02/25/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2023-04-04 17:02:00
গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটি সরকারকে নিজ দেশের জনগনের সুবিধার্তে অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়। এক্ষেত্রে অধিকাংশ উন্নয়নকাজই গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে থাকে সরকার। আর এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এই সংস্থার প্রধান প্রকৌশলীকে হতে হয় দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং চৌকস।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, গনপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক দুই প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম এবং আশরাফুল আলম ও তার অনুসারীদের লাগামহীন দুর্নীতি, একের পর এক স্ক্যান্ডাল, বদলী ও কমিশন বানিজ্য, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঠিকাদারী নিয়ন্ত্রন, সরকারের গুরুত্বপূর্ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে চরমমাত্রার উদাসীনতা, প্রকৌশলীদের তদারকির অভাব ও অযোগ্যতার কারনে রীতিমতো ডুবতে বসেছিল গনপূর্ত অধিদপ্তর। সরকারকে হতে হয়েছিল বিব্রত।
দুর্নীতিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে প্রথমেই ভয়াবহ ইমেজ সংকটে পড়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর। টেন্ডার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়, বড় বড় ১৭টি প্রকল্পের নির্মাণকাজ।
জি কে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর, মুখ থুবড়ে পড়ে প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজ। সমালোচনার মুখে পড়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর। বেরিয়ে আসতে থাকে টেন্ডার বাণিজ্য ছাড়াও, বদলি ও কমিশন বাণিজ্যের ভয়াবহ অভিযোগ। এসব সংশ্লিষ্টতায় দুর্নীতি দমন কমিশনের মুখোমুখি হন, সাবেক প্রধান প্রকৌশলীসহ বেশকজন কর্মকর্তা।
বিব্রতকর এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের লক্ষ্যে সরকার গনপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। দায়িত্ব দেয়া হয় শামীম আখতারকে।
২৫ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর মোহাম্মদ শামীম আখতার গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই মোহাম্মদ শামীম আখতার গনপূর্ত অধিদপ্তরের সব বদনাম ঘোচানোর পাশাপাশি ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেন। বিতর্কিত প্রকৌশলীদের মোখিক ও লিখিতভাবে সতর্কবার্তা প্রেরনের পাশাপাশি শাস্তিমূলক বদলী করেন। ঠিকাদারী সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে নিয়ম মেনে সব ঠিকাদারকে কাজ দেয়ার ব্যবস্থা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলে হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রধান প্রকৌশলী শতভাগ ইজিপির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন।
শুরু হয় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। একে একে বাতিল করা হয় জি কে বিল্ডার্স ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকা প্রকল্পগুলোর চুক্তি। ১৭ প্রকল্পের ১৫টি পুনরায় টেন্ডার করে, দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ১৫ প্রতিষ্ঠানকে। এতে গতি ফিরেছে জি কে বিল্ডার্সের অধীনে থাকা নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলোতে। নিয়মিত তদারকিও করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
ঠিকাদার জিকে শামীম সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেন শামীম আখতার। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দুর্নীতিবাজ কিছু প্রকৌশলী এবং অসৎ ঠিকাদাররা মিলে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে।
অনুসন্ধানে জানা যায় জিকে শামীম সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী ঠিকাদাররা কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা তাদের বিপুল পরিমান কালো টাকা দিয়ে নানারকম ভূয়া খবর প্রচার করছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতার বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নিজস্ব ৩৪ প্রকল্পগুলোর অধিকাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকীগুলোর কাজও দ্রুত শেষ হওয়ার পথে। সেই সাথে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের কাজ। ভাবমুর্তি পুনরুদ্ধারের শুরুতেই বেশকিছু বিষয় নিয়মের আওতায় আনার কথা জানালেন এই কর্মকর্তা।
প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার এফটি টীমকে বলেন, 'যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আধুনিক টেকনলজি ব্যবহার, কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ, কার্যকর মনিটরিং এর মাধ্যমে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে।'
প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘আগে যাই হোক, বর্তমানে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কাজের ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। আগের সেই অবস্থা এখন আর নেই। প্রকল্পের টেন্ডারে লয়েস্ট (সর্বনিম্নদরদাতা) হলেই সরকারি নিয়ম মেনে তাকে কাজ দেয়া হচ্ছে। পিপিআর মেনে এভাবে কাজ করে ভালোর দিকে যাচ্ছি। একই ঠিকাদার যাতে বারবার কাজ না পায় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। টেন্ডার ক্যাপাসিটি অনুযায়ী সফটওয়ার তৈরি বা ডাটাবেজের কাজ শেষ পর্যায়ে। এটা কার্যকর হবে খুব তাড়াতাড়ি'।
সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সরকারি দায়িত্ব সুষ্ঠভাবে করতে চাই। করতে হবে। পিপিআর ফলো করতে হবে। নিয়ম মেনে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মান ধরে কাজ করতে হবে।’
এভাবে মোহাম্মদ শামীম আখতার দীর্ঘ কর্মজীবনে সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে সরকারি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে চাকরি ক্ষেত্রে অনেক সুনাম অর্জন করেন।
তিনি জানিয়েছেন তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সকল উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এবং যতই বাঁধা ও ষড়যন্ত্র হোক তিনি দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাবেন।
গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর পদে আসার আগে মোহাম্মদ শামীম আখতার ছিলেন হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) মহাপরিচালকের দায়িত্বে। মোহাম্মদ শামীম আখতার গণপূর্তের শীর্ষ পদে যোগ দেন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে।
মোহাম্মদ শামীম আখতার রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে ১৯৮২ সালে এসএসসি এবং ১৯৮৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৯১ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল) ডিগ্রি লাভ করেন।
পরবর্তিতে তিনি আইসিটি বিষয়ে ২০০২ সালে বুয়েট থেকে পোস্ট গ্রাজ্যুয়েট ডিপ্লোমা এবং ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স বিষয়ে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বিসিএস (পাবলিক ওয়ার্কস) ক্যাডারে ১৫তম (১৯৯৫) ব্যাচের একজন কর্মকর্তা।
তিনি ১৯৯৮ সালে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, ২০০৮ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী, ২০১৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও ২০১৮ সালে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি গত ২০১৮ সালের ৮ মে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং পরে পদোন্নতি পেয়ে মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার আগে।
২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে আছেন তিনি।
সরকারের নির্মাণ সংস্থার পাশাপাশি দেশের নির্মাণশিল্পের গতি, মান ও কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে থাকে গণপূর্ত অধিদপ্তর। গণপূর্ত অধিদপ্তর ২০০২ সাল থেকে ওয়েবসাইট পরিচালনা করে আসছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের সিটিজেন চার্টার ওয়েবসাইটে রাখা আছে। এটি স্টেকহোল্ডারদের উন্নততর সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81