02/24/2025
নিজস্ব প্রতিবেদক | Published: 2020-12-18 07:09:40
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য’ যথাসময়ে যথাস্থানে স্থাপন করাসহ তিন দফা দাবি জানিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে আজ।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বাস্তবায়ন পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ স্মারকলিপিটি পাঠানো হয়।
পাঠানো স্মারকলিপিটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
শ্রদ্ধাভাজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
সাম্প্রতিকালে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে উত্তপ্ত বাংলাদেশের রাজনীতি। মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সম্মান প্রদর্শণ করার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঢাকারদোলাইপাড় চত্বরে (যেখান থেকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে শুরু) বঙ্গবন্ধুর একটি আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই মাঝে স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় এই ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এদিকে ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বাস্তবায়ন পরিষদ’ সহ ভাস্কর্য বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত রয়েছে আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসমূহ। ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বাস্তবায়ন পরিষদ’ যে কোন মূল্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছে এবং মুজিববর্ষে, চলতি ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসেই ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য‘ স্থাপন করার দাবি জানিয়েছে। দোলাইপাড় চৌরাস্তার ভাস্কর্য ছাড়াও দেশের প্রতিটি জেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করার জন্য দাবী জানিয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও খেলাফত মজলিশের নেতার কদর্য মন্তব্যের পর ভাস্কর্য ইস্যুতে সারাদেশে তোড়পাড় শুরু হয়। ঐ কদর্য বক্তব্যের সমর্থনে আরো কঠোর মন্তব্য করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নবনির্বাচিত আমির। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের ভাস্কর্য নির্মাণ বিরোধিতাকারীদের ধর্মান্ধ মৌলবাদী বলে তাদের সমালোচনা করেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও এ ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
ভাস্কর্য স্থাপন বিশ্বে বা বাংলাদেশে নতুন নয়। স্বাধীনতার পর এদেশে অনেক ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। ভাস্কর্য বিরোধিতাকারীরা ভাস্কর্য স্থাপনকে মূর্তি স্থাপনের সঙ্গে তুলনা করে এটাকে শিরক সংস্কৃতি বা বিজাতীয় সংস্কৃতি বলে আখ্যায়িত করেছে। ভাস্কর্য (Sculpture) এক ধরনের ত্রিমাত্রিক শিল্পকলা বিশেষ যা বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির অংশ, বিজাতীয় নয়। দেশজ সংস্কৃতিতে যেসব কর্মকাণ্ড শিরক বা আল্লাহর সঙ্গে অংশীবাদিতার মিশ্রণ ছাড়াই পালিত হয়ে আসছে, সেটিকে হঠাৎ করে শিরক সংস্কৃতি বলা নোংরা রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়।
ভাস্কর্য এবং মূর্তির মাঝে অনেক বড় পার্থক্য আছে। ভাস্কর্য হলো সুন্দরের প্রতীক, কিন্তু মূর্তি হলো চেতনার প্রতীক। সব মূর্তিই যেমন ভাস্কর্য নয়, তেমনি ভাস্কর্যকে মূর্তি বলা চলে না। অর্থাৎ ভাস্কর্য আর মূর্তি এক জিনিস নয়।
