02/24/2025
Siyam Hoque | Published: 2020-05-30 17:03:44
NEWS DESK
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ হেফাজতে এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর জেরে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ এবং অগ্নিসংযোগে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়েপোলিস শহর। তৃতীয় দিনের বিক্ষোভে পুলিশ বাধা দিলে বিক্ষোভকারীরা একটি থানায় ও দুটি ভবনে অগ্নিসংযোগ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মিনিয়েপোলিস ও পার্শ্ববর্তী সেইন্ট পল শহরে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে বিক্ষোভের মুখে হত্যার ঘটনায় জড়িত এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহের সময় সিএএনের এক রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যানকে পুলিশ আটক করে। যদিও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিক্ষোভকারীদের হিংস্র অপরাধী আখ্যা দিয়ে বলেছেন, লুটপাট শুরু হলে গুলিও শুরু হবে।
বিশ্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় সব সময়ই স্বোচ্চার যুক্তরাষ্ট্র। সেই যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়েপোলিস শহরে গত সোমবার পুলিশ হেফাজতে মারা যান কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড। তিনি একটি রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। এই ঘটনার একটি ভিডিও’তে দেখা যায়, এক পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু দিয়ে তাকে মাটিতে চেপে ধরে রেখেছেন। সে সময় ফ্লয়েড বলতে থাকেন, প্লিজ, আমি শ্বাস নিতে পারছি না, আমাকে মারবেন না। এক পথচারী সে সময় ফ্লয়েডকে ছেড়ে দিতে পুলিশকে অনুরোধ করেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে ফ্লয়েডকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চার পুলিশ সদস্যকে তাত্ক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে গতকালের আগ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষোভকারীরা বরখাস্ত পুলিশ সদস্যদেরকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে তিন দিন ধরে বিক্ষোভ করছে। ফ্লয়েডের পরিবার জড়িত চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের দাবি জানিয়েছে। ফ্লয়েডের ভাই ফিলোনাইস সিএনএনকে বলেছেন, আমার ভাই আর ফিরবে না। আমরা ন্যায় বিচার চাই।
প্রাথমিক ভাষ্যে পুলিশ জানায়, ফ্লয়েডের গাড়িতে জাল নোট থাকার খবর পেয়ে সোমবার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তারা ফ্লয়েডকে গাড়ি থেকে নেমে সরে যেতে বললে তিনি কর্মকর্তাদেরকে বাধা দেন এবং গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ভিডিও’তে তেমন কিছু দেখা যায়নি। এ ঘটনার তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- এফবিআই।
স্থানীয়, অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত চলছে জানিয়ে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করারও আশ্বাস দিয়েছেন তারা। মিনিয়াপোলিসের পুলিশপ্রধান মেদারিয়া আরাদোনদো তার বিভাগের পক্ষ থেকে ফ্লয়িডের পরিবারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতে সময় চেয়েছেন অ্যাটর্নি মাইক ফ্রিম্যান। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস বলেছে, তারা এখনো তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করছেন।
এরই মধ্যে ফ্লয়েডের গলায় পা দিয়ে চেপে ধরা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে গতকাল শুক্রবার আটক করা হয়েছে। সে এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। হেনেপিন কাউন্টি অ্যাটর্নি মাইক ফ্রিম্যান বলেছেন, কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ে হত্যার অভিযোগ আনার ঘটনা এটিই প্রথম।
এর আগে বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভ অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও তুমুল ধ্বংসযজ্ঞের রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা একটি গাড়ি এবং অন্তত তিনটি ভবনে অগ্নিসংযোগ করে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, টানা দ্বিতীয় রাতের মতো দোকানে লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। এদিন বিক্ষোভকারী মিনিয়েপোলিসে পুলিশ কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় থানায় আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এর আগে বুধবার দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় এবং অন্তত ১৬টি ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ঠেকাতে মিনেসটার গভর্নর টিম ওয়ালজ শহরটিতে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী মোতায়েন করেছেন। তিনি বলেছেন, ফ্লয়েডের মৃত্যুর দ্রুত ন্যায় বিচার হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরে এক টুইটে মিনিয়েপোলিসে অরাজকতা ঠেকাতে মেয়র জ্যাকব ফ্রের ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করেছেন। মেয়র শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী পাঠিয়ে সব ঠিক করা হবে। বৃহস্পতিবার রাতে টুইট করে তিনি বলেন, যখন লুটপাট শুরু হবে, তখন গুলিও শুরু হবে। যদিও এই বার্তা প্ল্যাটফর্মের নীতি-বিরুদ্ধ দাবি করে তা মুছে দিয়েছে টুইটার। যদিও হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কাইলেইঘ ম্যাকঅ্যানি বলেছেন, ফ্লয়েডের মৃত্যুর ভিডিও দেখে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মর্মাহত। বিচার হোক তিনিও চান।
মিনিয়েপোলিসে বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহের সময় সিএনএনের সাংবাদিক ওমর জিমেনেজ ও তার ক্যামেরাম্যানকে পুলিশ আটক করে। পুলিশ জানায়, নির্দেশনার পরও তারা সরে না যাওয়ায় আটক করা হয়েছে। যদিও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মিনেসটার গর্ভনর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শুধু মিনিয়েপোলিসে নয় বিক্ষোভ হয়েছে, নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো, ডেনভার, ফিনিক্স এবং মেমফিসের মতো শহরে। বিক্ষোভের সময় সংঘর্ষ হয়েছে ডেনভার, কলোরাডো, কলম্বাস এবং ওহাইয়ো’তে। লুইসভিল এবং কেনটাকিতে গুলিতে সাতজন আহত হয়েছেন। মিনিয়েপোলিসের পার্শ্ববর্তী সেন্ট পল শহরেও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। সেখানেও মোতায়েন ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনা স্বাভাবিক হতে পারে না। আমি ভিডিও দেখেছি। ওই দৃশ্য আমার হূদয় ভেঙে দিয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এখনো লাখ লাখ মানুষকে বর্ণের কারণে নিগৃহিত হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ভালো হতে হবে। ফ্লয়েডের মৃত্যুতে নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাশেলেত। তিনি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন ও পুলিশকে সংযত আচরণের আহবান জানিয়েছেন।
ফ্লয়েডের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘু বর্ণ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পুলিশের নৃশংসতা আবার সামনে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে ২০১৯ সালে মারা গেছে এক হাজারের বেশি মানুষ। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান। ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স নামে একটি বেসরকারি সংস্থার চালানো জরিপে দাবি করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তিনগুণ বেশি মারা যায় কৃষ্ণাঙ্গরা।
বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভে ২০১৪ সালে নিউ ইয়র্কে পুলিশের নির্যাতনে নিহত কৃষ্ণাঙ্গ যুবক এরিক গার্নারের মা গোয়েন কার উপস্থিত ছিলেন। ফ্লয়েডের ঘটনা ‘পুরনো ক্ষতে লবন লাগিয়ে দিয়েছে’ বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81