02/25/2025
বিশেষ সংবাদদাতা | Published: 2021-08-29 23:46:48
বিশেষ সংবাদদাতা : তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ কর্মকর্তা কর্মচারিদের সম্পদের পাহাড়, দায়িত্বে গাফেলাতি ঘুষ, অবৈধ লেনদেনসহ নানা অনিয়ম তদন্তে সংস্থাটির উপর নজরদারি বাড়াচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। দুদক সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ দিকে বছরের পর বছর ধরে অবৈধ গ্যাসের সংযোগ থেকে অর্থ হাতিয়ে বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক কর্মকর্তাদের সাথে এ নিয়ে কথা বলতে গেলে গণমাধ্যমে কাছে এ বিষয়ে তালিকা চান তারা। বলেন, গণমাধ্যম তালিকা দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন তারা!
তিতাসের অবৈধ সংযোগেরঅভিযোগ নতুন কিছু নয়। আবার এ নিয়ে লঘু তিতাসগ্যাস-দুদক খেসারতও কম দিতে হয়নি আমাদের । মগবাজরের সাম্প্রতির ভয়াবহ বিষ্ফোরণে হতাহতের কারণ অনুসন্ধ্যানে গঠিত কমিটির রিপোর্টে ঘটনার জন্য তিতাসের অবৈধ সংযোগকে দায়ি করা হয়েছে। একই সাথে নারায়নগঞ্জ মসজিদে তিতাসের অবৈধ সংযোগ থেকে সৃষ্ঠ বিস্ফোরণে ঝরে গেছে ২৪টি তাজা প্রাণ। এসব ঘটনায় সমগ্র জাতি শোকাহত হলেও দূর্নীতিবাজ ঘুষখোর তিতাসের কর্মকর্তা কর্মচারিদের যোগসাজসে অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যবসা থেমে নেই। আমাদের অনুসন্ধ্যানের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে খোদ রাজধানীসহ এর আশ পাশ ঘিরে লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে মাতুয়াইল এলাকাটি অবৈধ গ্যাস সংযোগের হটস্পট হয়ে উঠেছে। এ এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগটি অনেকটা ওপেন সিক্রেটের মতো ব্যাপার। কিন্তু ভয়াবহ বার্তাটি হচ্ছে এ এলাকায় গ্যাসের আবাসিক সংযোগ নিয়ে চালানো হচ্ছে বিভিন্ন শিল্প কারখানা। যা ভয়াবহ ঝুঁিকতে ফেলেছে গোটা এলাকার অধিবাসীদের। বড় কোন দূঘর্টনার শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই। আব্দুর রহমান। মাতুয়াইলের একজন স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি জানান, এ এলাকার বড় একটি অংশ তিতাসের সংযোগ হচ্ছে অবৈধ। সেই সাথে আবাসিক সংযোগ ব্যবহার করে চালানো হচ্ছে বিভিন্ন কলকারখানা। কখন যে কি ঘটে! সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। সরেজমিন মাতুয়াইল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এ । এলাকায় প্রায় প্রতিটি ভবনেই গড়ে উঠেছে ছোট বা মাঝারি ধরণের কুঠির শিল্প টাইপের কারখানা। আর এর প্রায় প্রতিটিতেই রয়েছে তিতাসের অবৈধ সংযোগ। মাস শেষে এসে তিতাসের নির্ধারিত লাইন ম্যান টাকা নিয়ে যাচ্ছে । যার ভাগ যাচ্ছে উপরের কর্মকর্তাদের পকেটেও। মজার বিষয় হচ্ছে এসব কারখানা অধিকাংশই চলছে ভাড়া বাড়ীতে। কারখানা অধিদপ্তরের বা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন নিয়মের বালাই নেই এসব কারখানায়। অর্থাৎ নিয়মের বাইরে চলা এখানে নিয়মে পরিনত হয়েছে।
কেস স্যাডি-০১: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী পেরুলেই মাতুয়াইল মৃধাবাড়ী। এলাকাটি আগে ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় ছিলো। সম্প্রতি এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর আওতায় এসেছে। একই সাথে রাজউকের আওতায়ও এসেছে এলাকাটি। এলাকার অধিকাংশ বহুতল ভবন চলছে অবৈধ গ্যাসের সংযোগে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মাত্র দুটি চুলার অনুমোদন নিয়ে একই ভবনে অবৈধভাবে চলছে ২০/২২টি চুলা। বাড়ীর গ্যাসের বিল ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে আদায় করছেন বাড়ীওয়ালা নিজেই। ভাড়ার সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছে গ্যাসের বিল। লাইন ম্যানেরা এসে মাস শেষে বাড়ীওয়ালার কাছ থেকে টাকা বুঝে নিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রতিমাসে অবৈধ লেনদেন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
