02/25/2025
ড. তোফায়েল আহমেদ | Published: 2023-02-26 10:05:03
শনিবার সকাল ১০৩০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হেসেন মানিক মিয়া হলে ইনিশিয়েটিভ ফর প্রমোশান অফ লিবারেল ডেমোক্রেসির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি প্রাক্তন জাতীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল আজিম। প্রফেসর ড. তোফায়েল আহমেদ (স্থানীয় শাসন বিশেষজ্ঞ) মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে ড. তোফায়েল আহমেদ পাঁচটি সংস্কার প্রস্তাব আলোচনার জন্য তুলে ধরেন। সে পাঁচটি প্রস্তাব হলো:
১.সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (Proportional Reresentation) ভিত্তিতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান,
২. দ্বি-কক্ষবিশিস্ট আইনসভা প্রবর্তন
৩.জাতীয় বিকেন্দ্রায়ন নীতি প্রণয়ন ও এ নীতির আলোকে শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস
৪. একটি একীভূত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান আইন ও একক তফসিলে সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং
৫. ভোটার অংশগ্রহন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনে ’পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি” চালু এবং এনআরবি ও প্রবাসীদের ভোটাধিকার চর্চার সুযোগ দান।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব সম্পর্কে উপস্থাপিত প্রবন্ধে ড.আহমেদ বলেন বিশ্বের ৯২টি দেশে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা চালু আছে। এই পদ্ধতির নির্বাচনে প্রতিটি ভোট সমান গুরুত্বের সাথে মূল্যায়িত হয়। চলমান সাধারণ সংখ্যাগরিস্ট পদ্ধতির নির্বাচনে সকল সময়ে দেশ মাইনরিটি দ্বারা শাসিত হয়। তিনি ১৯৯১ থেকে ২০০৮ এ অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচনের প্রাপ্ত ভোট ও প্রাপ্ত আসনের গরমিল বিশ্লেষণ করে দেখান যে, ১৯৯১ সনে বিএনপি ৩০.৮১% ভোট পেয়ে ৭০% ভোটের বিপরীতে দেশ শাসন করে। ১৯৯৬ সালে আওযামী লীগ ৩৭.৬১% ভোট পায়। বিপরীতে ভোট পড়ে ৬২.৫৬%।এভাবে আসনভিত্তিক নির্বাচনে দেশে সংখ্যাগরিস্ঠের গণতান্ত্রিক শাসন বাধাগ্রস্থ হয়। একই রকমের ফলাফল বাকি দুটি নির্বাচনেও দেখা যায়। সাধারণ সংখ্যাগরিস্ট পদ্ধতির নির্বাচন সংখ্যালঘিস্টের শাসনের একটি অস্বচ্ছ ফাঁদ।
দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে ড তোফায়েল বলেন, বিশ্বে ১৯২টি দেশে বিভিন্ন ধরনের আইনসভা আছে। তার মধ্যে ৮৭টি দেশের আইনসভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, নেপাল,পাকিস্তান ও ভূটানের পার্লামেন্ট দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট। তিনি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পাঁচটি সুনির্দিষ্ট ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন।
বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ক জাতীয় নীতি প্রসঙ্গে ড. তোফায়েল তাঁর প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি ও শাসন-প্রশাসনের অতিকেন্দ্রায়ন কোন নতুন আবিষ্কার নয়। এখান থেকে ধীরে ধীরে বের হওয়ার জন্য একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন প্রয়োজন। এ প্রবন্ধে তার কিছু রূপরেখা রয়েছে।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে বলা হয়, দেশে স্থানীয় সরকারের নগর-গ্রাম বিভাজন এখন অর্থহীন। এ দেশে একীভূত ও সুমন্বিত একটি স্থানীয় সরকার কাঠামোর পুনর্গঠন প্রয়োজন। যা হবে সংসদীয় পদ্ধতির এবং জেলা থেকে ইউনিয়নে তখন একটি মাত্র তফসিলে সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
সর্বশেষ সংস্কার তালিকার বিষয়টি ছিল জাতীয় নির্বাচনে সবার জন্য পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার অপশন উম্মুক্তকরণ। দেশে নানা কারণে মানুষ ভোট কেন্দ্রবিমূখ। ভোট কেন্দ্রবিমূখতা রাজনীতি ও ভোট বিমূখতা নয়। দেশে প্রায় ১কোটি ৪০ লক্ষ ভোটার এনআরবি বা প্রবাসী শ্রমিক হিসাবে দেশের বাইরে অবস্থান করেন। ভোট দান তাদের সাংবিধানিক অধিকার। পোস্টাল ব্যালট উম্মুক্ত করে তাদের ভোট দানের সুযোগ সৃষ্টি করার আহবান জানানো হয়।
প্রবন্ধ উপস্থাপনের পূর্বে অনষ্ঠানের সভাপতি প্রকৌশলী ফজলুল আজিম উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানান এবং আইএলডির পরিচিতি প্রদান করেন।
তিনি বলেন, এই আলোচনা মূলত একটি মুক্ত বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবি ও সাধারণ নাগরিকগন এই চর্চা থেকে লাভবান হবেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রাক্তন সচিব ও আইএলডির সদস্য আবদুল লতিফ মন্ডল।
আলোচনায় অংশ গ্রহন করে প্রাক্তন এমপি হাফেজ আহমদ মজুমদার বলেন, এই আলোচনায় উপস্থাপিত প্রতিটি বিষয় বিষদ আলোচনার দাবীদার।
বাসদের রাজেকুজ্জান রতন বলেন, মধ্যবিত্তরা এখন কথা বলতে ভয় পায়। তিনি আনুপতিক প্রতিনিধিত্ব ও পোষ্টাল ব্যালট চালুর ব্যাপারে তার দৃঢ সমর্থন ব্যক্ত করেন। প্রবাসী ও এনআরবিদের রেমিটেন্স পেতে আমরা আগ্রহী কিন্তু তাদের ভোটদান প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার জোর প্রচেস্টা নিতে হবে।
অন্যান্যদের মধ্যে প্রাক্তন সচিব এহসান শামীম, প্রাক্তন পরিকল্পনা সচিব আখতার হোসেন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না, বার্ডের প্রাক্তন পরিচালক হাসান সারওয়ার, আইপিএডির ট্রেজারার তাহমিন বানু, ফিরোজ শাহ মাইজভান্ডারী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমজাদুর রহমান প্রমূখ আলোচনায় অংশগ্রহন করেন।
প্রাক্তন সচির আবদুল লতিফ মন্ডল পাঁচ প্রস্তাবের সাথে একমত প্রকাশ করে বলেন নতুন নতুন বিভাগ সৃষ্টি না করে প্রদেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তাছাড়া বিকেন্দ্রিকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রশাসনের জট খোলার জন্য্ বিকেন্দ্রিীকরণের কোন বিকল্প নেই।
প্রাক্তন সচির আবদুল লতিফ মন্ডল পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81