কোন কর্মকান্ডে আমাদের মনের ভিতর কি নিয়ত করলাম সেটা গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ আমাদের নিয়ত বা চিন্তা বিবেচনা করে বিচার করবেন। একটি প্রতিকৃতিকে যখন কেউ সৌন্দর্যের কোনো কাজে বা ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে ব্যবহার করবে, তখন তা ভাস্কর্য হিসাবে গণ্য হবে। কিন্তু একই প্রতিকৃতিকে কেউ যদি তার চেতনা ও বিশ্বাসের প্রতীক মনে করে পূজা দেয়, তখন তা মূর্তিপূজা হিসাবে গণ্য হবে। হযরত সোলায়মান (আ) এর জমানায় প্রতিকৃতিকে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করত। ফলে সোলায়মান (আ) নিজেই প্রতিকৃতি তৈরি করার জন্যে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সুতরাং, কেবল বাহিরের কাঠামোগত কোনো প্রতিকৃতির মধ্যে নয়, বরং মানুষের চিন্তার মধ্যেই শিরক থাকে। মানুষের চিন্তা ও চেতনার অঙ্গনেই শিরকের অসংখ্য মূর্তি গড়ে উঠে। আমরা বাইরের প্রতিকৃতি নিয়ে খুব সোচ্চার হলেও, ভিতরের মূর্তিগুলো দেখতে পাই না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
বাঙ্গালী জাতির পিতা, স্বাধীনতার মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্দেশ্য ঐতিহাসিক, ধর্মীয় নয়। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদানের কথা বিবেচনা করে এবং পরবর্তীতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম স্বাধীনতার ইতিহাসকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের সঙ্গে মূর্তি পূজা করার কোনো সম্পর্ক নেই।
পৃথিবীর সকল দেশেই জাতির পিতা বা জাতীয় নেতা বা জাতীয় তারকাদের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়ে থাকে, তাঁদের সম্মান করা ও স্মরণীয় রাখার জন্য, পূজা করার জন্য নয়। এসকল ভাস্কর্য জাতিকে উদ্দিপ্ত করে, তাদের বীরত্বকে মনে করিয়ে দেয় যা মোটেও দোষের নয়। অসংখ্য ইসলামিক রাষ্ট্রে এরকম উদাহরণ আছে। যেমন-পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বিশাল আকারের ভাস্কর্য আছে কিন্তু সেটি নিয়ে জনগণের কোনো মাথাব্যথা নেই। পাকিস্তানে রয়েছে আরোও অনেক ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। যেমন—লাহোরে বাদশাহি মসজিদের পার্শ্বে মেরি মাতার ভাস্কর্য, পাঞ্জাবের জং শহরের রাস্তায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়সওয়ারের ভাস্কর্য, লাহোরে ন্যাশনাল কলেজ অব আর্টস প্রাঙ্গণের নানা রকম ভাস্কর্য।
এককালের সারা মুসলিম জাহানের খলিফার দেশ তুরস্ক, সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে ইসলামী দল। তুরস্কের বিভিন্ন স্থানে আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট কামাল আতাতুর্কের রয়েছে অগণিত ভাস্কর্য। একেকটি দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যে একেক রকমভাবে আতাতুর্ক এবং তুরস্কের ইতিহাস, ঐতিহ্য বিবৃত করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপে এরদোয়ানের ভাস্কর্য, যিনি নিজে পবিত্র কোরআনের হাফেজ। তুরস্কের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হলো: মর্মর সাগর তীরে পোতাশ্রয়ে মর্মর ভাস্কর্য, আঙ্কারাতে ইন্ডিপেনডেন্স টাওয়ারের পাদদেশে তুরস্কের জাতীয় সংস্কৃতির ধারকতিন নারী ভাস্কর্য ও আন্তালিয়ায় এডুকেশন অ্যাক্টিভিস্ট তুরকান সায়লানের ভাস্কর্য।
মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত ভাস্কর্য হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শহীদ হওয়া বীরদের স্মরণে ১৫ মিটার উচ্চতার ভাস্কর্যটি যা দ্বারা প্রতীকীভাবে সাতজন বীরের প্রতিমূর্তির মাধ্যমে তাঁদের বিশ্বস্ততা, আত্মত্যাগ আর বন্ধুত্বের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। মালয়েশিয়ার ভাস্কর্য শিল্প সনাতন ও আধুনিক ধারার এক স্বতন্ত্র মেলবন্ধন।
প্রচন্ড-রক্ষণশীল মুসলিম দেশ সৌদি আরবের বাণিজ্যিক রাজধানী জেদ্দা নগরীতে আছে উটের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। রাজধানী জেদ্দার উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে নগরীতে মুষ্টিবদ্ধ হাত, হাংরি হর্স, মানব চোখ, মরুর বুকে উটের ভাস্কর্য।
অষ্টম শতকের সমরনায়ক আবু মুসলিম খোরাসানির ভাস্কর্যের গায়ে আফগানিস্থানের জঙ্গিরাও হাত দেয়নি। গজনীতে এখনো স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে সেই ভাস্কর্য।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81