02/25/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2023-06-05 08:33:36
যে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের বিচার হয় না তা হলো বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
নিয়োগ, বদলী-পদোন্নতি, টেন্ডার, ইজারা, অডিট, ড্রেজিং, কেনাকাটা, মেরামত, নদী খনন, নদীর সীমানা প্রাচীর নির্মানসহ এমন কোন জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর অনিয়ম হয়নি। বিশেষ করে কর্মকর্তা ও সিবিএ নেতাদের দুটি আলাদা সিন্ডিকেট পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ লুটপাট করে খাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। এই সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে অনেক সময় সরকারও অসহায় হয়ে পড়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে।
বিআইডব্লিউটিএ'র চেয়ারম্যান পদে সাধারণত নৌ বাহিনীর চৌকস কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। এর বাহিরে অধিকাংশ কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দিয়ে থাকে। নৌবাহিনীর একজন চৌকস কর্মকর্তার পক্ষে এত বড় একটি প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম একা একা তদারকি করা সম্ভবপর নয়। ইতিপূর্বে একজন দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তাও ঐ দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে কাজ করতে যেয়ে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিদায় নিতে হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ'র প্রতিটি কার্যালয় যেন দুর্নীতির আখড়া। এখানে প্রতিটি দুর্নীতি হয় কোটি কোটি টাকার অংকে। নিয়োগ, বদলী-পদোন্নতি, টেন্ডার, ইজারা, অডিট, ড্রেজিং, কেনাকাটা, মেরামত, নদী খনন, নদীর সীমানা প্রাচীর নির্মান; কোথায় নেই দুর্নীতি!
দুর্নীতি দমন কমিশনের এক অনুসন্ধানে বিআইডব্লিউটিএতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমান পেয়েছিলো। ফলশ্রুতিতে দুদক কর্তৃক এদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনে এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় সেই মামলা ধামাচাপা পড়ে আছে। 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে' ইতিপূর্বে এনিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধানী একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
বিআইডব্লিউটিএতে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে'র একটি চৌকস টীম প্রায় ছয় মাস যাবৎ ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের করে এনেছে। যা প্রকাশিত হলে বিআইডব্লিউটিএ'র অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যাবে।
বিআইডব্লিউটিএ'র চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের এক সমন্বয়ক যার মূল কাজ হচ্ছে ফাইল উত্থাপন এবং ডেলিভারি দেয়া; তিনিই রাজধানী ঢাকার পাশে ডেমরা অঞ্চলে গড়ে তুলেছেন আনুমানিক আট কোটি টাকা মূল্যের ছয় তলা একটি বাড়ি। কিনেছেন বিলাসবহুল একটি গাড়ী। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএতে চাকুরী।
বিআইডব্লিউটিএতে এক একজন সিবিএ নেতা গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট, জমি, বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসা বানিজ্য। প্রকৌশল বিভাগের প্রত্যেক কর্মকর্তার রয়েছে বিপুল অর্থ সম্পদ। নদী খনন না করেই বিল তুলে নিয়ে এক একজন কর্মকর্তা দেশে ও বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। এরকম প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে' এবং জাতীয় পত্রিকা 'গোয়েন্দা ডায়েরি'র হাতে এসেছে।
