02/23/2025
SAM | Published: 2018-03-20 20:47:44
এফ টি বাংলা
মাত্র বছরখানেক আগেও ব্যাংকে ছিল অলস টাকার পাহাড়। ঋণ দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলো ঘুরেছিল বিনিয়োগকারীদের দ্বারে দ্বারে। সুদ হারও কমিয়ে আনা হয়েছে এক অংকে। কিন্তু এক বছর আগের এই গল্প এখন কল্পকাহিনী। কারণ তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। ঋণের সুদ হারও অংক থেকে উন্নীত হয়েছে সংখ্যায়। গত এক মাসের ব্যবধানেই সুদ হার বেড়েছে শূন্য দশমিক শূন্য সাত শতাংশ (০.০৭%)। এতে নতুন চ্যালেঞ্জে পড়েছে বিনিয়োগ খাত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানতের অনুপাত (এডিআর) হার কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাজারে ঋণের চাহিদা বাড়ছে। ফলে তারল্য বা নগদ টাকার সংকটে পড়ছে ব্যাংকগুলো। আর এই সংকট মেটাতে বাড়তি সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে তারা। সেই জন্য বাড়ছে ঋণের সুদহার।
তবে ব্যবসায়ীমহল বলছে, দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় কমিয়ে আনা ঋণের সুদ ফের হু হু করে বাড়ছে। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে দেশের উদীয়মান অর্থনীতি আবার হোঁচট খাবে।
তারা বলছেন, এমনিতেই এখন ব্যবসা পরিচালনার খরচ অনেক বেশি। তার ওপর দুই অংকের সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা কঠিন। সুদহার না কমলে বিশ্ব বাণিজ্যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। তাই এখনই ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।
ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী ঋণ বিতরণের লাগাম টানতে সম্প্রতি প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে সাড়ে ৮৩ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোতে ৮৯ শতাংশ করা হয়েছে। যা আগে ছিল ১০০ টাকার বিপরীতে যথাক্রমে ৮৫ ও ৯০ শতাংশ। ডিসেম্বরের মধ্যে বাড়তি ঋণ নির্ধারিত মাত্রায় নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশের কারণে ব্যাংকগুলো এখন আমানত বাড়িয়ে এডিআর সমন্বয়ের চেষ্টা করছে। কোনো কোনো ব্যাংক নতুন ঋণ অনুমোদন কমিয়ে দিয়েছে। আবার অনেক ব্যাংক ভোক্তাসহ কিছু খাতে ঋণ বিতরণ আপাতত বন্ধ রাখা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অথচ গত বছরও ব্যাংকগুলোতে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা অলস পড়ছিল। সেই সময় বিনিয়োগকারীদের ঋণ দেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে অফার দিয়েছিল ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সবকটির সুদ হার ১১ শতাংশের ওপরে। সরকারি জনতা, বেসিক, কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি দুই ধরনের ঋণেই সুদ ১৩ শতাংশ। সোনালী ও রূপালী ব্যাংক নিচ্ছে ১১ শতাংশ হারে। আর অগ্রণী ও বিডিবিএল ব্যাংক সুদ নিচ্ছে ১১ থেকে ১২ শতাংশ হারে।
তবে শিল্প ঋণের ক্ষেত্রে এই সুদ কোনো কোনো বেসরকারি ব্যাংকে ২০ শতাংশেরও ওপরে। বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক এই সুদ হার প্রায় ২২ শতাংশ। এছাড়া অধিকাংশ ব্যাংকে এসএমই খাতে সুদ হার ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ। আর দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি ঋণে সর্বোচ্চ ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দুই অঙ্কের সুদে ঋণ দিলেও গড় হিসাবে (কাগজে-কলমে) কিছু ব্যাংকের সুদ হার এখনও দেখাচ্ছে ৯ শতাংশ। গত জানুয়ারিতে ১৯টি ব্যাংকের সুদ হার গড়ে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, সুদহার বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে দেয় না। ব্যাংকগুলো তাদের মতো সুদহার নির্ধারণ করে। তবে আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধানের (স্প্রেড) বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে। এটি পরিপালনে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে গড় আমানতের সুদহার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। যা আগের মাস ডিসেম্বরের চেয়ে দশমকি ১০ শতাংশ বেশি। ডিসেম্বরে ছিল ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ।
অন্যদিকে জানুয়ারিতে ঋণের সুদহার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ যা আগের মাস ডিসেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ঋণের সুদহার বেড়েছে দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
জানা গেছে, ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের নিচে রাখার নির্দেশনা থাকলেও অনেক ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে তা মানছে না।
এডিআর হার কমানোর কারণে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়ছে বলে মনে করেন না ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোতে আমানত কমছে। বেসরকারি ব্যাংক থেকে সরকারও আমানত তুলে নিচ্ছে। কিন্তু ঋণের চাহিদা বাড়ছে। ফলে বেশি সুদ দিয়ে ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহ করছে। এ অবস্থায় ব্যবসায় টিকে থাকতে ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই বলেও জানান তিনি।
তারল্য সংকট মেটাতে পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকে সরকারি আমানত বাড়াতে হবে। ব্যাংগুলোতে সরকার যে আমানত রাখে তার মাত্র ২৫ শতাংশ রাখে বেসরকারি ব্যাংকে। এই আমানত কমপক্ষে ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
এছাড়া বর্তমানে ব্যাংকগুলোর সংগৃহিত আমানতের সাড়ে ১৯ শতাংশ গ্রাহকদের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখতে হয়। এটা ১৭ বা ১৮ শতাংশ নির্ধারণ করা দরকার বলে মনে করেন ঢাকা ব্যাংকের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বাজারে অতিরিক্ত ডলার সরবরাহের কারণেও তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে করেন ব্যাংকাররা।
সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত অর্থাৎ সাড়ে আট মাসে মোট ১৭১ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে ১৪ হাজার ৬৫ কোটি টাকা উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে। কিন্তু এই সময়ে বাজার থেকে কোনো ডলার কেনার প্রয়োজন হয়নি। অথচ গত অর্থবছর বাজারে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রির বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১৯৩ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত প্রায় ১৭০ থেকে ১৮০ কোটি ডলার বাজার ছেড়েছে। ক্রেতারা টাকার বিনিময়েই ডলার কিনেছে। এ কারণেও বাজারে নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে।
তবে হু হু করে সুদ হার বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসাখাত নতুন করে চ্যালেঞ্জে পড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
এফবিসিসিআই এর সভাপতি শফিউল ইসলাম বলেন, দেশে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। সেইজন্য বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত ও ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। কিন্তু সুদ হার বেড়ে যাওয়ায় উল্টো ব্যবসায় ব্যয় বাড়ছে। এতে বিনিয়োগ কমে যাবে। যে কারণে মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার যে স্বীকৃতি পাওয়া গেছে তা ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, সুদ হার বাড়লে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। ফলে পণ্যের দাম বাড়বে। তখন দেখা দিবে মুদ্রাস্ফীতি। তাই এখন এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
অব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের অভাবে বর্তমানে ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্ত মন্তব্য করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, খেলাপি ঋণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগ খাতে। এক সময় অব্যবসায়ীরা ঋণ পেয়েছিল কিন্তু প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা পায়নি। এখন সেই পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে ব্যাংক খাতকে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81