02/25/2025
নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ী | Published: 2023-05-01 09:51:03
গ্রীষ্মকাল বাবুই পাখিদের প্রজনন ঋতু।এই সময় এরা বাসা বাধেঁ। সাধারণত মে থেকে আগস্ট বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। একটি পুরুষ পাখির একাধিক বাসা ও পরিবার থাকতে পারে। বাবুই পাখি দুই থেকে চারটি ডিম দেয়। স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। তিন সপ্তাহ পর বাচ্চা উড়ে যায়। এরা মূলত বীজভোজী পাখি। তাই এদের ঠোঁটের আকৃতি সহজে বীজ ভক্ষণের উপযোগী চোঙাকার। আর ঠোঁটের গোড়ার দিকটা মোটা। এরা সাধারণত খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে।
বাসা বানাবার জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয় ঘাসের আস্তরণ সারায়। যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে গোল অবয়ব মসৃণ করে। শুরুতে দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকে। পরে একদিক বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা হয়। অন্যদিকটি লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ হয়। কথিত আছে: রাতে বাসায় আলো জ্বালার জন্য বাবুই জোনাকী ধরে এনে গোঁজে।
বাবুই হাসিয়া কহে সন্দেহ কি তাই/ কষ্ট পাই তবু থাকি নিজেরই বাসায়। কবি রজনীকান্ত সেনের এ কবিতাটি আজো মানুষের মুখে। অথচ বাবুই পাখির অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগাত এবং স্বাবলম্বী হতে উৎসাহ যোগাত, কিন্তু কালের বিবর্তনে ও পরিবেশে বিপর্যয়ের কারণে আজ এ পাখিটি আমরা হারাতে বসেছি। সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষনীয় তেমন মজবুত। এরা বিভিন্ন গাছে বাসা বাঁধলেও তালগাছেই বাসা বাঁধে বেশি। অথচ সেই তালগাছও এখন বিপন্ন প্রায়।
বাবুই পাখির বুননে সত্যি জাদু আছে। যে কেহ বাবুই পাখির বাসা বুনন দেখে মুহিত হয়ে যান। এছাড়া এ পাখি শিল্পের নির্দশনও বটে। একে দেখে আমাদেরও শিক্ষার অনেক কিছু আছে। ফসলের জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ, যানবাহনের শব্দ, বিল এলাকায় মৎস্য চাষ, তালগাছ না থাকা পাখিদের স্বাভাবিক বিচরণ ক্ষেত্র কমে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির কারিগর বলে খ্যাত বাবুই পাখি। গ্রাম বাংলায় এখন আর আগের মতো বাবুই পাখির সেই শৈল্পিক বাসা চোখে পড়ে না।
১৫-২০ বছর আগে গ্রামগঞ্জের তাল, নারিকেল, খেজুর ও সুপারি গাছে প্রচুর বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। বাবুই পাখির এসব বাসা শুধুমাত্র শৈল্পিক নির্দশনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাকও জোগাত। বাবুই পাখির বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত।প্রবল ঝড়বাতাসেও টিকে থাকে তাদের বাসা। খড়ের, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ঘাস, আখের পাতা ও কাঁশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু নারিকেল, সুপারি ও তালগাছে চমৎকার আকৃতির বাসা তৈরি করত বাবুই পাখিরা।
গ্রামের মাঠের ধারে, পুকুর পাড়ে কিংবা নদীর তীরে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে শৈল্পিক বাবুই পাখিও। এখন এসব যেন বইয়ের ছড়া আর দাদুর কাছে শোনা গল্প।
অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা এবং বড় বড় তাল, খেঁজুর, নারিকেল গাছ না থাকার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির কারিগর বাবুই পাখি। তাই বাবুই পাখি ও এর শৈল্পিক নিদর্শন রক্ষা করার জন্যে সঠিক সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন করা প্রয়োজন।
প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র রক্ষায় পাখি হত্যা বন্ধ ও পাখির বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভয় আশ্রম গড়ে তোলাসহ জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের প্রচলিত আইন প্রয়োগ কঠোর হওয়া
জরুরী।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81