02/26/2025
বরকত উল্লাহ মারুফ (আবুধাবী থেকে) | Published: 2024-02-26 18:13:06
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় এবারের আলোচিত চুক্তিগুলোর একটি হচ্ছে ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (আইএফডি) বা উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ সহায়তা।
উন্নয়নশীল কিছু সদস্য দেশ এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে এই বিষয়ে বেশিরভাগ সদস্য দেশের ঐকমত্য না হলেও এর নেতৃত্ব দেয়া কয়েকটি দেশ এটিকে সফল চুক্তি বলে ইতিমধ্যে উদযাপন করছে এবং এবারের মূল আলোচ্যসূচিতে না থাকলেও একে নতুন করে একটি বহুপাক্ষিক চুক্তি আকারে হাজির করার চেষ্টা করছে।
চীনের সমর্থনে দক্ষিণ কোরিয়া এবং চিলি এই পরিকল্পনা ঘোষণা করলেও ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বে বেশকিছু উন্নয়নশীল দেশ এর বিরোধিতা করেছে এবং এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বিনিয়োগ সহায়তা বিষয়ে একটি চুক্তির প্রচেষ্টাকে ১৯৯৬ সাল থেকেই সদস্য দেশগুলো প্রত্যাখ্যান করে আসছে। ২০০৪ সালে একটি সিদ্ধান্ত হয়, দোহা রাউন্ড সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগ নিয়ে নতুন কোনো আলোচনা হবে না। ২০১৫ সালে নাইরোবিতে সদস্য দেশগুলো একমত হয়, সব সদস্য রাজি হলে এ ধরনের নতুন কোনো ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ত্রয়োদশ মন্ত্রী সম্মেলনে অংশগ্রহনরত বেসরকারি প্রতিনিধিরা বিনিয়োগ সহায়তা চুক্তির বিরোধিতা করেছেন। তারা বলেছেন, বিনিয়োগ কার উন্নয়ন করছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইজ নট ফর সেল নামের একটি বৈশ্বিক নাগরিক সমাজের নেটওয়ার্কের প্রধান সমন্বয়ক ডেবোরাহ জেমস বলেছেন, “বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এ ধরনের দেনদরবার করার বৈধতাই নেই। যেসব দেশ এই মন্ত্রী সম্মেলনে এ আলোচনা তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মৌলিক বিধানই ভঙ্গ করছে।“
ডেবোরাহ জেমস বলেন, মূলত চীনের নেতৃত্বে অনেক দেশের উপর লজ্জাজনকভাবে চাপ প্রয়োগ করার নানা লোমহর্ষক গল্প আমরা শুনতে পাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রেই এসব বলপূর্বক আলোচনায় সেসব দেশের কোনো বিশেষজ্ঞকে রাখা হয়নি, যারা দেশের স্বার্থে বিশ্লেষণমূলক ইতিবাচক পরামর্শ দিতে পারত।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক একজন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান হিসেবে তার বৈধ ভূমিকা অতিক্রম করে ফেলেছেন। এ ধরনের গণপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের উচিত নিরপেক্ষ ভূমিকা অবলম্বন করা।
তার ভূমিকা সম্পর্কে নিউজিল্যান্ডের এমিরিটাস অধ্যাপক জেন কেলসি বলেন, মহাপরিচালক এনগোজি তার ক্ষমতার বাজে ধরনের অপব্যবহার করেছেন। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা এই চুক্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে যখন বলে যে এক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিজস্ব নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি, তখন মহাপরিচালক এনগোজি সর্বসম্মুখে দেশ দুটিকে আক্রমণ করে বলেন, তারা নিজেদের একটা বড় সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে।
বেসরকারি প্রতিনিধি দক্ষিণ আফ্রিকার কোসাটু’র প্রতিনিধি সাইমন এপেল বলেন, বিনিয়োগ সহায়তাকে উন্নয়নের জন্য বলা হচ্ছে, অথচ দারিদ্র, অবকাঠামোর অভাব, দূরত্ব ও ভৌগলিক সমস্যা থাকা উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এসব বিনিয়োগকারীদের যাবার কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। তারা যায় শুধুমাত্র যেখানে অতি মুনাফা ও প্রাকৃতিক সম্পদ লুন্ঠনের সুযোগ রয়েছে। এদের বিনিয়োগে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সহায়তা কিছুতেই “উন্নয়নের জন্য” হতে পারে না।
স্পেনের ট্রান্সন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের লুসিয়া বারসেনা বলেন, “বিনিয়োগ চুক্তির লম্বা ইতিহাসে এটি খুবই স্পষ্ট। উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর যা দরকার তা হলো, তাদের যেসব ক্ষেত্রে উন্নয়ন দরকার সেই কৌশলগত খাতগুলোতে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিনিয়োগের নিশ্চয়তা।“
ডেবোরাহ জেমস বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিজস্ব বিধান ভঙ্গ করে এ ধরনের দেনদরবার বন্ধ হওয়া উচিত। কারণ, এতে করে ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীন দেশগুলো তাদের সুবিধা অনুযায়ী বলপূর্বক চুক্তি সম্পন্ন করার পথ পেয়ে যাবে, যার দায়ভার বহন করতে হবে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে।
বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিনিধি, কোস্ট ফাউন্ডেশনের বরকত উল্লাহ মারুফ বলেন, বেসরকারি প্রতিনিধিরা গতকাল সম্মেলন কেন্দ্রে বিনিয়োগ সহায়তা যে জনগণের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে না, সে বিষয়ে একটি লিফলেট বিতরণ করতে গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা তা বাজেয়াপ্ত করে। বেসরকারি প্রতিনিধিদের অংশগ্রহনের সুযোগ দিয়ে তাদের কথা বলতে দেয়া গণতন্ত্রের পরিপন্থী।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81