02/26/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2023-10-03 09:54:46
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের কাজ প্রায় শেষ। চলছে উদ্বোধনের প্রস্তুতি। সব ঠিকঠাক থাকলে আসছে ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেছেন, 'প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমাদের অবকাঠামো প্রস্তুত, আমাদের ইকুইপমেন্টগুলো বসানো হচ্ছে। এখন মূলত উদ্বোধনের ক্ষণ গণনা চলছে।'
এদিকে এই টার্মিনালের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে মেট্রোরেল লাইন-১। যা মূলত পাতালরেল নামে পরিচিতি পেতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্মিলিত থার্ড টার্মিনালকে পূর্ণতা দিতে পাতালরেলের কাজ দ্রুত করার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। থার্ড টার্মিনাল ব্যবহারকারী যাত্রীরা পাতালরেলের সুবিধা নিতে পারবেন সরাসরি। যার মাধ্যমে টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে শহরে ঢুকতে পারবেন। আবার থার্ড টার্মিনাল থেকে ফ্লাই করতে পারবেন। ফলে যোগাযোগব্যবস্থা হবে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যের। সময়েরও সাশ্রয় হবে।
এদিকে মেট্রোরেল লাইন-১ এর ডিপো উন্নয়নের কাজও শুরু হয়েছে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিটিএমসিএল) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডিটিএমসিএল সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেল লাইন-১ এর আওতায় দুটো রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি লাইন হযরত শাহজাহাল (রহ.) বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার অংশ। এটি মাটির নিচ দিয়ে যাবে। আর নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার রেললাইন উড়ালপথে যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।
দেশের প্রথম পাতালরেলের ডিপো নির্মাণ করা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চিতলগঞ্জে। লাইন-৬ বাস্তবায়নের সুফল ইতোমধ্যে ঢাকাবাসী পেতে শুরু করেছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল নিয়মিতভাবে যাতায়াত করছে। আশা করা হচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হবে মেট্রোরেল লাইন-৬। একইভাবে লাইন-১ বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
তবে লাইন-৬ বাস্তবায়নের বেলায় ঢাকাবাসীকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না পাতালরেল নির্মাণের ক্ষেত্রে। কেননা পাতাল রেলের লাইন স্থাপনের সব ধরনের কাজই সম্পন্ন হবে মাটির নিচে। ফলে মাটির ওপরে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। এ ছাড়া পৃথিবীর যেসব শহরের মেট্রোরেল সফল ও জনপ্রিয় তার বেশিরভাগই মাটির নিচে। সেগুলো সাবওয়ে নামে পরিচিত।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। যা থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত হবে। এর মাধ্যমে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক ধরনের যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন।
ডিটিএমসিএলের ওয়েরসাইটে থাকা লাইন-১ এর অগ্রগতি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের দুটো লাইন থাকবে। হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর থেকে মাটির নিচ দিয়ে কমলাপুর পর্যন্ত এই পাতাল পথে রেলের স্টেশন থাকবে ১২টি।
স্টেশনগুলোর নির্ধারিত জায়গার মধ্যে রয়েছে- কমলাপুর, রাজারবাগ, মালিবাগ, রামপুরা, আফতাবনগর, বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নতুন বাজার, নর্দা, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ এবং বিমানবন্দর। আর এমআরটি লাইন-১ এর অপর অংশ নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত উড়ালপথে। স্টেশন থাকবে ৭টি। সেগুলোর নির্ধারিত জায়গা হলো- জোয়ার সাহারা, বোয়ালিয়া, মস্তুল, শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পূর্বাচল সেন্ট্রাল, পূর্বাচল পূর্ব এবং পূর্বাচল টার্মিনাল।
এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বাকি ১২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা খরচ করবে বাংলাদেশ সরকার। ২০২৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এমআরটি লাইন-১ চালু হলে এই রুটে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগবে ২৪ দশমিক ৩০ মিনিট। আর নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল যেতে সময় লাগবে ২০ দশমিক ৩৫ মিনিট। এমআরটি লাইন-১ এর প্রতিটি পাতাল স্টেশন হবে তিন তলা। টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য সুবিধা থাকবে প্রথম বেজমেন্টে। প্ল্যাটফরম থাকবে দ্বিতীয় বেজমেন্টে। আর উড়াল স্টেশনের টিকিট কাউন্টার এবং প্ল্যাটফরম থাকবে তিন তলায়। যাত্রীদের চলাচলের জন্য উড়াল ও পাতাল-দুই পথের স্টেশনেই থাকবে লিফট, সিঁড়ি ও এস্কেলেটর সুবিধা। স্টেশনগুলোয় পর্যাপ্ত বাতাস ও অক্সিজেনের প্রবাহ ঠিক রাখতে থাকবে অতিরিক্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা।
অন্যদিকে আগামী ৭ অক্টোবর আংশিকভাবে চালু হলেও যাত্রীরা টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবেন ২০২৪ সালের শেষের দিকে। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এ টার্মিনাল চালু হলে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এখানে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্যে আগামী অক্টোবরে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য মোট চেক-ইন কাউন্টার থাকবে (১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ) ১১৫টি। ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টারসহ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি কাউন্টার থাকবে। বর্তমান টার্মিনালে রয়েছে ৮টি লাগেজ বেল্ট। তৃতীয় টার্মিনালে আগমনী যাত্রীদের জন্য ১৬টি লাগেজ বেল্ট থাকবে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি আলাদা বেল্ট। ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বহুতল কার পার্কিং তৈরির কাজ চলমান। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। ধারণক্ষমতা প্রতি বছরে ১২ মিলিয়ন যাত্রী। টানেলসহ বহুতলবিশিষ্ট কার পার্কিং ৫৪ হাজার বর্গমিটার। ফায়ার ফাইটিং স্টেশন ইকুইপমেন্টসহ ৪ হাজার বর্গমিটার। আমদানি কার্গো টার্মিনাল ২৭ হাজার বর্গমিটার, রপ্তানি কার্গো টার্মিনাল ৩৬ হাজার বর্গমিটার এবং কানেকটিং ট্যাক্সিওয়ে ৬৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। দুটি র্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে ৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81