02/26/2025
নিজস্ব প্রতিবেদক | Published: 2024-01-29 03:00:57
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেছেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। পাশাপাশি কাজী মামুনুর রশীদকে পার্টি মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা করেন।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে গুলশানে নিজের বাসায় দলের ‘ক্ষুব্ধ ও বঞ্চিত’ নেতা-কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে এই ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, “পার্টির ভালোর জন্য, পার্টির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আমি নিজে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলাম এবং পরবর্তী কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত মামুনুর রশীদকে মহাসচিবের দায়িত্ব প্রদান করলাম। তিনি সার্বিকভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।”
পার্টির অন্যান্য পদে যারা আছেন, তাদের বহাল রেখে পার্টির যেসব নেতাকে জি এম কাদেরের সিদ্ধান্তে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে কিংবা বহিষ্কার করা হয়েছে এবং যাদের পার্টির কমিটির বাহিরে রাখা হয়েছিল, তাদের আগের পদে ‘পুনর্বহালের’ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে পার্টির জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করা হবে। উপস্থিত নেতৃবৃন্দ এ সময় তুমুল করতালি দিয়ে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়।
তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য নেতৃত্ব ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। জাতীয় পার্টিতে এখন ক্রান্তিকাল বিরাজ করছে। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও কো- চেয়ারম্যান হওয়ায় আমি বেগম রওশন এরশাদ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
রওশন বলেন, অব্যাহতি আদেশ বাতিল করে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা (জিএম কাদের-চুন্নু) তা আমলে নেননি। এরই ধারাবাহিকতা গত ২৫ জানুয়ারি জাপার তৃণমূলের ৬৬৮ নেতাকর্মী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে সংকট সৃষ্টি করেছেন।
তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের অনুরোধে পার্টির গঠণতন্ত্রের ২০/১ ধারায় ক্ষমতাবলে আমি পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিলাম।
সভায় রওশন এরশাদ বলেন, “জাতীয় নিবার্চনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৭টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রদান করে ২৬টি আসনে সমঝোতা করা এবং আসন সমঝোতার পরেও জনসম্মুখে অস্বীকার করে দেশবাসী এবং পার্টির মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে পার্টিকে মারত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।"
তিনি বলেন, ২৬টি আসনে সমঝোতার পর বাকি আসনের প্রার্থীদের রাজনৈতিকভাবে জনগণের বিরূপ সমলোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব তাদের কোনো খোঁজ খবর না নেওয়ার ফলে ভোটের মাঠে পার্টি চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
“নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়ায় পার্টির নেতা-কর্মীরা তার প্রতিবাদ করার অধিকার রাখেন। এই প্রতিবাদী নেতা কর্মীদের সাথে কোনোরূপ আলোচনা কিংবা সান্ত্বনা না করে ক্রমগত বহিষ্কার ও অব্যহতির মাধ্যমে পার্টির অস্তিত্ব নষ্ট করা হয়েছে।"
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরুর দুদিন আগে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে এই নাটকীয়তার জন্ম দিলেন রওশন।
৭ জানুয়ারির ওই নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে নতুন করে বিভক্তি দেখা দেয়। দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে মতবিরোধে গত সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন নিজে এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। তার অনুসারীদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি।
নির্বাচনের পর পার্টি থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কয়েকজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়, যারা রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত।
এরপর গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ এনে ৬৭১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
রওশনের কাছ থেকে মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়া কাজী মামুনুর রশিদ মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “পরবর্তী কাউন্সিল হওয়া পর্যন্ত আমি মহাসচিব হিসেবে থাকব। আমি চেষ্টা করব সংগঠনের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে। ফেব্রুয়ারিতে অথবা মার্চের প্রথম সপ্তাহে কাউন্সিল হবে।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুল ইসলাম সেন্টু, যাকে সম্প্রতি অব্যহতি দেওয়া হয়েছিল। এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদও উপস্থিত ছিলেন মত বিনিময়ে।
এছাড়া পার্টির অ্যাবহতিপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, অব্যাহতিপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান জাঙ্গীর আলম পাঠান, ইয়াহিয়া চৌধুরী, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলন, অধ্যাপক দেলায়ার হোসেন খান, রফিুকুল হক হাফিজকে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81