02/25/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2021-05-03 04:43:21
পশ্চিমবাংলাসহ চারটি রাজ্যসভা এবং একটি রাষ্ট্রপতি শাসিত অঞ্চলের নির্বাচনের ফলাফল এখন ভারতে ঘোষিত হচ্ছে। এই নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবাংলায় শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। মমতা সেখানে ২০১৬ এর ফলাফলই পুনরাবৃত্তি করেছেন। আসামে বিজেপি বিজয়ী হয়েছে তবে সেখানেও খুব ভালো অবস্থানে নেই বিজেপি। কেরালাতে বামজোটরা জয়ী হয়েছে, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে এবং পদুচারিতে এনআরসির বিজয়ের কথা বলছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
তবে এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল পশ্চিমবাংলার নির্বাচন। পশ্চিমবাংলাকে নরেন্দ্র মোদি তার পক্ষের গণভোট হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এই নির্বাচনে জেতার জন্য নরেন্দ্র মোদির বিজেপি যা যা করা দরকার সবই করেছে। নরেন্দ্র মোদি অন্তত আধা ডজন বার কলকাতাসহ পশ্চিমবাংলা সফর করেছেন, তিনি উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলেছেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদকে জাগাতে চেয়েছেন। তাঁর দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি অমিত শাহা এখানে এসেছেন দুই ডজন বারেরও বেশি। তিনি দাবি করেছেন যে পশ্চিমবাংলা তার চষে বেড়ানো হয়েছে।
এই পশ্চিমবাংলা হয়ে উঠেছিল নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তার প্রতীক নির্বাচন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি যে, পুরো ভারতে তার জনপ্রিয়তা আরো বাড়ছে। কিন্তু পশ্চিমবাংলা নির্বাচনে মোদিকে পশ্চিমবঙ্গের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে শুধু মোদিকেই নয়, বিজেপির হিন্দুত্ব, মৌলবাদী রাজনীতিকেও প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর এর ফলেই ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশ্লেষণ চলছে মোদির বিদায় যাত্রার কি সূচনা হলো?
পশ্চিমবাংলা ছাড়াও কেরালা এবং তামিলনাড়ুতে নরেন্দ্র মোদির পরাজয় ঘটেছে। তবে পশ্চিমবাংলার নির্বাচনটি হলো মূল আলোচ্য বিষয়। এই নির্বাচনে পরাজয়ের মধ্য দিয়েই কি নরেন্দ্র মোদির বিদায় যাত্রার সূচনা হলো কিনা সেই প্রশ্ন এখন ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে খুব জোরেশোরে উঠেছে।
গত কিছুদিন ধরে নরেন্দ্র মোদি প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছেন। বিশেষ করে করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে তার সীমাহীন ব্যর্থতা, ভিন্নমত দমনে তার সরকারের কঠোর অবস্থান, আন্তর্জাতিক ব্যর্থ কূটনীতি, একঘরে হয়ে যাওয়া এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর দমন-নিপীড়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে মোদির বিরুদ্ধে কথাবার্তা বিভিন্ন স্থানে বলা হচ্ছিল।
তবে সবকিছুর পরেও মনে হচ্ছিল যে, কর্পোরেট এবং পুঁজিবাদের যে শক্তি নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির রয়েছে সেই শক্তি দিয়ে তাকে হটানো অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবাংলায় কেবল নিজে জয়ী হলেন না, সকলের জন্য একটি উদাহরণ সৃষ্টি করলেন। তা হলো যে, বিজেপি যত বড়ই শক্তিধরই হোক না কেন, কর্পোরেট মিডিয়া এবং ধনিক শ্রেণীরা যতই তাঁর পক্ষে থাকুন না কেন, শেষ পর্যন্ত যদি জনগণ পক্ষে থাকে তাহলে জয় ছিনিয়ে আনা যায়। সেই জয় ছিনিয়ে এনে তিনি পুরো ভারতবর্ষের জন্য এক আশার বানী ছড়িয়ে দিলেন। এটি মোদির মোদির পতনের শুরু হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
কারণ অন্যান্য দলগুলো আশ্বস্ত হবে যে প্রথমত, মোদি বিরোধী আন্দোলন করলে বিজয়ী হওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে জোটবদ্ধ হবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এবং সর্বভারতীয় একটি মোদি-বিজেপি বিরোধী জোট গড়ে উঠবে। সেটি থেকেই যে মোদি বিরোধী একটা বড় ধরনের আন্দোলন হবে সেটা বলাই বাহুল্য।
কৃষক বিদ্রোহ যেমন মোদি দমন করেছিলেন, ঠিক তেমনি করোনার সংক্রমণ দমন করা যাবে বলে মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আর পশ্চিমবাংলার নির্বাচনের পর বিজেপি এবং মোদী সরকারের আস্থাতেও একটু চিড় ধরবে। আর সেই চিড়েই আঘাত করবে বিরোধী দলগুলো। হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে একটা সেকুলার জাগরণ ভারতে এখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81