02/25/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2022-07-25 21:25:53
ঘুষ ছাড়া যেখানে ফাইল না নড়ার অভিযোগ তার নাম গনপূর্ত অধিদপ্তর। অফিসের ছোট কর্তা থেকে শুরু করে বড় কর্তা পর্যন্ত সবাই ঘুষের সাথে সম্পৃক্ত এমন অভিযোগ ঠিকাদারদের মুখে মুখে। তার পরেও ঠিকাদাররা অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে মিলেমিশে ম্যানেজ করে কাজ করে থাকে। অতি সম্প্রতি ঘুষ দাবির পরিমান সীমানার বাইরে চলে যাওয়ার কারনে সাইমন ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সত্ত্বাধিকারী আব্দুল আউয়াল (সাইমন) গনপূর্ত অধিদপ্তরের ই.এম কারখানা বিভাগ শেরে বাংলা নগর এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে বিল প্রাপ্তিতে ২০% ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে আইনি নোটিশ প্রেরন করেন। এ ঘটনার ফলে গনপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখায় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আকতার দ্য ফিন্যান্স টু'ডে কে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি আজই অবগত হয়েছি। তদন্ত করে যদি এর সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে'।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম কারখানা বিভাগে কাজ শেষ করেও বিল জমা দিতে পারছেন না ঠিকাদাররা। কারণ শুধু ‘কাজ শেষ’ করলেই তো হবে না। সেই কাজের বিল বানানোর প্রত্যয়নপত্র নিতে আগাম ‘কমিশনও’ যে দিতে হবে!
আর সেই কমিশন, সোজা বাংলায় ২০ শতাংশ ঘুষ না পেয়ে প্রত্যয়নপত্র না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ মিয়ার বিরুদ্ধে। আর এই ‘অভিনব’ ঘুষের প্রস্তাবে তার দোসরের ভূমিকায় আছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল আল মামুন।
সম্প্রতি রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এই দুজনের বিরুদ্ধে এক ঠিকাদারের লিখিত অভিযোগের সূত্রে সামনে এসেছে এই ‘ঘুষের তথ্য’। অভিযোগটি করেছেন সাইমন ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আব্দুল আউয়াল সাইমন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০ শতাংশ ঘুষ না পেয়ে প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর না দিয়েই ক্ষান্ত হননি প্রকৌশলী ইউসুফ, এরপর ওই ঠিকাদারকে হেনস্তা করতেও ছাড়েননি তিনি। পরবর্তী ঘটনার পর এবার আদালতের শরণ নিয়েছেন ঠিকাদার আব্দুল আউয়াল সাইমন।
গতকাল রোববার একজন আইনজীবীর মাধ্যমে একটি লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন ই/এম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ মিয়ার বিরুদ্ধে। যার স্মারক নং- ২৫.৩৬২৬৮০.৫৩৩। দরপত্র আই.ডি নং- ৫৮৬১০৮।
অভিযোগ সূত্র জানায়, শেরেবাংলা নগরস্থ মানসিক হাসপাতালের এলইডি সাইনবোর্ডের ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ৩৩২ টাকার কাজটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই সম্পন্ন করেছে। বিল দাখিলের জন্য কাজ শেষে প্রত্যয়নপত্র নিতে গেলে নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ মিয়া এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল আল মামুন মোট কাজের ২০ শতাংশ ঘুষ দাবি করেন ঠিকাদার সাইমনের কাছে। নইলে সেই প্রত্যয়নপত্র দেওয়া সম্ভব হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় তাকে।
সায়মন জানান, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ইস্কান্দার আলী বিষয়টি সুরাহার জন্য ইউসুফ মিয়াকে অনুরোধ করলে তিনিও তোপের মুখে পড়েন। পরে ই/এম বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর পর্যন্ত গিয়ে সুরাহা না পেয়ে শেরেবাংলা থানায় হাজির হয়ে লিখিত করেন ঠিকাদার সাইমন।
এ বিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল আল মামুন বলেন, ‘আমি কোনো বক্তব্য দিতে চাই না। নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার (ইউসুফ মিয়া) এ বিষয়ে যা বলার তিনিই বলবেন।’
এ বিষয়ে অভিযোগকারী সাইমন ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আব্দুল আউয়াল সাইমন বলেন, ‘তারা যে অভিযোগ তুলেছেন সব মিথ্যা-বানোয়াট। আমার কাছে সকল ডকুমেন্ট আছে। আমি তাদের ঘুষ দেইনি বলে তারা আমার টাকা দেবেন না। প্রতিনিয়ত ঘোরাচ্ছেন। সঠিক নিয়মে শতভাগ কাজ আমি করে দিয়েছি। যে কারণে এ কাজে লাভের অঙ্ক খুবই সীমিত। এমনিতেই কাজটি করতে আমার অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। আমি আমার কষ্টের টাকা বিনিয়োগ করেছি এই কাজে। তার ওপর ২০ শতাংশ আগাম ঘুষ আমি কোত্থেকে দেব? এখন তাদের ঘুষ দিতে পারিনি বলে তারা আমার বিল তো দূরে থাক, বিলের প্রক্রিয়াই আটকে দিয়েছে।’
সাইমন আরো বলেন, ‘শুধু আমি নই। অনেক ঠিকাদারের সাথেই এই নির্বাহী প্রকৌশলী একই রকম কাজ করেছেন। তিনি টাকা ছাড়া কিছু বোঝেন না।’
এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ মিয়াকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি, খুদেবার্তা পাঠালে ফিরতি জবাবও দেননি।
উল্লেখ্য যে, গনপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীদের একটি বিরাট সিন্ডিকেট রয়েছে। এ সিন্ডিকেটের প্রধান হোতা বিএনপি জামাতের আশীর্বাদপুষ্ট একজন নির্বাহী প্রকৌশলী। যিনি গৃহায়ন ও গনপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে কমিশন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। তার এ সিন্ডিকেটের বাইরে কাহারো কোনো কাজ করার ক্ষমতা নাই। এর ফলে গনপূর্ত অধিদপ্তরে সুশাসন বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে পরেছে।
অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ এর বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ ''ওপেন সিক্রেট''। তার অফিসেই মূলত ঘুষের হাট বলে ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছে। এ ব্যাপারে কিছু তথ্য প্রমান দ্য ফিন্যান্স টু'ডে এর হাতে রয়েছে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81