ কোটি টাকা।
বাস্তবে জিকে শামীমের আয়কর রিটার্ন ও সমুদয় তথ্য যাচাই বাছাই করে সার্টিফাইড কপি ইস্যু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এতে দেখা যায়, জিকে শামীমের ৩৫৩ কোটি টাকা বৈধ অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। মামলায় উল্লেখিত অস্থাবর সম্পদের চাইতে অতিরিক্ত ৫৬ কোটি টাকা বেশি বৈধ অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে। এরপরও মামলায় জিকে শামীমকে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে জিকে শামীম হাইকোর্ট বিভাগে জামিন চাইলে তাকে জামিন দেয়া হয়। তার জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল মঞ্জুর করে বিগত ২০২৪ সালের ৪ঠা জানুয়ারি বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
পরবর্তীতে চেম্বার জজ আদালত থেকে জি কে শামীমের জামিন স্থগিত করা হয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে তিনি পুনরায় জামিন আবেদন করেছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারনে তার শুনানি হচ্ছে না।
জিকে শামীমের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক জানন, জি কে শামীম চার বছর তিন মাস ধরে কারাগারে। এই মামলায় সর্বনিম্ন সাজা তিন বছর। আর সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছর। অর্থাৎ সর্বনিম্ন সাজা তিনি ইতিমধ্যেই ভোগ করে ফেলেছেন। অথচ মামলাটিতে কেবল একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য হয়েছে। তাছাড়া একই অভিযোগে আরেক মামলায় তাকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এসব যুক্তিতে রুলটি অ্যাবসুলেট (মঞ্জুর) ঘোষণা করে তাকে নিয়মিত জামিন দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শতভাগ খালাসযোগ্য উক্ত মামলাটি নিরপেক্ষভাবে ন্যায় ও ন্যায্যতার সঙ্গে বিচার করলে মামলা থেকে তার মক্কেল অব্যাহতি পাবেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা মামলাটি অন্তর্বতীকালীন সরকারের সময় ৩৩ দফায় তারিখ দেওয়ার পরও শুনানি না হওয়া অমানবিক ও ন্যায়বিচার পরিপন্থী।
উল্লেখ্য যে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযোগের মধ্যে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতনে শামীমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ওই ভবন থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা, এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানের সময় জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে দুই মামলায় তার সাজা হয়েছে।
২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জি কে শামীম ও তার ৭ দেহরক্ষীকে অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলাম।
দণ্ডিত অপর আসামিরা হলেন, জি কে শামীমের সাত দেহরক্ষী মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন, মো. সামসাদ হোসেন, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. মুরাদ হোসেন।
গত বছরের ১৭ জুলাই মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় জি কে শামীমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আদালত। বাকি সাত আসামিকে (জি কে শামীমের দেহরক্ষী) চার বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের সম্মিলিতভাবে তিন কোটি ৮৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৪ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
চার বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামি হলেন, মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. মুরাদ হোসেন, মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. শহীদুল ইসলাম ওরফে শরীফ, মো. কামাল হোসেন, মো. সামসাদ হোসেন ও মো. আনিছুল ইসলাম।
রায়ে আদালত তার জব্দ করা সব ব্যাংক হিসাব ও অস্থাবর সম্পত্তি অবমুক্ত করার আদেশ দেন।
উল্লেখ্য গ্রেপ্তারের সময় জিকে শামীমের জিকে বিল্ডার্স র্যাব সদরদপ্তর, সচিবালয়ে ও কয়েকটি হাসপাতালের নতুন ভবনসহ অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ ছিল। ওই প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। পরে সেগুলোর কার্যাদেশ বাতিল হয়।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81