02/24/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2020-07-28 23:33:40
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ফেঁসে যাচ্ছেন। তিনটি দুর্নীতির মামলায় তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই অভিযোগগুলো থেকে প্রাথমিকভাবে তার দায়মোচন পাওয়ার কোন কারণ নেই বলে নিশ্চিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের একাধিক সূত্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, এ ব্যাপারে খুব শীঘ্রই আবুল কালাম আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে ডাকা হবে।
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ একরাশ বিতর্ক মাথায় নিয়ে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। নতুন মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
করোনা সঙ্কটের শুরু থেকেই ডা. আবুল কালাম আজাদ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং একের পর এক বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তিনি জনমনে বিরক্তীর কারণ তৈরী করেন।
পরবর্তীতে দেখা যায়, বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এরকম তিনটি দুর্নীতির অভিযোগে তার সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে;
১. সাহেদ কেলেঙ্কারি
প্রতারক সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির দায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এই মহাপরিচালক কিছুতেই এড়াতে পারেন না বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করছেন। প্রতারক সাহেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি মামলা দায়ের করেছে। আরো একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, সাহেদের সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়েছে সেই চুক্তির দায় মহাপরিচালক এড়াতে পারেন না। এই চুক্তিটিই একটি দুর্নীতি এবং এ ব্যাপারে সাবেক মহাপরিচালকের সংশ্লিষ্টতা কতটুকু ছিলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
২. রিজেন্ট হাসপাতালকে মেশিনপত্র সরবারহ
সমস্ত সরকারী আইন কানুন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই রিজেন্ট হাসপাতালকে মেশিনপত্র সরবারহ করেছিলো অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বাধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখানেও দুর্নীতি দমন কমিশন মনে করছে যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এর দায় এড়াতে পারেন না। কারণ অধিদপ্তরের প্রধান হিসাবে যে কোন কর্মকাণ্ড তার অনুমোদন ব্যতিরেকে হতে পারে না। সেখানে রিজেন্ট হাসপাতালের মতো একটি বেসরকারী হাসপাতালকে সিএমএসডি থেকে কিভাবে দামী মেশিনপত্র সরবরাহ করা হলো সেটি একটি বিস্ময় বলে মনে করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ ব্যাপারেও আবুল কালাম আজাদ দায় এড়াতে পারেন না বলে মনে করছে দুর্নীতি দমন কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র।
৩. জেকেজি কেলেঙ্কারি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতির প্রথম প্রকাশ ঘটে জেকেজি কেলেঙ্কারির মাধ্যমে। জেকেজি নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে করোনার নমুনা পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে সীমাহীন কেলেঙ্কারির মধ্যে জড়িয়ে পড়ে জেকেজি এবং কোনরকম পরীক্ষা না করেই একের পর এক ভূয়া রিপোর্ট প্রদান করতে থাকে।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আরিফুল ও ডা. সাবরিনা গ্রেপ্তারের পর জানা যায় যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের আগ্রহ এবং উদ্যোগেই জেকেজিকে এই ধরণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক করোনা সঙ্কটের সময় কোথাও না গেলেও তিনি জেকেজি’র নমুনা সংগ্রহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
জেকেজি’র সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক হওয়া মহাপরিচালকের সম্পর্ক কি এবং কেন তিনি জেকেজি’কে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি দিলেন এই নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক।
দুদকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদকে ডাকা হবে এবং কেন তিনি এই ধরণের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছিলেন তা জানা যাবে।
আরো বিস্ময়কর ব্যাপার যে, জেকেজি’র ব্যাপারে যখন অভিযোগ করা হয়েছিল তখনো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নির্লিপ্ত থেকেছিলেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, জেকেজি’কে আইন বহির্ভূতভাবে পিপিই, মাস্কসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী দেওয়ার ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উদার নীতি গ্রহণ করেছিলেন।
এটা কি নিছক ভুল নাকি দুরভিসন্ধিমূলক অনিয়ম এবং দুর্নীতি সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যে অভিযোগ উঠেছে সেটা তাঁর দায়িত্বহীনতাই হোক, অযোগ্যতাই হোক বা অজ্ঞাতেই হোক না কেন তা অবশ্যই অন্যায় এবং এটা অনুসন্ধানে যদি দেখা যায় যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের এখানে ইচ্ছাকৃত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তাহলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81