নিয়োগের শর্ত ভংগ করে অবৈধভাবে বয়স না থাকা সত্বেও একজন কর্মচারী কিভাবে নিয়োগ পেলো বিআইডব্লিউটিএতে; তার ব্যাখ্যা খোদ পরিচালক (প্রশাসন) এর ও জানা নেই। গভীর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে একজন সিবিএ নেতার নিকটাত্মীয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের তথ্য যা আজকের এই প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হবে।
কেস স্টাডি
বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত; নভেম্বর ৮, ১৯৯০ সালের ৮৩৬৮ নং পাতার ১৮ নং তালিকায় বিআইডব্লিউটিএ'র গেজেটে প্রকাশিত রয়েছে রেকর্ড কীপার, দপ্তরী, কুটনবীশ, ডুপ্লেকেটিং মেশিন চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স ২৭ হইতে ৩২ বছর হতে হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে হেড গার্ড এবং সমমানের পদের কর্মচারীদের মধ্য হইতে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরন করিতে হইবে মর্মে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।
আবেদন
০৯-০৮-২০০৪ ইং তারিখে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম; পিতা- মোঃ হামিদ খান, মাতা- বেগম রোকেয়া, বর্তমান ঠিকানাঃ ১৬৪, মাদারটেক নতুন পাড়া, সবুজবাগ, ঢাকা এবং স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম- চরদুলাই, ডাকঘর- দুলাই, থানা- সূজানগর, জেলাঃ পাবনা; কুটনবীশ পদের জন্য বিআইডব্লিউটিএতে আবেদন করেন।
উক্ত আবেদনে আবেদনকারী নিজের জন্ম তারিখ ০৭/১১/১৯৭১ উল্লেখ করে এবং আবেদনের দিন তার বয়স তেত্রিশ বছর পাচ মাস চব্বিশ দিন উল্লেখ করে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত ও বিআইডব্লিউটিএ'র চাকুরীর শর্ত অনুযায়ী চাকুরীতে আবেদনের বয়স না থাকা সত্বেও মোঃ জাহাঙ্গীর আলম কিভাবে নিয়োগ পেলো তা এখন কোটি টাকা মূল্যের একটি প্রশ্ন। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ'র পরিচালক (প্রশাসন) এফটি টীমকে বলেন যে 'আমি ঐ সময়ে দায়িত্বে ছিলাম না'।
নিয়োগ
সংস্থাপন মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব জুলফা খানম সাক্ষরিত ৩১/১০/২০০৪ ইং তারিখের দপ্তরাদেশ নং ৮৩৫/২০০৪ এ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম; পিতাঃ- মোঃ হামিদ খান কে ১৫০০-২৪-২০০৪ জাতীয় স্কেলে (১৯৯৭) মাসিক ১৫০০ টাকা মূল বেতন এবং অন্যান্য স্বীকার্য ভাতাদিসহ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের কুটনবীশ পদে নিয়োগের আদেশ প্রদান করেন।
বয়স না থাকা সত্বেও সরকারি চাকুরী আইনসিদ্ধ কিনা এ বিষয়ে হিউম্যানিস্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ও আন্তর্জাতিক গবেষক সেলিম রেজাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "এটা যদি হয়ে থাকে তাহলে তা সরাসরি দুর্নীতি বলে গন্য হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠনে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হলে তার সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদেরও দুদক আইনে বিচার হওয়া উচিৎ।"
এই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান এফটি টীমকে বলেন, "অভিযোগ পেলে আমরা তা অবশ্যই খতিয়ে দেখবো। যে বা যারাই দুর্নীতি করুক না কেন এবং যেখানেই দুর্নীতি সংঘটিত হোক না কেন; দুদক জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করবে। এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।"
উল্লেখ্য যে, আবেদনকারী বিআইডব্লিউটিএ'র একজন সিবিএ নেতার নিকটাত্মীয়। এই সিবিএ নেতার অন্তত ডজনখানেক আত্মীয়সজন বিআইডব্লিউটিএতে কর্মরত রয়েছেন। এদের প্রত্যেকের চাকুরীর ক্ষেত্রেই সিবিএ নেতা প্রভাব বিস্তার করেছিলেন বলে একাধিক সূত্র এফটি টীমকে নিশ্চিত করেছেন। উক্ত সিবিএ নেতার নির্দেশেই বিআইডব্লিউটিএ পরিচালিত হয় বলে গুঞ্জন রয়েছে। এই সিবিএ নেতার রয়েছে সম্পদের পাহাড় যা আগামী পর্বে প্রকাশিত হবে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81