02/23/2025
বিশেষ প্রতিবেদক | Published: 2023-10-04 18:32:30
বর্তমান সরকারের মেয়াদে একেবারে শেষ সময়ে এসে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে পরস্পর বিরোধী অভিযোগ ও প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুপারিশ মালা নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। দীর্ঘদিন যাবৎ ঠিকাদারদের একটি সিন্ডিকেট ও মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে দাবিয়ে বেড়ানো একটি চক্র বাহির থেকে পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলছে। চক্রটি তাদের দীর্ঘদিনের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ ও টাকা পয়সাকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঘৃন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সরকারের শেষ মেয়াদে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটা সরকারের নিয়মিত একটি রুটিন ওয়ার্ক। দীর্ঘদিন মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে চলা গ্রুপটি তাদের অবৈধ অর্থ দেদার্সে ঢালছে সুবিধাবাদী একটি বিশেষ গোষ্ঠী ও তাদের মুখচেনা কিছু হলুদ সাংবাদিকদের মাঝে। চক্রটির মূল এজেন্ডা হলো কিছু অখ্যাত গণমাধ্যম কর্মীদের দিয়ে ক্যারিয়ার সম্পন্ন কর্মকর্তাদের নামে কুৎচার রটিয়ে স্বার্থানেষী সুবিধাভোগী একটি রাজনৈতিক চক্রকে ব্যবহার করে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ভিতরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে ঘোলা পানিতে মাছ স্বীকার করা ও নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করা। ইতোপূর্বেও এ চক্রটি নামে বেনামে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন দপ্তরে ক্যারিয়ার সম্পন্ন কর্মকর্তাদের নামে অভিযোগ দাখিল করে অধিদপ্তরের স্বাভাবিক কর্মকান্ডকে ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে।
দ্য ফিন্যান্স টুডে’র একটি অনুসন্ধানী টিম দীর্ঘদিন যাবত অধিদপ্তরের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি জামাতের আশীর্বাদপুষ্ট এ চক্রটির কর্মকান্ডকে চিহ্নিত করে আসছে। স্বীকৃতভাবে এ চক্রটি বর্তমান সরকার বিরোধী হয়েও হাইব্রিড নেতাসেজে সরকারের ভিতর ঢুকে পড়ে মন্ত্রীর আশেপাশে অবস্থান করতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের একেবারে শেষের দিকে এসে যখন এরা বুঝতে পারছে পরবর্তীতে যদি সরকারের ধারাবাহিকতা থেকে যায় তাহলে হাইব্রিড দের অবস্থান খুবই নাজুক হবে ঠিক তখনই এরা এক শ্রেণির ক্ষমতাসীন হাইব্রিড অসাধু চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে এক দিকে নিজেদের পজিশন গুলো পাকাপোক্ত করতে চায় অপরদিকে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পে তাদের অনুসারী ঠিকাদারদের মাঝে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগে মিশনে নেমেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১৯ সালে তৎকালীন সচিব মোহাম্মদ দেলোয়ার বখ্ত স্বাক্ষরিত এক পত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক গঠিত দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে - গণপূর্ত অধিদপ্তর সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিম, এর অনুসন্ধানকালে একটি সুপারিশমালা বাস্তবায়নে মন্ত্রীপরিষদ সচিব ,মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করা হয়। যার স্মারক নং- দুদক/বি.অনু.ও তদন্ত-২/প্রাতিঃ/০১-২০১৭/অংশ-১৩। উক্ত সুপারিশমালায় দুর্নীতির কয়েকটি উৎসকে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
(‘ক’) দুর্নীতির উৎস
১/ টেন্ডার প্রক্তিয়ায় বিভিন্ন স্তরের দুর্নীতি (ক) যথাযথ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করা, (খ) অপছন্দের ঠিকাদারকে নন রেসপন্সিভ করা, (গ) স্বাভাবিক মূল্যে প্রাক্কালন তৈরি, (ঘ) ছোট ছোট প্যাকেজে প্রকল্প প্রণয়ন, (ঙ) টেন্ডারের শর্তানুসারে কাজ বাস্তবায়ন না করা।
২/ নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার,
৩/ প্রকল্প প্রণয়ন, তদারকি, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কাজে ধীরগতি।
৪/ প্রয়োজনীয় তুলনায় বরাদ্দ কম।
৫/ অনাবশ্যক প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি।
৬/ স্থাপত্য ও কাঠামোগত নকশার চুড়ান্ত করনে বিলম্ব।
৭/ প্রত্যাশী সংস্থার প্রয়োজন মতো জরুরী ভিত্তিতে কার্যসম্পাদন না করা।
৮/ সেবা প্রদানের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অসহযোগিতা।
৯/ সময় মতো ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ না করা।
১০/ বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও ঠিকাদারদের আংশিক বিল পরিশোধ করা।
(‘খ’) দুর্নীতি প্রতিরোধে ২০টি সুপারিশমালা প্রেরন করা হয়েছিল- যা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
দ্য ফিন্যান্স টুডে’র অনুসন্ধানী টিম দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক প্রেরিত দুর্নীতির উৎস সমূহ চিহ্নিতকরন ও সুপারিশমালা বাস্তবায়নে কতটুকু যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় যে সুপারিশমালা শুধু কাগজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাস্তবিক অর্থে এর প্রয়োগ হয়নি বললেই চলে। উপরোন্ত একটি বিশেষ সুবিধাবাদী গোষ্ঠী প্রকৌশলী মধ্যে একটি অলিখিত সমন্বয়কার পর্যায়ক্রমে অধিদপ্তরের কাজকর্মকেই বিঘ্নিত করেই ক্ষ্রান্ত হয়নি বরঞ্চ শীর্ষ কর্মকর্তাদের চরিত্র হরনেও এরা সরব ছিল। যা এখনো চলমান রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদন যদি মাঠ পর্যায়ে পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতো তাহলে আজ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে অহিনুকুল সম্পর্ক তৈরি হওয়ার মতো ৩য় একটি পক্ষ তৈরি হতে পারতো না। সরকারি গৃহীত উন্নয়ন কর্মসূচি ও পরিকল্পিত নগরায়ন ও সরকারি অবকাঠামো বিনির্মানে গণপূর্ত অধিদপ্তর নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের বিশেষ সিন্ডিকেট ‘’লাভের গুড় পিপড়ায় খায়’’- প্রবাদের সাথে মিল রেখে নিজেদের আখের গুছাতে গিয়ে দেশের প্রয়োজনীয় ক্ষতি করে যাচ্ছে। উক্ত সিন্ডিকেটটি বিশেষ একটি অঞ্চলের নামিদামি কিছু ব্যক্তিদের নাম ভাঙ্গিয়ে ফায়দা লুটে নিচ্ছে। মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তর যদি এখনই উক্ত চক্রের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মতো সৃজনশীল একটি প্রতিষ্ঠানের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন ও ব্যাহত হবে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81