02/24/2025
নিজস্ব প্রতিবেদক | Published: 2020-08-09 21:52:06
করোনা সঙ্কটকালে সবচেয়ে আলোচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যতটা না আলোচিত তার থেকে বেশি সমালোচিত।
অনেকেই মনে করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যর্থ। কেউ কেউ মনে করেন যে, বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের ইতিহাসের সবথেকে খারাপ স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের একজন।
আবার কারো কারো মতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, দায়িত্বহীনতার কারণেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষের স্মৃতি থেকে খুব সহজেই অতীতের অপকর্ম, দুর্বৃত্তায়নের গল্প উবে যায়। আর এজন্যেই আমরা হয়তো বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমালোচনায় মুখর। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে খুব দায়িত্ববান আচরণ করতে পারছেন না তা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই।
কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে, জাহিদ মালেক বাংলাদেশের সবথেকে খারাপ স্বাস্থ্যমন্ত্রী নন।
বাংলাদেশের নিকৃষ্টতম স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে তা নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত ২৯ জন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তাদেরকে সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলা যায়।
বাংলাদেশের সবথেকে সফলতম স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনে করা হয় তাজউদ্দিন আহমেদকে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, এই সময়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের যে চিকিৎসা কাঠামো সেই কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন।
অনেকেই মনে করেন যে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত, মুক্তিযুদ্ধের সময় এটা প্রথম বাস্তবায়ন করেছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ। তাঁর কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চিকিৎসা ক্যাম্প একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে মনে করা হয় অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বা বি.চৌধুরীকে। তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে থাকাবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা পরিকাঠামো নির্মাণ এবং চিকিৎসক-নার্সসহ একটি পূর্ণাজ্ঞ বিন্যাস করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশে টিকা দান কর্মসূচী এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বিকশিত হয়েছিল।
বাংলাদেশের তৃতীয় সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে মনে করা হয় শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে, তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রবর্তিত হয়েছিল এবং তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবায় অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিলেন এবং তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশে বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো বিকশিত হয়েছিল।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে অধ্যাপক ডা. এমএ মতিনকেও একজন সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে মনে করা হয় এবং তাঁর আমলে বাংলাদেশে যুগান্তকারী ওষুধ নীতি হয়েছিল, যা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কর্তৃক প্রণীত হয়েছিল। এছাড়া এম এ মতিন চিকিৎসকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি এবং চিকিৎসা কাঠামোকে যুগোপযুগীকরণ এবং সরকারী হাসপাতালে উন্নত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছিলেন।
সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তালিকায় সালাহউদ্দিন ইউসুফের নামও আসে। যিনি আওয়ামী লীগের হয়ে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর প্রথম দুই বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবার বিকাশ এবং কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন।
তবে এই সাফল্যের ভিড়ে আমাদের ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের তালিকাটাও খুব ছোট নয়। বাংলাদেশের নিকৃষ্টতম স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে মনে করা হয় সাকা চৌধুরীকে। যিনি ১৯৮৬ সালের মে মাস থেকে ৮৮ সালের জুলাই পর্যন্ত ছিলেন।
এই সময়ে তিনি ডাক্তারদেরকে জেলে দেওয়া হবে, চিকিৎসা না দিলে তাঁদের পাকরাও করো ইত্যাদি ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং আপত্তিকর কথা বলে পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে লেজেগোবরে অবস্থা করে ফেলেছিলেন। চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধের জন্যে প্রস্তাবও পেশ করেছিলেন।
নানা কারণে ঘৃণিত, তিরস্কৃত সাকা চৌধুরীর সময়ে বিতর্কিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সবথেকে অস্থির অবস্থা পাড় করেছে বলেও তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়।
দ্বিতীয় নিকৃষ্টতম স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে মনে করা হয় চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফকে। তিনি স্বাস্থ্যখাতে বাণিজ্যকরণ, টেন্ডারবাজি এবং দুর্বৃত্তায়নের সূচণা করেন বলে অনেকে মনে করেন।
১৯৯১ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং এই সময়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে টেন্ডারবাজি, নানারকম অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারীতা এবং বিএনপি দলীয় লোকদেরকে কাজ দেওয়া, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহের নামে অনিয়ম শুরু হয়। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির গুরু মনে করা হয় চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফকে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশের ইতিহাসে তৃতীয় নিকৃষ্টতম এবং সম্ভবত সবথেকে দুর্নীতিবাজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সময়ে ড্যাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একচ্ছত্র লুটপাট, দুর্নীতি শুরু করে। যেকোন নিয়োগ-পদায়নের ক্ষেত্রে টাকা দেওয়া, চিকিৎসকদের পদোন্নতির জন্যে টাকা নেওয়া, সরকারি হাসপাতালের ওষুধ লোপাট করা এবং যন্ত্রপাতি কেনার নামে হরিলুটের এক রাজত্ব কায়েম করেছিলেন এই সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, বিশ্ব ব্যাংক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আমলের পাঁচ বছরে যে টাকা দিয়েছিল তাঁর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকাই লোপাট করেছিলেন ডা. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং ড্যাবের নেতারা।
কাজেই দুর্নীতির সূচণাকারী এবং বিকশিত করার ক্ষেত্রে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্বাস্থ্যখাতে ‘অমর’ হয়ে থাকবেন।
আরেকটি কারণে ড. খন্দকার মোশাররেফ হোসেন বাংলাদেশের নিকৃষ্টতম স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের অনত্যম। সেটি হলো তিনি এসে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার জন্য যে কমিউনিটি ক্লিনিক করেছিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার, সেই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে অপরিণামদর্শী এবং আত্নঘাতী সিদ্ধান্ত।
এভি এমজি তোয়াব ১৯৭৫-৭৬ এ স্বল্প মেয়াদের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সময়ে তিনি তেমন কিছুই করতে পারেননি। বরং তখন তাঁর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁকে ছুঁড়ে দেওয়া হয়।
এইসব পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনেক ব্যর্থ, কিন্তু নিকৃষ্টতম নন। অতীতে যারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ধ্বংস করেছিলেন, সেরকম পরিস্থিতিতে তিনি নেননি। তাঁর দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত এই ভঙ্গুর অবস্থানে দাঁড়িয়ে সমালোচিত হলেও অনেক অর্জনের গর্বও আছে।
সূত্রঃ বাংলা ইনসাইডার
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81