02/23/2025
সামি | Published: 2018-05-10 21:44:06
এফটি বাংলা
একটি দেশ কিভাবে রাতারাতি বদলে যেতে পারে, তার প্রকৃত উদাহরণ মালয়েশিয়া। আর যাঁর হাত ধরে বদলেছে, তিনি ডা. মাহাথির মোহাম্মদ। যিনি সাধারণের মাঝেও অসাধারণ।
মালয়েশিয়ার মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় দীর্ঘ ১৫ বছর পর পুনর্বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। বার্ধক্যে জর্জরিত মাহাথির ৯২ বছর বয়সে আজ (১০ মে) দ্বিতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করছেন।
১৯২৫ সালের ১০ জুলাই মালয়েশিয়ার কেদার অঞ্চলের সেতার নামক এক গ্রামে জন্মেছিলেন মালয়েশিয়ার রূপকার এই মহান নেতা মাহাথির।
তাঁর বাবা ছিলেন সাধারণ এক স্কুল শিক্ষক। ইংরেজি পড়াতেন। বাবার কাছ থেকেই ইংরেজি ভাষার প্রতি আগ্রহ জন্মায় মাহাথিরের।
আর্থিক টানাপড়েন থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র মেধার জোরে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি হন মাহাথির। সেখানে তিনি সব শিক্ষার্থীদের পেছনে ফেলে ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
এরপর ১৯৪৭ সালে সিঙ্গাপুরের ‘কিং এডওয়ার্ড সেভেন’ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন মাহাথির। ওই মেডিক্যাল কলেজে মাহাথিরসহ মাত্র ৭ জন শিক্ষার্থী ছিলেন মালয়েশীয়।
সিঙ্গাপুরে এমবিবিএস শেষ করে নিজ দেশ মালয়েশিয়ায় ফিরে আসেন মাহাথির। যোগ দেন মালয়েশিয়ার একটি সরকারি হাসপাতালে। পাশাপাশি নিজেও একটি ব্যক্তিগত ক্লিনিক খুলে বসেন।
চিকিৎসা সেবার মধ্য দিয়েই সাধারণ মানুষের কাছাকাছি থাকার সুযোগ পান মাহাথির। তখন থেকেই তাঁর মধ্যে রাজনীতি করার সুপ্ত বাসনা জন্ম নেয়।
রাজনীতির জন্য এক সময় সরকারি চাকরিও ছেড়ে দেন মাহাথির। এরপর ইউএনএমও ( ইউনাইটেড মালায়েস ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন) থেকে মালয় প্রাদেশিক রাজ্যের শীর্ষ পদ লাভ করেন।
ডা. মাহাথির মোহাম্মদ ১৯৬৪ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আবার ১৯৬৯ সালে পুনরায় সাংসদ হন তিনি। ওই একই বছর প্রধানমন্ত্রী টেঙ্কু আব্দুর রহমানের সঙ্গে মতবিরোধের জের ধরে রাজনীতি থেকে অবসর নেন মাহাথির।
রাজনীতি থেকে বেশীদিন দূরে থাকতে পারেননি গণমানুষের নেতা মাহাথির। ১৯৭২ সালে আবার রাজনীতিতে ফিরে সিনেটর নির্বাচিত হন।
১৯৭৪ সালে তাঁর দল ইউএমএনও নির্বাচনে জয় লাভ করলে মাহাথির শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান। কিন্তু দলটির প্রধানমন্ত্রী তুন হোসেন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে, ১৯৭৬ সালে উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান মাহাথির।
এরপর ১৯৮১ সালের নির্বাচনে মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন ডা. মাহাথির বিন মোহাম্মদ।
মালয়েশিয়াকে যেভাবে বদলে দিয়েছিলেন মাহাথির
দীর্ঘ ২২ বছর প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে গোটা মালয়েশিয়াকে বদলে দেন মাহাথির। প্রায় শূন্য থেকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে যায় মালয়েশিয়া। এরপর ২০০৩ সালে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা থেকে সরে আসেন মাহাথির।
ক্ষমতা থেকে সরে গেলেও ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন মাহাথির।
ক্ষমতায় এসে মালয়েশিয়ার সকল মুসলিমদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেন মাহাথির। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ৯৫ শতাংশ খরচ সরকারের বহন করার নীতি চালু করেন মাহাথির।
এরপর তিনি দেশের উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়ন করা শুরু করেন। ১৯৯২ সালে নিজ দেশের সবাইকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়ে বিদেশ থেকেও শ্রমিক আনা শুরু করেন। সে সময় প্রায় ৮ লাখ বিদেশি শ্রমিককে মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেন মাহাথির।
দেশ থেকে প্রচুর পণ্য রপ্তানি শুরু করেন। ওই একই বছর ১৯৯২ সালে শুধু যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতেই ৬৫০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করে মালয়েশিয়া।
এরপর পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার নির্মাণ, সমুদ্র থেকে ৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি উদ্ধার, অত্যাধুনিক এয়ারপোর্ট তৈরি, একাধিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, প্রধান সড়ক নির্মাণসহ মাহাথিরের অসংখ্য উদ্যোগ সফল হয়।
১৯৯০ সালেই মালয়েশিয়ার বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছাড়িয়ে যায় ৮ শতাংশের বেশি। ১৯৮২ সালে থাকা মালয়েশিয়ার ২৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ জিডিপি ২০০২ সালে এসে দাঁড়ায় ৯৫ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
মালয়েশিয়ার সরকারি দপ্তরগুলোতে আমূল পরিবর্তন আনেন মাহাথির। সরকারি কর্মীরা যেন ঠিক সময়ে অফিসে আসেন তার জন্য প্রথমবারের মতো কিছু নির্দেশিকা চালু করেন।
বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোর তালিকায় মালয়েশিয়াকে ১৪তম স্থানে নিয়ে আসেন এই মহান নেতা।
ব্যক্তিগত জীবনে বেশ পরিশ্রমী, সুশৃঙ্খল ও সময় সচেতন মানুষ ছিলেন মাহাথির। সাধারণ কর্মীদের মতো তিনি নিজেও সঠিক সময়ে দপ্তরে হাজির হতেন। শুধু আদেশ দিতেন না নিজ হাতে কাজও করে দেখাতেন মাহাথির।
বিখ্যাত ‘টাইম’ ম্যাগাজিন একবার তাঁর অফিসে প্রবেশ করার সময় রেকর্ড করেছিল। পরপর পাঁচ দিন তিনি অফিসে প্রবেশ করেছিলেন সকাল ৭:৫৭, ৭:৫৬, ৭:৫৭, ৭:৫৯, ৭:৫৭ মিনিটে।
মাহাথির ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী একজন মানুষ। চীনা, মালয়ী, তামিলসহ বিভিন্ন জাতিতে বিভক্ত মালয়েশীয় নাগরিকদের সংঘবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।
মাহাথিরের স্ত্রীর নাম সিতি হাসমাহ। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়ার সময় ওই কলেজে যে ৭ জন মালয়েশিয়া শিক্ষার্থী ছিলেন, তার মধ্যে একজন ছিলেন সিতি হামসাহ।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একজন সফল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আজও সারা বিশ্বে জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে আছেন মহান নেতা ডা. মাহাথির মোহাম্মদ।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81