02/24/2025
নিজস্ব প্রতিবেদক | Published: 2020-10-27 02:30:28
শুধু হাজী সেলিমের পুত্রের ঘটনাই নয়, বিভিন্ন স্থানে এমপিদের অনেক বাড়াবাড়ির খবর পাওয়া যায় গণমাধ্যমে।
বিভিন্ন এলাকায় এমপিদের সঙ্গে জন প্রতিনিধিদের দ্বন্দ্ব, জনপ্রতিনিধিদের হুমকি-ধামকি প্রদান করার পাশাপাশি অনেক স্থানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া; প্রকাশ্যে বিরোধ এবং তাদেরকে হুমকি দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। অনেক স্থানে জনপ্রশাসন কর্মকর্তাকে বদলির জন্য দেন-দরবার করা; টেন্ডার এবং বিভিন্ন কাজে হস্তক্ষেপের মতো বাড়াবাড়ির ঘটনাগুলো সরকারের নীতি-নির্ধারকদের নজরে এসেছে।
এ ধরনের ঘটনা যে একেবারে নতুন, তা নয়। অতীতে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে যে, ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় এ ধরণের অপকর্ম গুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি অংশ হিসেবেই পরিগণিত হতো। যে দলই ক্ষমতায় আসতো, তাদের এমপিরা এলাকায় যেন রামরাজত্ব কায়েম করতেন এবং তাদের অবাধ্য হলেই নেমে আসতো হয়রানি, নির্যাতনের খড়গ।
১৯৯১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর কেরানিগঞ্জে আমানউল্লাহ আমান ঘরে আটকে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর করেছিলেন। একই সময় প্রয়াত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাজেদুল ইসলামের রাজনৈতিক অনুসারীরা মাগুরা জেলা প্রশাসককে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল প্রায় ২৪ ঘণ্টা।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও এই ধারা অব্যাহত ছিল। সে সময় ফেনীতে জয়নাল হাজারী কিংবা মোফাজ্জল হোসেন মায়ার পুত্রের দায় পরবর্তীতে আওয়ামী লীগকেই বহন করতে হয়েছিল।
২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকা যেন সরকারদলীয় এমপিদের রাজত্বে পরিণত হয়। এমপিরা যেন ওই এলাকার রাজায় পরিণত হয়েছিলেন। তাদের কথাই ছিল এলাকায় শেষ কথা এবং প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি-জামাতের এমপিরা এক ধরনের ত্রাসের রাজত্ব এবং তাণ্ডব চালিয়েছিল।
সেই সময় সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি-জামাতের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন ৩৭ জন ইউএনও। ১৩ জন জেলাপ্রশাসককে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করতে হয়েছিলো। ৬ জন জেলাপ্রশাসক অপমানিত এবং লাঞ্ছিল হয়ে এলাকা ত্যাগ করেছিলেন।
এখন টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। প্রথম দিকে এমপিদের এ রকম বাড়াবাড়ি এবং অযাযিত হস্তক্ষেপ আস্তে আস্তে কমে আসে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবার নতুন করে এমপি এবং জনপ্রতিনিধিদের কিছু কিছু বাড়াবাড়ি এবং অপতৎপরতা সরকারের নজরে এসেছে। আর এ কারণেই সরকার এসব ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বলে সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, সরকারের পক্ষ থেকে এমপিরা প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে কি ধরণের আচরণ করবে এবং কতটুক পর্যন্ত তারা এলাকায় ক্ষমতা প্রয়োগ করবে- তার সুনির্দিষ্ট সীমারেখা বেঁধে দেয়া হচ্ছে।
একইভাবে প্রশাসন যেন রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে জড়িয়ে না পরে এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মিলে-মিশে অনিয়মে সম্পৃক্ত না হয়- সে ব্যাপারেও একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বলেছেন, জনপ্রতিনিধিরা অবশ্যই সম্মানিত এবং প্রশাসন রাষ্ট্রের কর্মচারী। কাজেই তাদের মধ্যে একটি সুষ্ঠ সমন্বয় এবং একটি সুসম্পর্ক থাকা জরুরী। কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয়। কেউ কারো চেয়ে বড় নয়; বরং পারস্পরিক সমঝোতা এবং আস্থার ভিত্তিতেই কাজ করতে হবে।
আর এই কারণেই এমপিরা যেন নিজেদের এলাকায় বাড়াবাড়ি না করে বা ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে যেন কেউ কোন কিছুর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে না পারে- সে জন্য সরকার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে।
হাজী সেলিমের পুত্রের সাজার ঘটনার পর সরকার স্পষ্ট বার্তা দিলেন যে, কোন বাড়াবাড়িকেই সরকার বরদাস্ত করবে না।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81