02/25/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2021-05-05 09:19:42
আজ ৫ মে। ২০১৩ সালের এই দিনে হেফাজত সারা বাংলাদেশে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। গোটা দেশের মানুষ আতঙ্কে, উৎকণ্ঠার এক সময় কাটিয়েছিল। হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির নামে সারাদেশে যে নারকীয় তাণ্ডব দেখেছিল তা ছিল একাত্তরের এক ঝলক।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কওমি মাদরাসার উগ্রবাদী শিক্ষার্থীদের জড়ো করা হয়েছিল। তারা যেখানে যা পেয়েছে তা ভেঙেছে। যেখানে যে নারীকে পেয়েছে সেই নারীর উপর নির্যাতন করেছে।
২০১৩ সালের ৫ মে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সাম্প্রদায়িকতার পথে এক বিরাট অন্তরায়। এই ঘটনাটি আজও বাংলাদেশের হৃদয়ে একটি ক্ষত চিহ্ন হয়ে আছে।
হেফাজত তাণ্ডবের কথা মনে হলেই একজন ব্যক্তির কথা বার বার মনে পরে। তিনি হলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ।
হেফাজত তাণ্ডবে যখন পুরো দেশ অস্থির, ঢাকাবাসী যখন উৎকণ্ঠিত, দমবন্ধ এক পরিস্থিতি গোটা দেশে সেই সময় সৈয়দ আশরাফ ধানমন্ডি ৩ নাম্বারে এক সংবাদ সম্মেলন করলেন।
সেই সংবাদ সম্মেলনে তার উচ্চারণগুলো যেন পুরো গোটা বাঙালী জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বনিত হলো, তার প্রতিটি উচ্চারণ যেন বাঙালির ভয় কাটিয়ে দিলো, তার প্রতিটি শব্দ যেন বাঙালিকে এক নতুন প্রেরণা দিলো। সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন যে, অনেক হয়েছে। আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গবেন না। আমাদেরকে দুর্বল ভাববেন না। আমি বলছি সন্ধ্যার মধ্যে সবাই শাপলা চত্বর এলাকা ত্যাগ করুন।
সৈয়দ আশরাফ এমনিতেই একজন নির্বিবাদী, স্বল্পভাষী মানুষ। কিন্তু রাজনীতিতে কঠিন সময় গুলোতে তিনি ব্যক্তিত্ববান পুরুষ হয়ে জ্বলে উঠেন। নায়কোচিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হন কঠিন সময়ে।
ওয়ান-ইলেভেনের পর ২০১৩ সালের ৫ মে সৈয়দ আশরাফের সাড়ে চার মিনিটের সেই বক্তব্যটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের পক্ষে একটি চিরন্তন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
সৈয়দ আশরাফের সেই কথা একদিকে যেমন মানুষ বিশ্বাস করেছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনুপ্রাণিত হয়েছিল আর হেফাজতের সেই তাণ্ডবকারীরা একটু হলেও থমকে দাঁড়িয়েছিল। এই হেফাজতের তাণ্ডবের মুখে বুক চিতিয়ে কে বলে সাহসের কথা। ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবের পর ৮ বছর গত হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানারকম পালাবদল হয়েছে। সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ ছেড়ে দিয়ে এখন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। কিন্তু এই একটি ঘটনার জন্য সৈয়দ আশরাফকে মানুষ মনে রাখবে।
আজকে যখন রাজনীতিতে সুবিধাবাদী এবং আপষকামীদের ভিড়, যখন কথামালা দিয়ে রাজনীতিতে নানারকম রং তামাশার ভিড়ভাট্টা সাজানো হয় সেই সময়ে রাজনীতিতে নায়কের চেয়ে কৌতুক অভিনেতার সংখ্যাই বেশি। রাজনীতিবিদরা যে কথাগুলো বলেন তাতে মানুষ বিশ্বাস করুক আর না করুক কিছুটা কৌতুক অনুভব করেন। আর সেই কৌতুক অভিনেতাদের ভিড়ে একজন নায়ক সৈয়দ আশরাফ।
হেফাজতের তাণ্ডবের কথা যতবার উচ্চারিত হবে ততবার সৈয়দ আশরাফের ভরাট বিরচিত কণ্ঠস্বরগুলো প্রতিধ্বনিত হবে। সেই কণ্ঠস্বর দ্বিতীয় দফায় হেফাজতকে দমনের জন্য বড় প্রয়োজন ছিলো।
হেফাজত তাণ্ডবের ৮ বছর পূর্তি যখন হচ্ছে তখন হেফাজতকে নতুন করে দমন করা হচ্ছে। সেই দমন যেনো পুরোটা হয় এবং হেফাজত যেন বাংলাদেশ থেকে নিঃশেষিত হয়। তাহলেই সৈয়দ আশরাফের আত্মা শান্তি পাবে, শহীদরা শান্তি পাবে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81