কেস স্টাডি-০২: অবৈধ গ্যাসের সংযোগে এ এলাকায় চলছে অনেক দাহ্য পদার্থ উৎপাদনের কারখানা। অনেক বাড়ীতে উপরের তলায় বসবাস করছেন আবার নীচ বা মাঝের তলায় চলছে কারখানা। মাতুয়াইল মৃধাবাড়ীর (পানির পাম্পের পাশে) অবস্থিত বাড়ীটির মালিক শফিকুল ইসলাম মৃধা। তার বাড়ীতে রযেছে আবাসিক গ্যাস সংযোগ। বিলও পরিশোধ হচ্ছে আবাসিক সংযোগের। এ বাড়ীতে রয়েছে একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব তৈরীর কারখানা। তাজ ব্রান্ডের বাল্ব ফ্যাক্টরীর মালিক বিল্লাল হোসেন। বেল্লালের বাড়ী শরীয়তপুরে। লেখাপড়া খুব না থাকলেও অবৈধ ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে তিনি অনেক অর্থ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। প্রতিদিন এ ফ্যক্টরীতে ১২-১৫ হাজার বাল্ব উৎপাদন হচ্ছে ফ্যাক্টরীতে। আর তা বাজারজাত করা হচ্ছে দেশের অনেক অঞ্চলে। বেল্লাল শুধু অবৈধ গ্যাসই ব্যবহার করছে না, কারাখানা পরিচালনার বৈধ কাগজপত্র বলতে যা বোঝানো হয় তারই সবই তার ভূঁয়া। সরকারের ভ্যাট ট্যাক্সও দীর্ঘ সময় ধরে ফাঁকি দিয়ে চলেছেন এই বেল্লান হোসেন।
কেস স্টাডি-০৩ মৃধাবাড়ী এলাকার স্বপন মৃধার বাড়ী। এলাকায় এখনো পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন এর হোল্ডিং নং বসেনি। এ বাড়ীর তৃতীয় তলায় চলছে প্রদ্বীপ ব্যান্ডের রঙিন বাল্ব তৈরীর কারখানা। ৮/১০ বছর ধরে চলছে এটি। প্রদীপের নেই বৈধ কর্তৃপক্ষের দেয়া কাগজপত্র। নিয়ম মানার কোন বালাই নেই। কিন্তু ব্যবসা চলছে ঠিকঠাক। এখানেও ব্যবহার হচ্ছে তিতাসের অবৈধ সংযোগ। আবাসিক সংযোগের আড়ালে চালানো হচ্ছে বানিজ্যিক উৎপাদনের কাজ। অবৈধ ব্যবসায় ফুলে ফেপে ওঠা প্রদ্বীপ ধরাকে সরা জ্ঞান কওে চলেন। গড়ে তুলেছেন অবৈধ আয়ে চারিদিকে সম্পদের পাহাড়।
কেস স্টাডি-০৪: মীর হাজির বাগ কবর স্থানের সাথে তৃতীয় তলা ভবনের নীচ তলায় সাদেক এন্ড কোং এর জনতা ব্রান্ডের বাল্ব কারখানা। মুন্সিগঞ্জের জাজিরার সাদেক এখানেও অবৈধ আবাসিক গ্যাসের সংযোগে চালাচ্ছেন এ কারখানা। তারও নেই বিএসটিআই বা পরিবেশের কাগজপত্র। বিষ্ফোরক অধিদপ্তর কি তাও জানেন না তিনি। ফায়ার ট্রেডমার্ক বা প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজের ধার ধারেন না এসব ব্যবসায়ীরা।
গেন্ডারিয়ার সাধন দাস। মিল ব্যারাকের ইলিয়াস, বংশালের কনা পার্টি সেন্টারএ নজরুলের নি¤œ মানের বাল্ব সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ।
সম্প্রতি দূর্নীতি দমন কমিশন তিতাসের ৩০জন কর্মকর্তাকে তলব করেছে। তাদের অবৈধ ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের হিসেবে চেয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু দুদকের সূত্র বলছে এ সংস্থার শত শত কর্মকর্তা কর্মচারি এখন তাদের নজরদারিতে রয়েছে। শুধূ অবৈধ আয়ের ব্যাপার নয় সরকারি অর্থ চুরি বা চুরিতে সহযোগিতা করার কারণে অনেককেই সহসা তলব করা হভে যা দূর্নীতির লাগাম কিছুটা টেনে ধরা যাবে বলে মনে করছেন দুদকের দাযিত্বশীল ব্যক্তিবর্গ।
অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যাপারে তিতাস গ্যাস টি এন্ড টি কোম্পানীর লি: টিকাটুলি শাখা অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মার্কেটিং প্রকৌশলী মোঃ নাসিমুল হক বলেন, আপনারা অঅমাদের তালিকা দেন। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিব। একেক একেকটি কারখানায় ১০/১২ বছর ধরে অবৈধ গ্যাস পুড়ছে। কিভাবে সেটা সম্ভব? এখানে তিতাসের কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করলে অনেকটা চুপ থাকেন তিনি। মাতুয়াইল ও মিরহাজির বাগ জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ আতিকুল হক বলেন, আমি এ লাকায় নতুন এসেছি। অনেক কিছুই জানিনা। আপনারা তালিকা দিলে আমরা অব্যশই ব্যবস্থা নিব।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81